মণিরুল ইসলাম, উলুবেড়িয়া: করোনা সংক্রমণ নিয়ে ভুল ধারণা যে এখনও আমজনতার মধ্যে বেশ ঘাঁটি গেড়ে রয়েছে, তা ফের বোঝা গেল হাওড়ার ডোমজুড়ের একটি ঘটনায়। ছেলে করোনা পজিটিভ (Coronavirus)। তাই তাঁর বৃদ্ধ বাবা, মাকে ঘরে ঢুকতে না দেওয়ার অভিযোগ উঠল বাড়িওয়ালার বিরুদ্ধে। বাড়িওয়ালাকে এই কাজে সমর্থন করেছেন প্রতিবেশীরাও। সকলের প্রবল বাধার মুখে পড়ে বৃদ্ধ দম্পতিকে সারারাত কাটাতে হয় রাস্তায়। ঘটনা জানাজানি হতেই প্রতিবাদে হাওড়া-আমতা রোড অবরোধ করেন জনা কয়েক বাসিন্দা। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে অবরোধ তুলে দেয়। বৃদ্ধ দম্পতিকে সেফ হোম শেলটারে পাঠানো হয়।
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ডোমজুড়ের বটতলা এলাকার ওই দম্পতির ছেলে মাস খানেক আগে জন্ডিসে আক্রান্ত হন। জন্ডিস ভাল হয়ে যাওয়ার পর বাড়িতে থাকার সময় কয়েকদিন ধরেই তার শরীর ভালো যাচ্ছিল না। গত বৃহস্পতিবার দম্পতি ছেলেকে হাওড়া জেলা হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যান। সেখানে তাঁর প্রাথমিক চিকিৎসার পাশাপাশি লালারসের নমুনা পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকরা। যুবকের লালারস সংগ্রহ করে তা পাঠানো হয় পরীক্ষার জন্য। এদিকে দম্পতি ছেলেকে নিয়ে বাড়িতে চলে আসেন। সোমবার বিকালে যুবকের করোনা টেস্টের রিপোর্ট পজিটিভ আসে। এরপর তাঁকে ফুলেশ্বরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভরতি করা হয়।
এদিকে, ওই যুবককে করোনা আক্রান্ত হওয়ার কথা এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। সোমবার তারা হাসপাতালে যান। পরে সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরেন। এর পরেই বাড়িওয়ালা ও আশপাশের কয়েকজন তাদের ঘরে ঢুকতে বাধা দেন বলে অভিযোগ। এমনকি তারা স্থানীয় প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে স্বাস্থ্য পরীক্ষাও করান। তাতেও কোনো সমস্যা ধরা পড়েনি। অভিযোগ এর পরেও লোকেরা তাঁদের বাড়িতে ঢুকতে দেয়নি।
বাধ্য হয়ে ওই বৃদ্ধ দম্পতি ডোমজুড় থানায় যান। পুলিশও সমস্যা মেটাতে প্রথমে ব্যর্থ হয়। শেষমেষ বৃদ্ধ দম্পতি সারারাত রাস্তায় কাটান। মঙ্গলবার সকালে তাঁরা হাওড়া-আমতা সংযোগকারী রাস্তার উপর বসে পড়েন। তাঁদের সর্মথনে এগিয়ে আসেন আশা কর্মীরা। অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে হাওড়া-আমতা রোড। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে ডোমজুড় থানার পুলিশ ও প্রশাসনের আধিকারিকরা।তাঁরা ওই দম্পতিকে সেফ হোম সেল্টারে নিয়ে যান। উঠে যায় রাস্তা অবরোধ। ডোমজুড়ের বিডিও রাজা চট্টোপাধ্যায় বলেন, ”মানুষের সচেতনতার অভাব রয়েছে। তাই এমন ঘটনা ঘটল। আপাতত দম্পতিকে সেফ হোমে রাখা হয়েছে। বাড়িওয়ালা ও প্রতিবেশীদের বোঝানো হচ্ছে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.