মণিশংকর চৌধুরি ও সৌম্য মুখোপাধ্যায়, ধনেখালি: ভোটের খবর করতে বেরিয়ে বেনজিরভাবে আক্রান্ত সংবাদ প্রতিদিন-এর সাংবাদিকরা। অভিযোগ, শাসক দলের কর্মীরা রীতিমতো মাটিতে ফেলে মারধর করেন সাংবাদিক নব্যেন্দু হাজরা এবং চিত্র সাংবাদিক রাজীব দে-কে। ইতিমধ্যেই ধনেখালি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন তাঁরা।
ঘটনা হুগলির মহদিপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পোলিং বুথের। নব্যেন্দু হাজরা জানান, হুগলির বিজেপি প্রার্থী লকেট চট্টোপাধ্যায়ের সারাদিনের সূচির উপর নজর রাখছিলেন তিনি। দুপুর ১টা নাগাদ মহদিপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যান লকেট। তিনি বুথে ঢোকার পরই উত্তেজনা ছড়ায়। বুথের ভিতরের প্রিসাইডিং অফিসারের সঙ্গে বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েন তিনি। শাসক দলের বিরুদ্ধে বিজেপি প্রার্থীর অভিযোগ, ওই বুথে ছাপ্পা ভোট হচ্ছিল। সেখানেই খাওয়া-দাওয়া করছিলেন ওই প্রিসাইডিং অফিসার। বচসায় পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠতেই বুথ থেকে বেরিয়ে আসেন লকেট।
নব্যেন্দুর কথায়, “লকেট বেরিয়ে আসতেই ভিতর থেকে দুমদাম করে জোর আওয়াজ আসে। তারপরই কয়েকজন এসে লকেটের গাড়ি ভাঙচুর করতে শুরু করে। তিনি কোনওক্রমে বেরিয়ে যেতেই সমস্ত রাগ এসে পড়ে সাংবাদিকদের উপর। আমরা যেন খবর সংগ্রহে এসেই ভুল করেছি। বেধড়ক মারধর করা হয় আমাকে। আমার চিত্র সাংবাদিককে মাটিতে ফেলে মারা হয়। ওর চশমাও ভেঙে দেওয়া হয়। সাংবাদিকতার এত বছরে এমন অভিজ্ঞতা কখনও হয়নি। রীতিমতো মুখ ঢেকে, কার্যত হাত জোড় করে সেখান থেকে প্রাণ বাঁচিয়ে পালাই।” অভিযোগ, শাসকদলের কর্মীরাই বেনজিরভাবে মারধর করেন তাঁদের। শুধু সংবাদ প্রতিদিন-এর সাংবাদিকদেরই নয়, একাধিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরা তৃণমূল কর্মীদের হাতে আক্রান্ত হয়েছেন বলে অভিযোগ। অনেককে এখনও আটকে রাখা হয়েছে বলেও খবর। ইতিমধ্যেই ধনেখালি থানায় লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন নব্যেন্দু।
তবে প্রশ্ন উঠেছে পুলিশ এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভূমিকা নিয়েও। কারণ সাংবাদিকদের উপর হামলার সময় সেখানেই উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর অন্তত চারজন। গোটা বিষয়টি দেখেও তাঁরা নীরব থাকেন বলে অভিযোগ। সাংবাদিকদের সাহায্যে কেউই এগিয়ে আসেনি। এদিকে তৃণমূলের পালটা অভিযোগ, শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ চলছিল ওই বুথে। লকেট চট্টোপাধ্যায় এসেই অশান্তির পরিবেশ সৃষ্টি করেন। এমনকী, বিজেপির বিরুদ্ধে ইভিএম মেশিন ভাঙার অভিযোগও আনা হয়েছে।
তবে গোটা ঘটনায় সাংবাদিকদের পাশে দাঁড়িয়েছেন বিজেপি প্রার্থী লকেট। তিনি বলেন, “সংবাদমাধ্যম নিজেদের মতো কাজ করেছে। তাদের (শাসক দলের) কথায় চলেনি। সেই জন্যই ওদের মারধর করা হয়েছে। দেখছ তো, আমার উপরও হামলা করা হয়েছে। তবে সকলকে বলতে চাই আমরা তোমাদের পাশে আছি। কী করা যাবে, আমাদের এভাবেই লড়াইটা চালিয়ে যেতে হবে।” কথায় বলে গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ সংবাদমাধ্যম। নিরপেক্ষভাবে মানুষের কাছে সত্যিটা পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব তাঁদের কাঁধে। আর সেখানে গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় উৎসবে তাঁরাই আক্রান্ত।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.