দিব্যেন্দু মজুমদার, হুগলি: একটা-দুটো নয়, চার-চারটে বিয়ে। তিন বউ জীবিত। ঘর ভরতি ছেলেমেয়ে। তিন বউয়ের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেও যৌনক্ষুধা মেটেনি। শেষপর্যন্ত তার যৌন লালসার শিকার ১৫ বছরের সৎ মেয়ে! আর তারই জেরে নাবালিকা সৎ মেয়ে জন্ম দিল শিশুকন্যার। ঘটনার কথা জানতে পেরেই সৎ মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগে সৎ বাবা শেখ চাঁদ মহম্মদকে মুর্শিদাবাদের সালার থেকে গ্রেপ্তার করল উত্তরপাড়া থানার পুলিশ।
চাঞ্চল্যকর এই ঘটনাটি ঘটেছে হিন্দমোটর কোতরং ধর্মতলা এলাকায়। প্রতিবেশীরা অভিযুক্তর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করলেও অভিযুক্তর স্ত্রী ও সন্তানদের লালন পালনের জন্য স্বামীর যাতে জেল না হয় সেই দাবিও তুলেছেন।
ধৃত শেখ চাঁদ মহম্মদ মুর্শিদাবাদের সালারের বাসিন্দা। ‘গুণধর’ চাঁদ মহম্মদের প্রথম পক্ষের স্ত্রী সালারে সন্তানদের নিয়ে থাকেন। উত্তরপাড়ায় একটি ইটভাটায় কাজ করতে এসে বালি তোলার অবৈধ কারবার শুরু করে অভিযুক্ত। তারপর থেকেই বালি তোলার ব্যবসা ফুলেফেঁপে ওঠে। কোতরং ধর্মতলা এলাকায় স্বামী পরিত্যক্তা এক মহিলাকে বিয়ে করে চাঁদ। সেই মহিলার প্রথম পক্ষের চারটি সন্তান। তারপর চাঁদের নিজের আরও তিনটি সন্তান হয়। এরই মধ্যে আবার দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রীর দিদির স্বামী মারা যাওয়ায় তাঁকেও বিয়ে করে চাঁদ। তারও সন্তান রয়েছে। কিন্তু চাঁদের সন্তানের মা হতে গিয়ে বাড়িতে প্রসবের সময়ই মৃত্যু হয় তৃতীয় স্ত্রীর। এলাকাবাসীর অভিযোগ, বাড়িতে সন্তান প্রসব করলে কেউ জানতে পারবে না। সেক্ষেত্রে তাকে বিক্রি করাও সহজ। তাই প্রতিবেশীদের সন্দেহ, শিশু পাচারের সঙ্গেও যুক্ত অভিযুক্ত। কারণ চাঁদের এক নাবালক ছেলে দীর্ঘদিন ধরে নিখোঁজ।
প্রতিবেশীদের অভিযোগ, এলাকার আরও এক মহিলাকে চাঁদ বিয়ে করে। একইসঙ্গে তিন স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে বহাল তবিয়তে দিন কাটাচ্ছিল সে। কিন্ত একের পর এক মহিলার সঙ্গে যৌন সম্পর্ক গড়ে তুলেও সে তৃপ্ত হতে পারেনি। তাই দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রীর আগের পক্ষের স্বামীর নাবালিকা কন্যাকে ভয় দেখিয়ে তাকে দিনের পর দিন ধর্ষণ করতে থাকে। ধর্ষণের ফলে ওই নাবালিকা গর্ভবতী হয়ে পড়ে। গর্ভাবস্থায় চার-পাঁচ মাসের মধ্যেই সৎ মেয়ের শারীরিক অবস্থার পরিবর্তন বুঝতে পারে চাঁদ। মতি-গতি ভাল ঠেকছে না বুঝে হিন্দমোটর ছেড়ে পালিয়ে সালারে প্রথম পক্ষের স্ত্রীর কাছে আশ্রয় নেয় সে।
এদিকে নাবালিকা গর্ভবতী বুঝতে পেরেও তার মা পুরো বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু শুক্রবার হঠাৎই প্রসব যন্ত্রণা হওয়ায় তাকে উত্তরপাড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ভরতি করতে হয়। সেখানেই নির্যাতিতা কন্যা সন্তানের জন্ম দেয়। হাসপাতাল সুপার বিষয়টি উত্তরপাড়া থানা ও চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটিকে জানান। এরপরই উত্তরপাড়া থানার পুলিশ তদন্তে নেমে নাবালিকার মাকে জিজ্ঞাসাবাদের পরই মঙ্গলবার গভীর রাতে মুর্শিদাবাদের সালারে প্রথম পক্ষের স্ত্রীর বাড়ি থেকে চাঁদকে গ্রেপ্তার করে। বুধবার ধৃতকে শ্রীরামপুর মহকুমা আদালতে তোলা হয়। নাবালিকার মা ও দিদিমা অবশ্য চাইছেন, চাঁদের যেন কোনও শাস্তি না হয়। তবে স্থানীয় তৃণমূল নেতা সন্দীপ কুমার দাস জানান, অত্যন্ত জঘন্য ও নিন্দনীয় কাজ যা কল্পনা করা যায় না। অভিযুক্ত চাঁদের কঠোর শাস্তির দাবি করেছেন তিনি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.