সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল স্বামী। তাই স্বামীকে শেষ করতে প্রেমিকের সাহায্য নেয় স্ত্রী। প্রেমিকের যোগসাজশে চক্রান্ত করে নিজের বাড়িতেই খুন করা হয় পুরুলিয়ার অধ্যাপককে। নিহতের স্ত্রী এবং তার প্রেমিককে জেরা করে খুনের ঘটনার কিনারা করল পুলিশ।
গত ১৭ জানুয়ারি রাতে নিজের বাড়িতেই খুন হন অধ্যাপক অরূপ চট্টরাজ। প্রায় ন’দিনের মাথায় ওই ঘটনার কিনারা করল পুলিশ। ঠিক কী হয়েছিল সেদিন রাতে? পুলিশ সূত্রে খবর, নির্দিষ্ট সময়মতো খাওয়াদাওয়া সেরে উপরের ঘরে ঘুমোতে যান অধ্যাপক অরূপ। কিন্তু উপরের ঘরে পা রাখামাত্রই অন্ধকার করে দেওয়া হয় বাড়ি। সেই সুযোগে গলায় মাফলার পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয় তাঁকে। নিহতের মা ঘটনা নিজে চোখে দেখে চিৎকার করতে থাকেন। তবে সেই সময় অধ্যাপকের স্ত্রী অত্যন্ত শান্ত ছিল বলেই দাবি বৃদ্ধার। তাতেই সন্দেহ হয় পুলিশের। এছাড়াও পুলিশ লক্ষ্য করে পাপড়ির নামে থাকা একটি সিম থেকে অধ্যাপকের স্ত্রীর কাছে মেসেজ আসছে। তা দেখে সন্দেহ আরও বাড়ে পুলিশের। তার জেরে নিহতের স্ত্রী পাপড়িকে আটক করে জেরা শুরু করে পুলিশ। লাগাতার পুলিশি জেরায় ভেঙে পড়ে সে। পুলিশকে জানায় প্রেমিকের সঙ্গে চক্রান্ত করে স্বামীকে খুন করায় পাপড়ি।
কিন্তু কেন নিজের স্বামীকে খুন করানোর সিদ্ধান্ত নিল পাপড়ি? পুলিশ সূত্রে খবর, জে কে কলেজে পড়াশোনা করত পাপড়ি। সেই সময় অজয় আম্বানি নামে মধ্যপ্রদেশের জব্বলপুরের এক যুবকের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি হয়। কিন্তু পড়াশোনা শেষের পরই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় তাদের। তারপর অরূপের সঙ্গে বিয়ে হয় পাপড়ির। অধ্যাপকের সঙ্গেও প্রেম করেই বিয়ে হয় পাপড়ির। একটি কন্যাসন্তানও রয়েছে অরূপ-পাপড়ির। আড়াই বছর আগে আবার সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে এমসিএ করা অজয়ের সঙ্গে যোগাযোগ হয় পাপড়ির। ঠিক আগের মতোই কথাবার্তা শুরু হয় দু’জনের। গত বছরের অক্টোবরে পুরুলিয়ার রাঁচি রোডে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে একটি ঘরভাড়া নেয় অজয়। প্রেমিককে স্বামী অরূপের সঙ্গে আলাপও করিয়ে দেয় পাপড়ি। তবে অজয় যে বাড়িভাড়া নিয়ে আছে, তা স্বামীকে জানায়নি পাপড়ি। কাউকে কিছু না জানিয়ে স্কুলের চাকরি শেষে ওই বাড়িতে মাঝেমধ্যেই যাতায়াত করত সে। কিন্তু সম্পর্কের পথে কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছিল অধ্যাপক স্বামী। তাই তাকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় পাপড়ি। সেই অনুযায়ী ঘটনার রাতে স্বামী ফেরার আগে প্রেমিক অজয়কে বাড়িতে ঢোকার ব্যবস্থা করে দেয় পাপড়ি। পরিকল্পনামাফিক রাতের খাওয়াদাওয়ার পর স্বামীকে উপরের ঘরে ঘুমোতে পাঠিয়ে দেয় সে। এরপরই ঘরের বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন করে দেয় অজয়। অধ্যাপকের গলায় মাফলার পেঁচিয়ে খুন করে। কাজ শেষে ছাদ দিয়ে পালিয়ে যায় অজয়।
খুন করে আবারও ভাড়াবাড়িতে চলে যায় অজয়। ওই পাড়াতেই পাপড়ির এক বান্ধবী এবং সহকর্মীর বাড়ি। প্রেমিকার বান্ধবীর কাছ থেকে খাবার এবং ব্যথার ওষুধও নেয় অজয়। ওই রাতে ভাড়াবাড়িতেই ঘুমিয়ে পড়ে সে। অধ্যাপককে খুনের পর টানা দু’দিন পুরুলিয়াতেই ছিল অজয়। তারপর সে রাঁচিতে পালিয়ে যায়। অধ্যাপকের স্ত্রীকে জেরা করে গোটা ঘটনা সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য পায় পুলিশ। অধ্যাপকের স্ত্রী এবং তার প্রেমিককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। দু’জনকে রবিবার আদালতে তোলা হবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.