সুমন করাতি, হুগলি: দুহাতে হাজার কাজ। একদিকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, অন্যদিকে সিনেমা শিল্প। কিশোর বয়সে দু-দুটি যন্ত্র আবিষ্কার আর তথ্যচিত্র (Documentary) তৈরি। জোড়া কৃতিত্বে জোড়া পুরস্কার লাভ করে নজির গড়ল হুগলির (Hooghly) অভিজ্ঞান কিশোর দাস। পুরস্কারের মধ্যে একটি জাতীয়, অন্যটি আন্তর্জাতিক। আর দুয়ে মিলে ভালোই লক্ষ্মীলাভ হয়েছে অভিজ্ঞানের। সুসংবাদ তো বটেই, জোড়া পুরস্কারপ্রাপ্তিতে এবারের পুজোর মরশুমটা বিশেষ হয়ে উঠেছে তার কাছে।
এবছর কেন্দ্রের ‘জাতীয় মেধা সম্পদ’ পুরস্কার লাভ করেছে চুঁচুড়ার (Chinsura) নারকেল বাগানের বাসিন্দা অভিজ্ঞান কিশোর দাস। পুরস্কার হিসেবে কিশোর বিজ্ঞানীর প্রাপ্তি হয়েছে একটি মেডেল, শংসাপত্র এবং ১ লক্ষ টাকা। আবার সুদূর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের (USA) ফিলাডেলফিয়া শহর থেকেও পুরস্কার পৌঁছেছে অভিজ্ঞানের কাছে। চিকিৎসা শাস্ত্রের পথিকৃৎ পণ্ডিত মধুসূদন গুপ্তর জীবনী নিয়ে তার তৈরি তথ্যচিত্র এই পুরস্কার পেয়েছে। ফিলাডেলফিয়া অভিজ্ঞান পেয়েছে ২৫০ ডলার, মেডেল, শংসাপত্র, তিনটে মার্চেন্ডাইস টি-শার্ট ও বিচারকের লিখিত মূল্যায়ন।
গত ১৩ অক্টোবর অর্থাৎ পুজোর ঠিক আগে নয়াদিল্লির বিজ্ঞান ভবনে অভিজ্ঞানের হাতে ‘জাতীয় মেধা সম্পদ পুরস্কার’ তুলে দেন কেন্দ্রীয় বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী পীযুষ গোয়েল। করোনা (Coronavirus) প্রতিরোধ এবং গাড়ির দূষণ হ্রাসকারী দুই পৃথক যন্ত্র আবিষ্কারের জন্য এই পুরস্কার প্রাপ্তি তার। এ ধরনের ‘জাতীয় পুরস্কার’ প্রাপক হিসেবে অভিজ্ঞানই কনিষ্ঠতম। এমনকি ‘প্রথম বাঙালি’ উদ্ভাবক বা আবিষ্কারকও (Inventor)সে।
দেড় বছর আগে ‘আধুনিক ভারতের সুশ্রুত – পণ্ডিত মধুসূদন গুপ্ত’ নামে একটি তথ্যচিত্র বানিয়েছে এই কিশোর বিজ্ঞানী তথা চিত্র-পরিচালক। মধুসূদন গুপ্ত ছিলেন আধুনিক ভারতের প্রথম শল্যচিকিৎসক (Surgeon)। হুগলি জেলার বৈদ্যবাটির বাসিন্দা ছিলেন তিনি। তাঁর হাত দিয়েই সূচনা হয় আধুনিক শল্যচিকিৎসার। ১৮৩৬ সালের ১০ জানুয়ারি তৎকালীন ক্যালকাটা মেডিক্যাল কলেজে পণ্ডিত গুপ্ত প্রথম শব ব্যবচ্ছেদ করেছিলেন। অভিজ্ঞানের এই তথ্যচিত্রটি ইতিমধ্যে ১৫টিরও বেশি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয় এবং বেশ কয়েকটিতে পুরস্কৃতও হয়। এই উৎসবগুলির মধ্যে ফিলাডেলফিয়া (Philadelphia) আন্তর্জাতিক যুব চলচ্চিত্র উৎসব অন্যতম। গত ফেব্রুয়ারি মাসে ফিলাডেলফিয়া আন্তর্জাতিক যুব ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে তথ্যচিত্র বিভাগে প্রথম পুরস্কার লাভ করেছিল হুগলি কলেজিয়েট স্কুলের একাদশ শ্রেণির এই ছাত্র। কিন্তু সে বছর তার মাধ্যমিক পরীক্ষা থাকায় ফিলাডেলফিয়া যেতে পারেনি। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, তারা সরাসরি অভিজ্ঞানের কাছে পার্সেলের মাধ্যমে পুরস্কার পাঠিয়ে দেবে। সেই পুরস্কার এখন হাতে পেল অভিজ্ঞান।
চুঁচুড়ার কিশোর জানাচ্ছে, গত বছর পুজো থেকে এ বছরের শুরু পর্যন্ত একদম ভালো কাটেনি। মনোনয়নের পরও খুব অল্পের জন্য জাতীয় পুরস্কার পাওয়া হয়নি। অভিজ্ঞানের বাবারও শরীর খারাপ ছিল। মার্কিন মুলুকে যাওয়ার আমন্ত্রণ থাকা সত্ত্বেও সম্ভব হয়নি যাওয়া। এবার বেজায় উচ্ছসিত অভিজ্ঞান ও তার পরিবারের সদস্যরা। পুজো-উৎসবের মধ্যেই লক্ষাধিক টাকার ‘লক্ষ্মী’ লাভ। তার উপর জাতীয় মেধা পুরস্কার আনতে পাঁচ দিনের দিল্লি ভ্রমণ। এবারের পুজোটা তার কাটল ভালোই। অভিজ্ঞান জানাচ্ছে, মৌলিক বিজ্ঞানচর্চা ও বিজ্ঞানমনস্কতার প্রচার ও প্রসারই তার একমাত্র লক্ষ্য।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.