সুরজিৎ দেব, ডায়মণ্ড হারবার: খরা কাটিয়ে ইলিশ (Hilsa) এল গঙ্গার মোহনায়। সেই ইলিশ জালবন্দি করে গভীর সমুদ্র থেকে মৎস্যজীবীদের ট্রলার ভিড়ল ঘাটে ঘাটে। গত দু’দিনে প্রায় ২৫০ টন ইলিশ ঢুকেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার (South 24 Parganas) ডায়মণ্ড হারবার, নামখানা, কাকদ্বীপ, কুলতলি, নৈনান, সাগর, রায়দিঘি, পাথরপ্রতিমা ও ফ্রেজারগঞ্জে।
আকৃতি ও বহরে খুব বেশি তৃপ্তিদায়ক না হলেও মরশুমের সর্বাধিক পরিমাণ ইলিশ উঠল মৎস্যজীবিদের জালে। সোম ও মঙ্গলবার দু’দিনে সমুদ্র থেকে ইলিশবোঝাই হয়ে ফিরেছে চারশোরও বেশি ট্রলার। এত ইলিশ চলতি মরশুমে আগে ধরা পড়েনি। এবার ইলিশপ্রেমীদের মুখে তাই বেশ খানিকটাই তৃপ্তির হাসি। তবে বেশিরভাগ ইলিশই ৫০০-৭০০ গ্রাম ওজনের। যদিও এক কেজি ওজনের গোলগাল ভাল সাইজের ইলিশও এদিন কিছু নজরে এসেছে পাইকারি বাজারে।
এফ বি রাধালক্ষ্মী ট্রলারের মাঝি শ্যামল দাস সদ্য ফিরেছেন সমুদ্র মোহনা থেকে ইলিশ শিকার করে। তিনি বলেন, “‘ঝাঁকের ইলিশ’ বলতে যা বলা হয় বিগত তিনবছর পর এই মরশুমে এবারই তা প্রথম এসেছে মোহনায়। সাম্প্রতিক প্রাকৃতিক দুর্যোগে যে সামুদ্রিক ঝোড়ো হাওয়া বয়ে গিয়েছে তাতে বেশ কয়েকটি ট্রলারডুবি ও মৎস্যজীবিদের জীবনহানির আশংকা থাকলেও আখেরে কিন্তু লাভই হয়েছে মৎস্যজীবিদের।”
এর কারণ হিসেবে তিনি জানান, ওই ঝোড়ো হাওয়ায় বাংলাদেশের দিকে নয়, সামুদ্রিক স্রোত বয়েছে ভারতের দিকেই। আর সেকারণেই দেখা মিলছে ‘ঝাঁকের ইলিশের’। সমুদ্রফেরত এফ বি ললিতা ট্রলারের মৎস্যজীবি ইন্দ্রজিৎ দাসের কথায়, “এবার অধিক বৃষ্টিতে গঙ্গা মোহনায় জলে লবণাক্ত ভাব অনেকটাই কেটে গিয়ে মিষ্টি জলের ভাগ বেশি হয়েছে। ফলে গঙ্গা মোহনায় ইলিশ খুঁজে পেয়েছে তার উপযুক্ত বিচরণক্ষেত্রও। আশা করা যায়, আরও ইলিশ উঠবে।”
মৎস্যজীবিদের মত আশাবাদী ওয়েস্টবেঙ্গল ইউনাইটেড ফিশারমেন অ্যাসোসিয়েশনের সহ সম্পাদক বিজন মাইতিও। তিনি বলেন, “বিগত তিনবছর ধরে সমুদ্রে ইলিশের খরা যেন আর কাটছিল না। খুবই দুরবস্থা ছিল মৎস্যজীবীদের। অর্থনৈতিকভাবে মারাত্মক দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন তাঁরা। এবার ইলিশের সেই খরা মনে হচ্ছে কেটেছে। পুজো (Durga Puja 2022) পর্যন্ত যদি এই অনুপাতে ইলিশ জালবন্দি হয়, তবে মৎস্যজীবীরা এবার অন্তত একটু স্বচ্ছল হতে পারেন। গত কয়েক বছরের ক্ষতি কিছুটা হলেও পূরণ হতে পারে তাঁদের।”
এদিকে মঙ্গলবার পাইকারি মাছের বাজারগুলিতে প্রচুর পরিমাণে ইলিশ ঢুকলেও চড়া দরেই বিকিয়েছে কিন্তু সেই ইলিশ। আড়তদাররা জানিয়েছেন, এদিন ৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ কেজিপ্রতি ৭০০ টাকা, ৬০০-৭০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ কেজি প্রতি ৯০০ টাকা ও এক কেজি ওজনের ইলিশের পাইকারি দর গিয়েছে প্রতি কেজি ১৫০০-১৬০০ টাকা পর্যন্ত। তাঁদের মতে, চাহিদার তুলনায় জোগান এখনও অনেক কম। যোগান আরও না বাড়লে ইলিশের পাইকারি বাজারদর আরও অগ্নিমূল্য হবে বলেই মনে করছেন পাইকারি মাছ ব্যবসায়ীরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.