ছবিতে হাসপাতালে প্রহৃত রুকসানা বেগম
দিব্যেন্দু মজুমদার, হুগলি: কেন দু’তিনটি করে সন্তান জন্মাবে? এই প্রশ্ন তুলে লেবার রুমে প্রসূতিকে মারধরের অভিযোগ। অভিযোগ উঠল হাসপাতালের কর্তব্যরত নার্সের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, প্রসূতি যখন প্রসব য্ন্ত্রণায় ছটফট করছেন, তখন তাঁর হাতে কাঠ দিয়ে মারা হয়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বুধবার দুপুরে চন্দননগর মহকুমা হাসপাতালে চাঞ্চল্য ছড়ায়।
জানা গিয়েছে, প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে মঙ্গলবার গভীর রাতে চন্দননগর মহকুমা হাসপাতালে ভরতি হন রুকসানা বেগম। ওই গৃহবধূর বাড়ি হুগলির চাঁপদানির কড়াইকল এলাকায়। ওই গৃহবধূর দুই সন্তান রয়েছে। এদিকে ফের অন্তঃসত্ত্বা হওয়ায় প্রায়ই মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে আসতেন। এদিন রাতে প্রসব যন্ত্রণা শুরু হলে তড়িঘড়ি তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন স্বামী মনসুর আলি। অভিযোগ, মধ্যরাতে স্ত্রীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে মাতৃযানের জন্য হাসপাতালে ফোনও করেছিলেন তিনি। তবে হাসপাতাল থেকে জানানো হয়, অ্যাম্বুল্যান্স দেওয়া যাবে না। তাই নিজেই গাড়ি ভাড়া করে স্ত্রীকে নিয়ে আসেন। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে কর্তব্যরত চিকিৎসক ওই গৃহবধূকে ভরতিও করে নেন। স্ত্রীকে লেবার রুমে নিয়ে গেলে হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন মনসুর আলি। তখনও তিনি জানতেন না, লেবার রুমের মধ্যে মারধরের শিকার হচ্ছেন স্ত্রী।
হাসপাতালের লেবার রুমে তখন অন্য ছবি। কর্তব্যরত নার্স ততক্ষণে প্রসূতিকে মারধর শুরু করেছেন। গৃহবধূর কেন দুতিনটি সন্তান থাকবে? এই ‘অপরাধে’ চলে মারধর। অভিযোগ, থাপ্পড়ের পাশপাশি কাঠ দিয়ে হাতে আঘাতও করা হয়। প্রসব যন্ত্রণার পাশাপাশি এই নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে ওই গৃহবধূকে। সকালবেলা শিশুসন্তানকে দেখতে বাড়ির লোকজন এলে কান্নায় ভেঙে পড়েন অপমানিত রুকসানা বেগম। তাঁর মুখে গোটা ঘটনাটি শুনে ক্ষিপ্ত পরিবারের লোকজন হাসপাতালের সুপারের কাছে অভিযোগ জানান। অভিযুক্ত নার্সের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সুপারকে ঘিরে ধরে বিক্ষোভও দেখানো হয়। বিক্ষুব্ধদের দাবি, অভিযুক্তের নাম জানেন না তাঁরা। তাই হাসপাতালের প্রত্যেক নার্সকে হাজির করানো হোক। তারপর তাঁদের মধ্যে থেকে অভিযুক্তকে চিহ্নিত করবেন রুকসানা বেগম। চিহ্নিতকরণ সম্পূর্ণ হলে অভিযুক্তকে কড়া শাস্তি দিতে হবে। নাহলে বিষয়টি ধামাচাপা দিয়ে দেবেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
ক্ষুব্ধ মনসুর আলি বলেন, ‘আমার স্ত্রীর একটি, দুটি না তিনটি সন্তান থাকবে, তাতে নার্সের কী? সন্তানদের প্রতিপালনের সামর্থ্য আমার আছে।’ এদিকে পরিস্থিতি সামাল দিতে আসরে নামেন হাসপাতাল সুপার ডাক্তার জগন্নাথ মণ্ডল। তাঁর দাবি, ভাষা বিভ্রাটের জেরেই এই ভুল বোঝাবুঝি। নার্স বাংলা বোঝেন না। তবে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.