দিব্যেন্দু মজুমদার, হুগলি : এ যেন উলটপুরাণ। অন্যায় করে আইন রক্ষককে খুনের হুমকির অভিযোগ উঠল ডিএসপির বিরুদ্ধে। প্রথমে আইনজীবীর গাড়িতে ধাক্কা মারল ডিএসপির গাড়ি। অভিযোগ, গাড়ি থেকে নেমে প্রতিবাদী আইনজীবীর মাথায় রিভলবার ঠেকিয়ে শ্যুট করে দেওয়ার হুমকি দিলেন ডিএসপি। চলল বেধড়ক মারধর। টাকা ও সোনার হার ছিনিয়েও নেওয়া হল আক্রান্ত আইনজীবীর গলা থেকে। বুধবার রাতে চমকে দেওয়া ঘটনাটি ঘটেছে হুগলির ভদ্রেশ্বর স্টেশন লাগোয়া সাবওয়ের কাছে। পথদুর্ঘটনা রুখতে রাজ্য জুড়ে সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফের প্রচার চলছে। এই সময় আইনরক্ষকের উপরে সরকারি আধিকারিকের এহেন চড়াও হওয়ার ঘটনায় ক্ষোভে ফুঁসছে হুগলির আইনজীবী মহল। এই মারধরের ঘটনার প্রতিবাদে কর্মবিরতি পালন করলেন চন্দননগর মহকুমা আদালতের আইনজীবীরা।
আক্রান্ত আইনজীবীর নাম শুভদ্যুতি পান। তিনি চন্দননগর মহকুমা আদালতে প্রাকটিস করছেন। মারমুখী ডিএসপির হাত থেকে ছাড়া পেয়ে প্রথমে হাসপাতালে যান ওই আইনজীবী। প্রাথমিক চিকিৎসার পর তিনি ভদ্রেশ্বর থানায় যান। সেখানে ডিএসপি শোভন অধিকারী ও তাঁর গাড়ি চালকের নামে অভিযোগ দায়ের করেছেন। এদিকে সহকর্মীকে মারধরের খবর ছড়িয়ে পড়তেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন চন্দননগর মহকুমা আদালতের আইনজীবীরা। অবিলম্বে অভিযুক্ত ডিএসপি ও তাঁর চালককে গ্রেপ্তারের দাবিতে সরব হয়েছেন শুভদ্যুতিবাবুর সহকর্মী ও ল ক্লার্করা। এই ঘটনার প্রতিবাদে মহকুমা আদালতে কর্মবিরতিও চলল বৃহস্পতিবার।
জানা গিয়েছে, বুধবার রাতে ভদ্রেশ্বরের সারদপল্লিতে তাঁর একজন সিনিয়রের বাড়িতে গিয়েছিলেন ওই আইনজীবী। রাত নটা নাগাদ সেখান থেকেই বেরিয়ে মানকুণ্ডুর বাড়িতে ফিরছিলেন। ঘটনাটি ঘটে তখনই। ভদ্রেশ্বর স্টেশনের সাবওয়ের কাছে উলটোদিক থেকে ডিএসপি শোভন অধিকারীর গাড়িটি আসছিল। অভিযোগ, কোনওরকম নিয়মের তোয়াক্কা না করে ডিএসপির গাড়ি তাঁর মোটরসাইকেলের ডিকিতে ধাক্কা মারে। তিনি এই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, এরকমভাবে গাড়ি চালিয়ে মানুষ মেরে চলে যাবেন। শুধু এই কথাটুকু বলার ফল যে এতটা মারাত্মক হবে তা কল্পনাতেও ভাবতে পারেননি ওই আইনজীবী। অভিযাগ, এরপরই ওই পুলিশ আধিকারিক গাড়ি থেকে নেমে পিছন দিক থেকে তার জামার কলার চেপে ধরে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। মারধরও শুরু হয়। শুভদ্যুতিবাবু আইনের রক্ষক হয়ে ডিএসপির এহেন আচরণে স্তম্ভিত হয়ে যান। তিনি এর প্রতিবাদ করতেই ওই পুলিশ আধিকারিক তাঁর সার্ভিস রিভলবার বের করে মাথা লক্ষ্য করে বলেন, উঁচু গলায় কথা বললে তাঁকে শ্যুট করে দেবেন। প্রাণভয়ে ভীত শুভদ্যুতিবাবু তখন বাঁচার রাস্তা খুঁজছেন। এই সময় ডিএসপি তাঁর গলা থেকে দেড় ভরি ওজনের সোনার হার ছিঁড়ে নেন। গাড়ির চালক তাঁর মানি ব্যাগ থেকে ১১ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে চলে যায়।
এরপরেই বিধ্বস্ত শুভদ্যুতিবাবু প্রথমে চন্দননগর মহকুমা হাসপাতালে যান। প্রাথমিক চিকিৎসার পর সহকর্মী আইনজীবীদের সঙ্গে পুরো বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন। রাত ১১ টার সময় ভদ্রেশ্বর থানায় ডিএসপি ও তাঁর চালকের বিরুদ্ধে মারধর, প্রাণে মারার হুমকি, সোনা ও টাকা পয়সা ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ দায়ের করেছেন। এই ঘটনার প্রতিবাদে সরব হয়েছেন চন্দননগর মহকুমা আদালতের আইনজীবীরা। তাঁরা এদিন আদালতের কাজ বন্ধ করে দেন। পাশাপাশি শ্রীরামপুর মহকুমা আদালতের আইনজীবীরাও এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেন। অভিযুক্ত পুলিশ আধিকারিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গহণের দাবিতে শ্রীরামপুরে চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেটের এসিপি মল্লিকা গর্গের অফিসের সামনে বিক্ষোভ দেখান। অন্যদিকে এই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে এদিন দুপুরে চুঁচুড়া আদালতের আইনজীবীরাও আদালত চত্বরে মিছিল করেন। এ বিষয়ে চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেটের পুলিশ কমিশনার অজয় কুমার জানান, গাড়িতে ধাক্কা লাগাকে কেন্দ্র করে তর্ক বিতর্ক হয়েছে।ডিএসপি ও আইনজীবী দুজনেই দুজনের বিরুদ্ধে থানায় পাল্টা অভিযোগ দায়ের করেছেন। দুজনেরই অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এদিকে এতকিছু হয়ে গেলও বিষয়টি নিয়ে মুখ খোলেননি অভিযুক্ত ডিএসপি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.