সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, দুর্গাপুর: মামাতো দেওরের সঙ্গে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে বধূ। সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিলে ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের ছবি ভাইরাল করার হুমকি দেন যুবক। সেই আক্রোশে নিজের দাদার সাহায্য নিয়ে দেওরকে খুন করেন মহিলা। খুনের পর মৃতদেহের পাশে রাত কাটালেন মহিলা ও তাঁর দাদা। গত বৃহস্পতিবার দুর্গাপুরের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের ফরিদপুরের উদ্ধার হওয়া ছোটন দুবের খুনের তদন্তে নেমে এমনই বিস্ফোরক তথ্য পেল পুলিশ। অভিযুক্ত বধূকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
দুর্গাপুরের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের ফরিদপুরের নমো বাউড়ি পাড়ার বাসিন্দা গৌতম সাহার বাড়ি থেকে বৃহস্পতিবার বিহারের সারন জেলার খানপুরের বাসিন্দা ছোটন দুবের পচাগলা রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার করে দুর্গাপুর থানার পুলিশ। যে ঘরে ছোটন দুবের দেহ উদ্ধার হয় সেই ঘরের দরজা বাইরে থেকে তালাবন্ধ ছিল। আর তা দেখেই দুর্গাপুর থানার তদন্তকারীদের সন্দেহ হয় এই ঘটনা খুনের। তদন্তে নেমে পুলিশ ছোটন দুবের মোবাইলের কললিস্ট পরীক্ষা করতেই বেরিয়ে আসে দুর্গাপুর থানা এলাকার ধাণ্ডাবাগ বাগানপাড়ার বাসিন্দা কিশোর পাণ্ডের স্ত্রী পূজার মোবাইল নম্বর। সেই সূত্র ধরেই পুলিশ পূজার খোঁজে তল্লাশি শুরু করে। শুক্রবার রাতে ওই মহিলাকে ধাণ্ডাবাগ বাগানপাড়ার বাড়ির সামনে থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
দুর্গাপুর মহিলা থানার পুলিশের কাছে ছোটন দুবেকে কেন ও কীভাবে খুন করা হয় তা জানায় পূজা। পুলিশ জানতে পারে, বেশ কয়েক বছর আগে ছোটন দুবের সঙ্গে পূজার বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক তৈরি হয়। সেই সময় দুজনের ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের ছবি মোবাইল বন্দি করেন ছোটন। ইতিমধ্যে পূজার স্বামী বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের কথা জেনে ফেলেন। পূজা সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে চায়। ছোটন দুবে তখন পূজাকে তাঁদের ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের ছবি দেখিয়ে ব্ল্যাকমেল করছিল। পূজা তার দাদাকে সমস্ত ঘটনা জানায়। দুজনে মিলে ছোটনকে খুনের পরিকল্পনা করে। এর পরেই ছোটনকে ডাকা হয় দুর্গাপুরে।
পুলিশের অনুমান, গত মঙ্গলবার পূজা ও তার দাদা মৃত্যুঞ্জয় ফরিদপুরে ওই ভাড়াবাড়িতে ছোটনের কাছে যায়। সেখানে ছোটনকে মদ্যপান করিয়ে গলা টিপে খুন করে দুজনে। এর পরেই ওই ঘরের বাইরে থেকে তালা দিয়ে বেরনোর চেষ্টা করে। পূজা ও তাঁর দাদা ঘর থেকে বেরতে গিয়ে দেখে বাড়ির মূল দরজায় তালা। মৃত ছোটনের সঙ্গে একই ঘরে রাত কাটায় দাদা ও বোন। সকালে তালা খুললে চুপিসারে বেরিয়ে যায় তারা। শুক্রবার সকালে মৃত্যুঞ্জয় পালিয়ে মালদহে চলে যায়। শনিবার ভোরে মালদহ থেকে আটক করা হয় পূজার দাদাকে। ধৃত পূজাকে দুর্গাপুর মহকুমা আদালতে তোলা হয়। ধৃতের সাত দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেয় আদালত। আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশের এসিপি (কাঁকসা) সুমন কুমার জয়সওয়াল জানান, “একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আর একজনকে আটক করা হয়েছে। ধৃতদের জেরা করে এই খুনের কারণ-সহ আরও অনান্য বিষয়ে জানার চেষ্টা করা হবে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.