ছবিতে হাসপাতালের বেডে শেফালি পাল
দিব্যেন্দু মজুমদার, হুগলি: হারিয়ে যাওয়া মাকে ঘরে ফেরাল রেডিও। সেই রেডিও, আজকের স্মার্টফোনের যুগে যার কথা মনে পড়ে মহালয়ার ভোরে। বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠে মহালয়া শুনতে বাড়ির মান্ধাতার আমলের রেডিওটির ঝাড়পোঁছ শুরু হয়। রেডিওর হাত ধরে আজও দেবীপক্ষের সূচনা হয়ে বাংলার ঘরে ঘরে। সেই রেডিওর হাত ধরেই মাতৃদেবীকে ফিরে পেলেন হাওড়ার পালবাড়ির বংশধররা। দেবীপক্ষের আগেই সন্তানদের সঙ্গে হাওড়ার জয়পুর থানার ভাটোরা গ্রামের বাড়িতে ফিরে গেলেন শেফালিদেবী (৭০)। সৌজন্যে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা হ্যাম রেডিওর পশ্চিমবঙ্গ শাখার সদস্যরা। বুধবার অভিনব ঘটনার সাক্ষী থাকলেন আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালের প্রত্যেকে।
মাকে ফিরে পেয়ে রেডিও-র সদস্যদের ধন্যবাদ দিতে ভোলেননি বৃদ্ধার মেয়ে শিখা পাল। তিনি জানান, তাঁর মায়ের ব্রেন স্ট্রোক হওয়ার পর থেকে মাঝে মধ্যেই স্মৃতি লোপ পায়। তাই চিকিৎসকরাও চোখে চোখে রাখতে বলেছিলেন। সেই মতোই চলছিল। কিন্তু গত শনিবার সকালে আচমকাই শেফালিদেবী বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। পরে খোঁজ করতে গিয়ে স্থানীয়দের কাছ থেকে জানতে পারেন, বৃদ্ধাকে রাজহাটি ভীমতলার ট্রেকারে উঠতে দেখেছেন। এদিকে দীর্ঘক্ষণ বৃদ্ধা ফিরে না আসায় পরিবারের সকলেই খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। গত চার-পাঁচ দিন ধরে খোঁজাখুঁজিতে নিরাশ হয়ে পালবাড়িতে কান্নার রোল পড়ে যায়। এক প্রকার আশা ছেড়েই দিয়েছিলেন সকলে।
এদিকে শনিবার রাতেই শেফালিদেবীকে খানাকুলের বন্দর অঞ্চলে একটা গাছের তলায় অচৈতন্য অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। খানাকুল থানার পুলিশ বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করে। হাসপাতালে চিকিৎসায় বৃদ্ধা সুস্থ হয়ে উঠলেও তাঁর নাম, বাড়ির ঠিকানার কিছুই বলতে পারেননি। কিন্তু সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়ার পর তাঁকে তো আর হাসপাতালে রাখা যাবে না। তাই মানবিক কারণে বুধবার হাসপাতাল সুপার ডাঃ শিশির কুমার নস্কর ওই বৃদ্ধার পরিবারের খোঁজে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা হ্যাম রেডিওর শরণাপন্ন হন। পশ্চিমবঙ্গ শাখার রেডিও ক্লাবের সদস্যদের বিষয়টি জানানো হয়। এরপর মাত্র আড়াই ঘন্টার মধ্যে বৃদ্ধার পরিবারের খোঁজ পেয়ে যায় সংস্থাটি। পালবাড়িতে খুশির খবর পৌঁছায়।
কেমন করে এই অসাধ্য সাধন হল?
এই প্রসঙ্গে সংস্থার কর্ণধার অম্বরীশ নাগ বিশ্বাস জানান, তাঁরা ওই বৃদ্ধার ছবি নিয়ে খানাকুল বন্দরের যেখানে বৃদ্ধাকে পাওয়া গিয়েছিল সেখানে যান। এলাকাবাসীর ঘরে ঘরে গিয়ে ছবিটি দেখান। তাঁদেরই মধ্যে এক গৃহবধূর শ্বশুরবাড়ি ভাটোরা গ্রামে। তিনি বৃদ্ধাকে দেখেই চিনতে পারেন। এরপর ওই গৃহবধূর থেকে শেফালিদেবীর বাড়ির ঠিকান নিয়ে সোজা ভাটোরা গ্রাম। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তরফে খবর পেয়ে বৃদ্ধার ছেলেমেয়েরা আরামবাগ হাসপাতাল ছুটে আসেন। পুজোর আগে মাকে খুঁজে পেয়ে আত্মহারা সন্তানরা। এদিকে বৃদ্ধা ছেলেমেয়েকে দেখেই চিনতে পারেন। সঙ্গেসঙ্গে বাড়ি ফেরার জন্য কান্নাকাটি শুরু করে দেন। সন্তানদের চিনতে পারলেও বাড়ির ঠিকানা মনে করতে পারেননি বৃদ্ধা। মেয়ে শিখা পাল বলেন, ‘কোনওদিন আর মাকে ফিরে পাব, ভাবতে পারিনি। তবে যে মানুষগুলোর জন্য আজ মাকে ফিরে পেলাম তাঁদের ঋণ জীবনেও শোধ করতে পারব না।’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.