Advertisement
Advertisement
Islampur

জমি দখল থেকে পাচার, ইসলামপুরের তৃণমূল নেতার মৃত্যু ডেকে আনল ‘কুকীর্তি’?

জাল মদ তৈরির অভিযোগে জেলেও যেতে হয়েছে নিহত তৃণমূল নেতাকে।

How Islampur's TMC leader Bapi Roy turned puissant

ইসলামপুরের নিহত তৃণমূল নেতা বাপি রায়। ফাইল ছবি

Published by: Sayani Sen
  • Posted:July 14, 2024 8:38 pm
  • Updated:July 14, 2024 8:39 pm  

শংকরকুমার রায়, রায়গঞ্জ: অনেক অভিযোগই ছিল। বিহার সংলগ্ন শ্রীকৃষ্ণপুরে জাল মদ তৈরির অভিযোগে কারখানায় হানা দিয়ে বছরখানেক আগে তাঁকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। সিল করা হয় কারখানার গুদামঘর। যদিও কয়েক মাস আগে জামিনে জেল থেকে ছাড়া পেয়ে রাজনৈতিক প্রভাব কাজে লাগিয়ে রামগঞ্জে বেআইনিভাবে একের পর এক অন্যের জায়গা-জমি দখলে তাঁর দৌরাত্ম্যে সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছিল নিরীহ মানুষজনেরা। জমি কেনাবেচায় দালালিতে দ্রুত হাত পাকিয়ে সকলের চেনামুখে পরিণত হয়েছিলেন তিনি। এমনকি সীমান্তে পাচার কারবারের সঙ্গেও তাঁর নাম জড়িয়েছিল।

রামগঞ্জের শিবনগর কলোনির চল্লিশ ছুঁইছুঁই সেই বাপি রায় তথা ইসলামপুর পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূল সদস্যা লিপি রায়ের স্বামীকে লক্ষ্য করে শনিবার রাতে উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুরের শ্রীকৃষ্ণপুরের জাতীয় সড়কের ধারের একটি হোটেলে গুলি করে নৃশংসভাবে খুন করে আততায়ীরা। সেই সময় পালাতে গিয়ে রামগঞ্জ (২) পঞ্চায়েত প্রধান তৃণমূলের রিজওয়ানা খাতুনের স্বামী সাজ্জাদ হোসেনের পিঠে গুলি লাগে। প্রাণে বাঁচলেও গুলিবিদ্ধ গুরুতর জখম হয়ে বর্তমানে শিলিগুড়ির একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে চিকিৎসাধীন তিনি। রবিবার নিহত বাপি রায়ের স্ত্রী লিপি রায় ইসলামপুর থানায় খুনের অভিযোগ দায়ের করেন।

Advertisement

পাশাপাশি এদিন বিকালে ইসলামপুর মহকুমা হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্তের পর স্থানীয় মাদারিপুর এলাকার জাতীয় সড়কে মৃতদেহ রেখে খুনিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে অবরোধ বিক্ষোভে সরব হন নিহতের পরিজনেরা।

Islampur agitation
তৃণমূল নেতার খুনিদের গ্রেপ্তারির দাবিতে পথ অবরোধ

মৃতের এক আত্মীয়ের অভিযোগ,”বাপি খুনে তৃণমূলের একাংশ জড়িত আছে। অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার না করলে আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।” এদিন ঘটনাস্থল ছিল থমথমে। নিহতের গ্রামের অধিকাংশ বাড়ির হেঁশেলে জ্বলেনি উনুন। বন্ধ ছিল রান্না। আর ঘটনাস্থলে হোটেলের সামনে সশস্ত্র পুলিশ টহল দিচ্ছে। তবে ঘটনার পর থেকে দৃশ্যত তীব্র আতঙ্কে হোটেল মালিকের ভাই সঞ্জয় গুপ্তা।

[আরও পড়ুন: ১ বলে ১৩ রান! জিম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে নয়া বিশ্বরেকর্ড যশস্বীর]

তিনি বলেন,”দাদার হোটেলে রাতে কয়েকজন দুষ্কৃতী এসে একজনকে গুলি করে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছই। ২৩ বছর ধরে হোটেল চালাচ্ছি। বিভিন্ন ধরনের খরিদ্দাদের আসা যাওয়া আছে। কিন্তু এইরকম ঘটনা ইতিপূর্বে কোনদিন হয়নি।” এদিন সেই হোটেলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করেন তদন্তকারী পুলিশ আধিকারিকরা। প্রাথমিক তদন্তে অনুমান,দুষ্কৃতীরা আগে থেকে হয়ত বাপি রায়কে চিনত। তাই সরাসরি তাঁকে লক্ষ্য করে এলোপাথাড়ি গুলিতে ঝাঁঝরা করে দেয় সশস্ত্র দুষ্কৃতীরা।

তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দলের জেরেই নাকি বাপি রায়কে খুন হতে হয় বলে দলের একাংশ কর্মীর দাবি। যদিও সেই রাতে হোটেলে ঘটনার সময় প্রত্যক্ষদর্শী রামগঞ্জ (২) পঞ্চায়েতের উপপ্রধান তৃণমূলের তনিমা দাসের স্বামী চন্দন দাস বলেন,”২১ জুলাই সভার প্রস্তুতির মিটিং হচ্ছিল হোটেলের একটি ঘরে। সেখানে পঞ্চায়েতের কয়েকজন সদস্য সহ চারজন ঠিকাদার হাজির ছিলেন। হঠাৎ তিনজন ব্যক্তি সরাসরি এসে এলোপাথাড়ি গুলি চালায়। গুলি এসে বাপির গলায় ও বুকে লাগে। পালাতে গিয়ে সাজ্জাত হোসেনের পিঠে গুলি লাগে। তাঁকে কোনক্রমে গাড়িতে তুলে হাসপাতালে ভর্তি করি। বাপির খুনিদের পুলিশ এখনও গ্রেপ্তার করতে পারেনি।” জেলা পরিষদের সদস্য ফারহাদ বানুর স্বামী তৃণমূল নেতা জাভেদ আক্তার বলেন,”ভয়ঙ্কর অবস্থা। হোটেলের মধ্যে চা খেতে খেতে, মিটিং চলছিল। সেখানে কীভাবে দুষ্কৃতীরা ঢুকে সরাসরি খুন করল একজনকে। নিশ্চয় আগে থেকে পরিকল্পনা ছিল।”

তৃণমূলের জেলা সভাপতি কানাইয়ালাল আগরওয়াল বলেন,”দুষ্কৃতীদের দ্রুত চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করা হয়। তৃণমূল কর্মীরা খুন হয়ে যাবে,আর চুপ হয়ে থাকব। এটা চলবে না। সেইসঙ্গে বিভিন্ন মাদক পাচারকারীদের মূল মাথাদের গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশকে বলেছি।” যদিও তদন্তকারী পুলিশ আধিকারিকের সূত্রের দাবি, শনিবার রাত আটটা বারো মিনিট নাগাদ দশ থেকে বারোজনের দুষ্কৃতী দলটি গাড়ি থেকে নেমে হোটেলের অন্য প্রান্তে বসে থাকা ওই ব্যক্তিকে লক্ষ্য করেই হামলা চালায়। এদিন ইসলামপুরের পুলিশ সুপার জবি থমাস বলেন,”শুটআউটের ঘটনায় তদন্ত চলছে। আশা করা যায় দ্রুত আততায়ীদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে।”

[আরও পড়ুন: বলিউড গ্ল্যামারের হাতছানি! বিনা নিমন্ত্রণে আম্বানিদের বিয়েতে খেতে গিয়ে পুলিশের হাতে আটক ২]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement