সন্দীপ মজুমদার, উলুবেড়িয়া: কলেজ ছাত্রের উপস্থিত বুদ্ধির জেরে মৃত্যুর মুখ থেকে জীবন ফিরে পেলেন বৃদ্ধা। জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণায় আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছিলেন তিনি। ফিল্মি কায়দায় তাঁকে চলন্ত ট্রেনের সামনে থেকে উদ্ধার করে নজির গড়লেন ওই যুবক। এদিকে বৃদ্ধার জীবন বাঁচিয়ে ততক্ষণে হিরো বনে গিয়েছেন কলেজ ছাত্র বিক্রমাদিত্য। রবিবার চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে বাগনান স্টেশনে।
জানা গিয়েছে, বাগনান প্ল্যাটফর্মে বাবা অরূপ ঘোষের সঙ্গে খবরের কাগজ বিক্রি করছিলেন বছর বাইশের ওই যুবক। এই সময় তিনি লক্ষ্য করেন প্ল্যাটফর্মের একে বারে ধার ধরে ছুটে আসছেন এক বৃদ্ধা। ঠিক তখনই উলটোদিকে প্ল্যাটফর্মে ঢুকছে ডাউন ট্রেন। বৃদ্ধার গতিবিধি দেখে কেমন যেন সন্দেহ হয়েছিল তাঁর। একমুহূর্তে দেরি না করে কাগজ ফেলে বৃদ্ধার দিকে ছুটে যান তিনি। কোনওরকমে প্ল্যাটফর্মের কিনারা থেকে তাঁকে সরিয়ে আনতে আনতেই ট্রেন ঢুকে পড়ে। গোটা ঘটনায় বাকরুদ্ধ প্রত্যক্ষদর্শী রেলযাত্রীরা। ততক্ষণে যুবকের পায়ের কাছে কাঁদতে কাঁদতে বসে পড়েছেন বৃদ্ধা। তাঁকে উঠিয়ে জল দেওয়া হয়। চা-বিস্কুট খেয়ে শান্ত হলে জানা যায়, তাঁর নাম আঙুরবালা মাহাতা (৭৫)। তিনি স্থানীয় বাকসি গ্রামের বাসিন্দা। তাঁর অভিযোগ, ছেলে বউমার অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে বাড়ি ছেড়ে চলে এসেছেন তিনি। জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণা এসে যাওয়ায় আত্মহননের সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু জীবন ফিরে পেয়েও বাঁচতে চান না তিনি।
এরপরেই বৃদ্ধার ছেলে আনন্দ মাহাতাকে খবর পাঠানো হয়। পেশায় হকার আনন্দবাবু মাকে নিতে এলেও বাড়ি ফিরতে রাজি হননি আঙুরবালাদেবী। রাগে দুঃখে কানের, হাতের লোহার গহনাও ছুঁড়ে ফেলে দেন। তাঁর দাবি, বাড়ি ফিরলেই ফের অত্যাচার শুরু হবে। অভিযোগ, ছেলে মদ্যপ অবস্থায় তাঁকে মারে। মারধরের পাশাপাশি আধপেটা খেতে দেওয়া হয়। কখনও বা অভুক্ত অবস্থায় কেটে যায় দিন। এসব শুনে বাগনান থানার পুলিশ ছেলে আনন্দ মাহাতাকে সতর্ক করে দিয়েছে।
মায়ের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে আনন্দ মাহাতা জানান, তাঁর মা দীর্ঘদিন ধরে মানসিক অবসাদে ভুগছেন। এর আগেও বার পাঁচেক বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। দু’বার জলে ডুবে আত্মহত্যাও করতে চেয়েছিলেন। তখনও প্রতিবেশীরা তাঁকে জল থেকে উদ্ধার করেন। মাকে মারধর করার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তিনি। ঘটনাটি রেলের এলাকায় হলেও বাগনান থানার পুলিশ জানতে পেরে মানবিক কারণেই বৃদ্ধার ছেলেকে ডেকে কড়া ভাষায় সতর্ক করে দেয়। এরপর আঙুরবালাদেবীকে বাগনান গ্রামীণ হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়ে পরিজনদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এদিকে যাঁর তৎপরতায় ওই বৃদ্ধা প্রাণে রক্ষা পেলেন কুলগাছিয়ার বাসিন্দা সেই বিক্রমাদিত্যের প্রশংসায় পঞ্চমুখ রেলযাত্রীরা। তখন নির্বিকার ওই যুবকের সাফ দাবি, মানুষ হিসেবে এটা কর্তব্য বলেই মনে করেন তিনি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.