দিব্যেন্দু মজুমদার, হুগলি: দক্ষতাই শেষকথা। তাই রীতিমতো ইন্টারভিউ নিয়ে কর্মীদের বহাল করা হয়। খতিয়ে দেখা হয় কর্মপ্রার্থীদের ‘অভিজ্ঞতা’ ও ট্র্যাক রেকর্ডও। বেতন যোগ্যতা অনুযায়ী। ভাল কাজের জন্য আবার উপরি হিসেবে মেলে মোটা ইনামও! যাকে বলে একেবারে কর্পোরেট ধাঁচে চুরির ব্যবসা! এভাবেই রমরমিয়ে ব্যবসা চালাচ্ছিলেন হুগলির মগরার ভনা ঘোষ। কেউ কিচ্ছুটি টের পাননি। শেষপর্যন্ত চৌর্যবৃত্তির এই ব্যবসার পর্দাফাঁস করলেন স্থানীয় বাসিন্দারাই। ভনা ঘোষকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাঁর কীর্তিতে হতবাক দুঁদে পুলিশকর্তাও।
[জাল পাসপোর্ট-সহ ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে গ্রেপ্তার দুই মায়ানমারের বাসিন্দা]
হুগলির মগরার তেঘড়িয়ায় বাড়ি ভনা ঘোষের। জানা গিয়েছে, তেঘড়িয়ার বাড়িতে বসে পুরোদস্তুর তস্কর-সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিল মাঝবয়সি ভনা। বাইরের লোকের কাছে হাবেভাবে নিপাট ভালমানুষ। কিন্তু ‘কোম্পানি’র কর্মচারীদের কাছে কড়া ‘বস’। কাজে গাফিলতি দেখলে রেগে কাঁই, আবার ভাল কাজ করলে দরাজহস্ত। পুলিশ সূত্রের খবর, আনকোরা থেকে ঘাঘু- হরেক কিসিমের চোরকে মাস মাইনেতে নিয়োগ করত ভনা। ‘কোয়ালিফিকেশন’ এবং ‘এক্সপেরিয়েন্স’-এর ভিত্তিতে বেতন। শিক্ষানবিশদের নামমাত্র টাকা ‘স্টাইপেন্ড’ দিয়ে ট্রেনিংয়ের নামে কাজ করিয়ে নিত। তবে পাকা মাথাদের দক্ষতার স্বীকৃতি দিতে ‘ইনসেনটিভ’ দিতেও কার্পণ্য করেনি।
[স্ত্রী-সন্তানকে ফেলে শাশুড়িকে নিয়ে পালাল জামাই!]
চোরমহলে ভনার কোম্পানির নামডাক দিন দিন বাড়তে থাকে। মাস ফুরোলে বাঁধা মাইনের গ্যারান্টি! সঙ্গে আবার ভাতা-বোনাস! চাকরিপ্রার্থীর ভিড় লেগেই থাকত। ভনারও পোয়াবারো। ‘নাইট ডিউটি’ শেষ করে প্রতি ভোরে তার বাড়িতে লাইন দিত কর্মীরা। চুরির মাল মালিকের হাতে তুলে হিসেব বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য। পরিত্যক্ত কারখানার মূল্যবান যন্ত্রপাতি-লোহালক্কড় থেকে শুরু করে রাস্তা তৈরির নির্মাণসামগ্রী, গেরস্তের বাড়ি থেকে হাতানো পাম্প, টিভি, ঘড়ি, মোবাইল, ল্যাপটপ। বন্ধ দোকান সাফ করে আনা বাসনকোসন, দাঁড়িপাল্লা। কী নেই সে তালিকায়! এমনকী, বন্ধ ডানলপ কারখানার জিনিসপত্র চুরিতেও ভনার দল জড়িত বলে পুলিশের সন্দেহ। চোরাই দ্রব্যের গুণে ক্রমে ফুলে-ফেঁপে উঠতে থাকে মালিকের ভাঁড়ার।
[পদ্মশ্রী করিমুলের বাড়িতে মেডিক্যাল ক্যাম্প, বিনামূল্যে চিকিৎসা গ্রামবাসীর]
কিন্তু, চুরি বিদ্যে অবশ্যই বড় বিদ্যে, যদি না পড়ে ধরা! শেষমেশ ধরাই পড়ে গেল ভনা ঘোষ। কী ভাবে? চুরির মাল ভ্যানে চাপিয়ে চোরের দল শনিবার সকালেও মালিকের দরবারে এসেছিল সারারাতের কারবারের হিসেব বোঝাতে। এলাকাবাসী তক্কে তক্কে ছিলেন। কারণ মাস তিনেক হল, পরিত্যক্ত কারখানার পাশাপাশি সাধারণ মানুষের বাড়িতেও পড়েছে চোরের নজর। জলের পাম্প থেকে সাইকেল- একটু বেখেয়াল হলেই রাতের আঁধারে নিমেষে গায়েব হয়ে যাচ্ছে। রোজ কাকভোরে ভনা ঘোষের দরজায় ভ্যানবোঝাই হাতফেরতা জিনিসের ডাঁই দেখে এলাকাবাসী দুইয়ে দুইয়ে চার করে নেন। এদিন সকালে তাঁরা একজোট হয়ে ভনার বাড়িতে চড়াও হন। বিপদ বুঝে ‘কর্মচারী’রা চম্পট দিলেও মালিক পারেনি। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রথমে রিভলভার উঁচিয়ে ভয় দেখানোর চেষ্টা করেছিল সে। কিন্তু, লাভ হয়নি। স্থানীয় মানুষ ভনাকে পাকড়াও করে পুলিশের হাতে তুলে দেন। তাঁর কাছ থেকে বেশি কিছু চোরাই সামগ্রী উদ্ধার করেছে পুলিশ।
[পর্যটকদের জন্য সুখবর, তিন তিনটে রয়্যাল বেঙ্গলের জন্ম হল বেঙ্গল সাফারি পার্কে]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.