উত্তেজিত জনতা বিক্ষোভ, জ্বলছে পুলিশের জিপ।
সুব্রত যশ, আরামবাগ: পুলিশের গাড়ি চেকিংয়ের সময় পথদুর্ঘটনায় মৃত্যু হল এক যুবকের। মৃতের নাম মুরারি কর্মকার। তার বাড়ি বাঁকুড়ার কোতুলপুর থানার গোপালগঞ্জ গ্রামে। এই মৃত্যুকে কেন্দ্র করে উত্তাল হয়ে ওঠে গোঘাট থানার পচাখালি এলাকা। পথ দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত যুবককে ফেলে পুলিশের পালিয়ে যাওয়ায় প্রত্যক্ষদর্শীদের মনে ক্ষোভের সঞ্চার হয়। এলাকা রণক্ষেত্রের চেহারা নেয়। উত্তেজিত জনতা পুলিশকে বেধড়ক মারধর করে৷ দুটি জিপে আগুন ধরিয়ে দেয়। খবর পেয়ে বিশাল পুলিশবাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে যান হুগলির গ্রামীণ অ্যাডিশনাল এসপি। তারপর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
জানা গিয়েছে, মৃত যুবক বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। এদিন সন্তানসম্ভবা স্ত্রীকে আরামবাগের একটি নার্সিংহোমে ভরতি করেন তিনি। দুপুরের দিকে পুত্র সন্তানের জন্ম দেন তাঁর স্ত্রী। সন্ধ্যায় ছেলে ও স্ত্রীকে সুস্থ দেখে বাঁকুড়ার বাড়িতে ফিরছিলেন মুরারিবাবু। গোঘাট থেকে কামারপুকুরের দিকে আসছিলেন। গোঘাটেই দাঁড়িয়েছিল পুলিশের জিপ। সেখানে গাড়ির চেকিং চলছিল। সেই সময়ই মর্মান্তিক দুর্ঘটনাটি ঘটে। পুলিশের নির্দেশে বাইক ঘোরাতে যান ওই যুবক। উলটোদিক থেকে তখন তীব্র গতিতে ছুটে আসছে অলটো। কিছু বুঝে ওঠার আগেই একটা শব্দ। অলটোর ধাক্কায় ততক্ষণে রাস্তায় ছিটকে পড়েছেন ওই যুবক। এই ঘটনার পর পুলিশ গাড়ি ঘুরিয়ে নিয়ে থানায় পালিয়ে যায়। রক্তাক্ত অবস্থায় তখনও কাতরাচ্ছেন মুরারি কর্মকার। স্থানীরাই তড়িঘড়ি তাঁকে আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে পৌঁছালে চিকিৎসকরা ওই যুবককে মৃত বলে ঘোষণা করেন। হাসপাতালে আসা লোকজন বাকিদের মৃত্যুর খবর জানাতেই গোঘাট থানা এলাকা রীতিমতো উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পুলিশের এহেন অমানবিক কর্মকাণ্ডের জেরে উত্তেজিত জনতা কামারপুকুরের রাস্তায় বিক্ষোভ অবরোধ শুরু করে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, পুলিশ ঠিক সময়ে আহত যুবককে হাসপাতালে নিয়ে গেলে তিনি প্রাণে বেঁচে যেতেন। কিন্তু পুলিশের এই অমানবিক কার্যকলাপ দেখে মানুষ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। দীর্ঘক্ষণ চলে অবরোধ। অবশেষে অবরোধ তুলতে গোঘাট থানা থেকে দু’গাড়ি পুলিশ আসে। এরপর অবরোধ তোলার চেষ্টা করলে পুলিশের সঙ্গে বচসা ও হাতাহাতি শুরু হয়ে যায়। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে পুলিশ গাড়ি ফেলে পালাতে যায়। উত্তেজিত জনতা পুলিশকে ঘিরে ধরে বেধড়ক মারধর করে। তারপর ফেলে যাওয়া জিপদুটিতে আগুনও ধরিয়ে দেয়। এলাকা রণক্ষেত্রের চেহারা নিলে ঘটনাস্থলে আসেন আরামবাগের এসডিপিও-সহ বিশাল পুলিশবাহিনী। ঘটনাস্থলে পৌঁছায় দমকলের ইঞ্জিন। প্রায় তিনঘণ্টা ধরে চলে বিক্ষোভ। গোটা ঘটনায় ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন স্থানীয়রা। তাঁদের অভিযোগ, পুলিশ এই গাড়ি চেকিংয়ের নাম করে সাধারণ মানুষকে বিপদে ফেলছে। এদিন পুলিশের নির্দেশে মুরারি কর্মকারকে মাঝরাস্তায় বাইক ঘোরাতে না হলে দুর্ঘটনাই ঘটত না। যখন দুর্ঘটনা ঘটে গিয়েছে, তখন পুলিশ দায়িত্ব এড়িয়ে পালিয়ে গেল। গোঘাটের বিধায়ক মানস মজুমদার জানান, যেকোনও মৃত্যু দুঃখজনক। ঠিক কি ঘটেছে তিনি জানেন না। তবে খোঁজ নিয়ে দেখছেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.