সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: হুগলির ‘কুর্সি’তে কে বসছেন? বুথ ফেরত সমীক্ষার উলাট পুরাণ! এক্সিট পোল বলেছিল, রাজনীতির ময়দানে নবাগতা রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হারিয়ে জিতবে লকেট চট্টোপাধ্যায়। তবে ৪ জুন ফলপ্রকাশের দিন বেলা বাড়তেই অঙ্ক গেল বদলে। ভোটগণনায় ক্রমাগত একের পর এক দফায় পদ্মপ্রার্থীর থেকে মার্জিনে এগিয়ে যান তিনি। চব্বিশের লোকসভা ভোটের প্রার্থী ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই রচনা বন্দোপাধ্যায় বনাম লকেট চট্টোপাধ্যায়ের ‘মেগা ফাইটে’ নজর ছিল। কারণ গত লোকসভা ভোটেই এই আসন হাতছাড়া হয় তৃণমূলের। তবে এবার স্টার ম্যাজিকেই হুগলি আসন পুনরুদ্ধার করার রণকৌশলী সাজিয়েছিল তৃণমূল। ফলেও গেল ‘দিদি’র ইচ্ছে। রচনাকেই ‘দিদি নম্বর ওয়ান’ বানালেন হুগলির বাসিন্দারা।
স্বাধীনতার পর থেকেই হুগলি কেন্দ্রে একছত্র প্রভাব ছিল বামপন্থীদের। অন্তত সেটা আটের দশকের গোড়া অবধি। তবে ১৯৮৪ সালে এই কেন্দ্রে কংগ্রেস খাতা খুললেও পরের লোকসভা ভোটে আর পত্রপাঠ বিদেয় নিতে হয়েছে সিপিএমের রূপচাঁদ পালের হাত ধরে। তবে বাংলায় নতুন শক্তি হিসেবে তৃণমূলের উত্থানের পরই বাম শিবিরের শক্তি ক্রমশ ক্ষয় হতে হতে একেবারে তলানিতে এসে ঠেকে! রাজ্য ‘রক্তশূন্য’ হওয়ার পাশাপাশি এখানকার লাল রংও ফিকে হয়। পাশা পালটে যায় ২০০৯ সালে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে দু’ বার সাংসদ হন রত্না দে নাগ। তবে উনিশের লোকসভা ভোটেই বিজেপি প্রার্থী লকেট চট্টোপাধ্যায় বিরাট মার্জিনে হারান রত্নাকে। অতঃপর রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাঁধেই পুরনো আসন পুনরুদ্ধারের গুরুদায়িত্ব সঁপে দিয়েছিলেন দলনেত্রী মমতা। ফলে এই পিচে ‘দিদি নম্বর ওয়ান’-এর লড়াই কঠিন ছিল।
কোন অঙ্কে দুঁদে নেত্রী লকেটকে টেক্কা দিয়ে কিস্তিমাত করলেন রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়? বিজেপি প্রার্থী লকেট চট্টোপাধ্যায় গত ভোটে জেতার পর থেকেই তাঁকে আর তাঁর সংসদীয় কেন্দ্রে তেমনভাবে দেখা যায়নি বলে একটা ক্ষোভ জমেছিল সাধারণ মানুষের মধ্যে। এমনকী পঞ্চায়েত ভোটের প্রচারে এসে ক্ষোভের মুখেও পড়তে হয়েছিল লকেটকে। তাঁর নামে নিখোঁজ পোস্টারও পড়ে বহু জায়গায়। এছাড়াও বিজেপির আরও বড় মাথা ব্যাথার কারন গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। হুগলি লোকসভা কেন্দ্রে লকেট নিজের নাম নিজেই ঘোষণার পরেই দলের কর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। তাই এবার রচনা বন্দোপাধ্যায়কে তৃণমূল প্রার্থী ঘোষণা করার পর থেকেই কিছুটা হলেও হুগলিতে পদ্মপ্রার্থী লকেট চট্টোপাধ্যায় ব্যাকফুটে ছিলেন। তবে প্রচারের ময়দানে এককালের সিনে ইন্ডাস্ট্রির সতীর্থ বা প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী রচনাকে ঝাঁজালো কথায় বিঁধতে ছাড়েননি লকেট। শেষমেষ ‘জনতা জনার্দন’-এ বিশ্বাসী রচনাই জয়ের হাসি হাসলেন। “জয়ই জবাব। নতুন করে কিছু বলার নেই”, লকেটকে হারানোর পর প্রথম প্রতিক্রিয়া রচনার।
প্রচারের ময়দানে মুখ খুলেই ট্রোল-মিমের বন্যা বইয়ে দিয়েছিলেন। নিন্দুকদের প্রশ্ন, হাসির খোরাক দিয়েই কি ‘দিদি’কে হুগলির আসন ফিরিয়ে দিলেন রচনা? কখনও হুগলির কারখানার ধোঁয়া আবার কখনও বা দইয়ের প্রশংসা করে ট্রোল-মিমের শিকার হয়েছিলেন রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবু ইন্ডাস্ট্রির এককালের সতীর্থ লকেট চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে হুগলির কঠিন পিচে তাঁর ব্লকবাস্টার প্রচার নজর কেড়েছে। নির্বাচনী ফলাফলের আগের রাতে ঈশ্বরের হাতেই ভাগ্যগণনার দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছিলেন তৃণমূল প্রার্থী রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে ৪ জুন সাতসকালে এইচআইটি কলেজের গণনাকেন্দ্রে প্রবেশের আগে তাঁকে খানিক মনমরা দেখালেও হুগলিতে শেষ হাসি হাসলেন রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়ই।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.