সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, দুর্গাপুর: কোথাও টেনশন কাটাতে নিছকই আড্ডা, কোথাও বুকের ভার নামাতে ঘরেই থাকা৷ কারণ, সোমবার যে বড় পরীক্ষা৷ এতদিনের প্রস্তুতি কেমন হয়েছে, তা টের পাওয়া যাবে সোমবার৷ যাঁরা প্রথম এই পরীক্ষায় বসছেন তাঁদের তো ঘুম উড়েছে গত কয়েকদিন ধরেই৷
রাত পোহালেন নবম পঞ্চায়েত নির্বাচন৷ তার আগের দিন খোশমেজাজেই শাসকদলের একাধিকবার পরীক্ষায় বসা পরীক্ষার্থীরা৷ কিন্তু নতুনদের যেন একটু হলেও বুক ধড়ফড় করছে৷ দুর্গাপুর ফরিদপুর ব্লকে তৃণমূলের জেলা পরিষদের প্রার্থী ব্লক সভাপতি সুজিত মুখোপাধ্যায়৷ গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে না দাঁড়ালেও বহুদিনের রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে এলাকায় দলকে পরিষেবা দিয়ে চলেছেন৷ গত পঞ্চায়েতে দলের প্রার্থীদের জিতিয়ে এনেছেন৷ গত বিধানসভায় বিধায়কের অন্যতম সেনাপতি হিসেবে ব্লকে বিধায়ককে লিডও দিয়েছেন৷ পরীক্ষাতে না বসলেও সিলেবাস তাই তাঁর অজানা নয়৷
এবার সুজিতবাবুকেও বসতে হচ্ছে পরীক্ষায়৷ প্রচার পর্ব শেষের পর অন্য প্রার্থীরা কিছুটা হলেও একটু আরামের চেষ্টা করলেও তার আরামের জো নেই৷ রবিবার ব্লকের ১০৬ জন ও নিজের জেলা পরিষদ আসনের পঞ্চান্ন জন বুথ এজেন্টকে নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন৷ ভোটের রণকৌশল চূড়ান্ত করেছেন দিনভর৷ এ প্রসঙ্গে সুজিতবাবু বলেন,“প্রার্থী হওয়ার পাশাপাশি আমি দলের ব্লক সভাপতিও৷ তাই অন্যান্য প্রার্থীদেরও সুবিধা অসুবিধা দেখা আমার কাজ৷ এই কাজটাই মন দিয়ে করে ফেললাম৷”
কাঁকসা শাসকদলের কাছে বেশ অস্বস্তির জায়গা৷ এবারের পঞ্চায়েত ভোটে তাই অতিরিক্ত নজর দেওয়া হয়েছিল দলের তরফে৷ সেই কাঁকসার গোপালপুর অঞ্চলের পঞ্চায়েত সমিতি- ১১ নম্বরের প্রার্থী দলের পোড় খাওয়া নেতা দেবদাস বকসি৷ গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে জেলা পরিষদের প্রার্থী ছিলেন৷ তাই পরীক্ষায় আগেও বসেছেন৷ পড়াশোনার মধ্যেই ছিলেন৷ তাই ভোটের আগের দিন কোন টেনশন তো নেই, উলটে ভোট নির্ধারিত দিনের পর হওয়ায় একটু যেন মন ভেঙেছে৷ রবিবার দফায় দফায় কর্মী বৈঠকের মধ্যে দিয়েই সময় পার করলেন তিনি৷ দেবদাসবাবু বলেন,“ভোট আমার কাছে আর নতুন কী! দলের নীতি ঠিক করতে কর্মীদের সঙ্গে দলীয় কার্যালয়ে সময় কাটালাম৷”
কাঁকসারই দাপুটে বিরোধী নেত্রী নির্মলা কাউর ভামরা৷ গত কাঁকসা পঞ্চায়েতের সিপিএমের প্রাক্তন প্রধান৷ এলাকায় তার গ্রহণ যোগ্যতা বা জনপ্রিয়তা অপরিসীম৷ এবারও সিপিএম তাকে টিকিট দিতে এক মুহূর্তের জন্যেও ভাবেনি৷ সিপিএমের ভঙ্গুর চেহারার মধ্যেও নিজের ইমেজকে কাজে লাগিয়ে মানুষের সেবা করে গেছেন৷ ভোটের আগের দিন ঘরে না বসে কর্মীদের মনোবল বাড়াতে দলীয় কার্যালয়ে বসেছিলেন সারাদিন৷ কার্যালয়ে নির্মলাদি আছে দেখে ভিড় করেছেন সাধারণ মানুষও৷ ফলাফল ছেড়ে দিয়েছেন ‘উপরওয়ালার’ হাতে৷ নির্মলাদেবী বলেন,“শাসকদল ভোট করতে দেবে না৷ নিজেরাই ভোট দেবে৷ মানুষের রায়কে মান্যতা দেয় না৷ সন্ত্রাস সত্ত্বেও লড়াইয়ের ময়দান থেকে পালিয়ে যায়নি৷ ফলাফল যাই হোক মানুষের সেবা করেই যাব৷”
পাণ্ডবেশ্বরের নজরকাড়া প্রার্থী অনুভা চক্রবর্তী৷ জেলা পরিষদ-৩ নম্বরের তৃণমূল প্রার্থী৷ শাসকদলের ব্লক সভাপতি ও দাপুটে নেতা নরেণ চক্রবর্তীর স্ত্রী৷ তাই মানুষেরও নজর ওই দিকেই৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক হলেও ভোট পরীক্ষায় এই প্রথম৷ তাই স্বভাবতই একটু টেনশন হচ্ছে বৈইকি৷ তবে ‘দিদি’ ও স্বামীর সহচর্যে এই পরীক্ষায় পাশ করা শুধু সময়ের অপেক্ষা বলেই তার দাবি৷
রবিবার ভোটের আগের দিন পার্টি অফিসে কর্মীদের সঙ্গে আড্ডা দিতে দিতে বুথ স্লিপ তৈরি করেছেন৷ পাশাপাশি ঘরের কাজও সামলেছেন টেনশন ঢাকতে৷ অনুভাদেবী বলেন,“মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামেই ভোট বৈতরণী পার হয়ে যাবে৷ রাজ্যে যে উন্নয়ন হয়েছে তাতে ফলাফল আমার পক্ষেই যাবে৷’’ অনুভাদেবী জেতার কৃতিত্ব ‘দিদি’কে সিংহভাগ দিলেও বিদায়ী জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ ও ব্লক সভাপতি স্বামীর উপরও দশভাগ আস্থা দেখিয়েছেন৷
কাঁকসা জেলা পরিষদে বিজেপি প্রার্থী বিকাশ বিশ্বাসের যন্ত্রণা অন্য জায়গায়৷ দলের মান রাখতে ভয়কে জয় করে মনোনয়ন তোলেননি৷ কিন্তু, পেশায় সরকারি স্কুলের শিক্ষক তারপর থেকেই শাসকদলের নানান হুমকির শিকার হচ্ছেন বলে তার অভিযোগ৷ ভোটের আগের দিন প্রায় ভুলতে বসেছিলেন ভোট কবে৷ কোনভাবে ভোট মেটলেই তার উপর অত্যাচার শুরু হবে এই আশঙ্কায় ইতিমধ্যেই মহকুমাশাসকের দ্বারস্থ হয়েছেন তিনি৷ তিনি জানান,“কর্মীদের সঙ্গে সেই অর্থে বসে কোন রণকৌশল তো দুরে থাক ঘরেই ছিলাম এদিন৷ কয়েকজন কর্মী এসেছিলেন তাদের সঙ্গে ওই একটু ভোট কেন্দ্রীক কথা হয়েছে৷” পরীক্ষার আগের দিন বেশ আশা আশঙ্কার দোলাচলেই কাটালেন দুর্গাপুর মহকুমার ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত প্রার্থীরা৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.