ছবি : প্রতীকী
দিব্যেন্দু মজুমদার, হুগলি: সাপের ছোবলে কিশোরীর মৃত্যু। সেই মৃতদেহ দেড় দিন ধরে রেখে ওঝা দিয়ে ঝাড়ফুঁক করানোর অভিযোগ উঠল। ঘটনাটি ঘটেছে হুগলির পাণ্ডুয়া থানার ইটাচুনা গ্রামের পদ্মপুকুর এলাকায়। অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা নথিভূক্ত করেছে পাণ্ডুয়া থানার পুলিশ।
জানা গিয়েছে, পদ্মপুকুরের বাসিন্দা রাজু সরেনের দশ বছরের মেয়ে বৃষ্টিকে গত বুধবার সাপে কামড়ায়। এই অবস্থায় প্রথমে বৃষ্টিকে ইটাচুনা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ও পরে চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে ভরতি করা হয়। সেখানে চিকিৎসা চলাকালীন চিকিৎসায় সাড়াও দিচ্ছিল বৃষ্টি। কিন্তু হঠাৎই রাজু বন্ডে সই করে শুক্রবার তাঁর মেয়েকে হাসপাতাল থেকে বাড়ি নিয়ে চলে যান। বাড়ি ফেরার পথে স্থানীয় এক কবিরাজের কাছ থেকে কিছু ওষুধ কেনেন রাজু। সেই সময় দাবি করেছিলেন, তাঁর মেয়ে ভালই আছে। কিন্তু শনিবার দুপুরের পর থেকে হঠাৎ করে বৃষ্টির শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। স্থানীয় এক চিকিৎসককে খবর দেওয়া হলে তিনি এসে শিশুটিকে স্যালাইন দেন। কিন্তু শনিবার রাতের পর থেকেই শিশুটির আর কোনও সাড়াশব্দ পাওয়া যায়নি।
রবিবার সকালে স্থানীয় ইটাচুনা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বৃষ্টিকে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এরপর রাজু তার মেয়ের মৃতদেহ বাড়িতে নিয়ে এসে মেঝেতে মাদুর পেতে শুইয়ে দেয়। মৃত শিশুটির হাত থেকে তখনও স্যালাইন খোলা হয়নি। এরকম অবস্থায় পরিবারের লোকেরা ওঝাকে খবর দেন। রাজুর দাবি, ওঝা আসার পর তাঁর মেয়ে পা নেড়ে সাড়াও দেয়। তাঁদের বিশ্বাস ছিল, সাপের কামড়ে মৃত্যু হলে একমাত্র ওঝাই মৃত ব্যক্তির প্রাণ ফিরিয়ে দিতে পারে। সোমবার দুপুর পর্যন্ত কিশোরীর মৃতদেহ বাড়িতে রেখে চলে ঝাড়ফুঁক।
স্থানীয়রা বিষয়টি জানতে পেরেই পাণ্ডুয়া থানায় খবর দেন। এরপর পাণ্ডুয়া থানার পুলিশ এসে মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য পাঠায়। পাণ্ডুয়া পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি সঞ্জয় ঘোষ জানান, এটা অত্যন্ত দুঃখের যে এখনও মানুষ এই অন্ধ বিশ্বাস আঁকড়ে পড়ে রয়েছে। বন্ডে সই করে যদি হাসপাতাল থেকে ছুটি করিয়ে না নিয়ে আসা হত তবে হয়তো মেয়েটি বেঁচে যেত। একটি মানুষের আরও বেশি সচেতন হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন সঞ্জয়বাবু।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.