প্রতীকী ছবি।
নিজস্ব সংবাদদাতা: চারপাশটা ইটের পাঁচিল দিয়ে ঘেরা। মাঝে বেড়ার ঘর। গোটা চৌহদ্দি অন্ধকারে ডুবে। ঘরের ভিতরে দুই কোণায় মশালের আগুন জ্বলছে। বলিকাঠে লাল জবাটা সবেমাত্র জল ছিটিয়ে দেওয়া হয়েছে। ঘরভর্তি ছড়িয়ে রয়েছে হাড়গোড়, খুলি। দেড় ফুটের কালীমূর্তির সামনে উপকরণ দেখে বোঝাই যাচ্ছে পুজোর প্রস্তুতি চলছে। –এ পর্যন্ত ঠিকই ছিল। কিন্তু তাজ্জব হওয়ার মতো ঘটনা ঘটল যখন জানা গেল, ওই হাড়িকাঠেই বছর বারোর এক ছাত্রকে খাঁড়ার ঘায়ে ধর থেকে মাথা আলাদা করার চেষ্টা করেছিল এক তান্ত্রিক।
তারপর? কোনওক্রমে রক্ষা। প্রস্রাব করার নাম করে নিজের কৌশলে পালায় বালক। অন্তত ভূত চতুর্দশীর আগের রাতে তান্ত্রিকের তন্ত্রসাধনার সিদ্ধিলাভে ‘খুন’ হতে হল না এক বালককে, বলছেন এলাকার লোকজন। আপাতত তান্ত্রিককে আটক করেছে পুলিশ। উদ্ধার করা হয়েছে বালককে। কিন্তু একবিংশ শতাব্দীতেও নরবলির অভিযোগ সামনে আসার পর শিহরিত রাজ্যের মানুষ। বিশিষ্টরা বলছেন, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে নরবলি নিষিদ্ধ। জমিদার কিংবা বনেদি বাড়ির পুজোয় আখ, চালকুমড়ো বলি দেওয়া হয়। কিন্তু এই অভিযোগটা যদি সত্য প্রমাণিত হয়, তাহলে তান্ত্রিকের কঠোরতম শাস্তির দাবি তুলেছেন সমাজবিদরা।
ঠিক কী ঘটেছিল? মঙ্গলবার রাত সাড়ে ন’টা নাগাদ টিউশন শেষে বাড়ি ফিরছিল বছর বারোর এক বালক। বাড়ি চন্দননগর সুরের পুকুর কলাবাগানে। বাড়ির কাছেই সপ্তম শ্রেণির এই ছাত্রটিকে অপহরণ করা হয়। প্রলোভন দেখিয়ে কিছু বুঝে ওঠার আগেই রিকশায় চাপিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় চুঁচুড়ার দেবীপুরে তান্ত্রিক স্বপন অধিকারীর বাড়িতে। ছাত্রটির গলায় জবাব মালা জড়িয়ে পুজো সারে তান্ত্রিক। এলাকাবাসীর অভিযোগ, ছাত্রকে অপহরণ করে বলি দেওয়ার চেষ্টা করেছিল তান্ত্রিক। পুজোপর্ব যখন চলছিল, ঠিক তখনই প্রস্রাব করার নাম করে ঘরের বাইরে এসে পালায় ছাত্রটি। এই খবর জানাজানি হতেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন এলাকার লোকজন। খবর দেওয়া হয় চুঁচুড়া থানায়। পুলিশ আসার আগেই উত্তেজিত জনতা তান্ত্রিকের বাড়ি চড়াও হয়। তাকে বেধড়ক মারধর করা হয়। পুলিশ এসে তান্ত্রিককে আটক করে। ছাত্রটিকে উদ্ধার করে বাড়িতে পৌঁছে দেয় পুলিশ। তান্ত্রিক কী উদ্দেশ্যে ছাত্রটিকে বাড়িতে আটকে রেখেছিল, বলি দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছিল কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তান্ত্রিকের ঘরে থাকা খুলি, হাড়গুলি নিয়েও তদন্ত করছে পুলিশ। তান্ত্রিকের স্ত্রী ও পরিবারের সদস্যদেরও জিজ্ঞাসাবাদ চালাচ্ছে চুঁচুড়া থানা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.