দিব্যেন্দু মজুমদার, হুগলি: ডান দিকের মাড়ির দাঁত তোলার বদলে ভুল করে বাঁ দিকের মাড়ির দাঁত তুলে দিলেন দন্ত চিকিৎসক। কিন্তু চিকিৎসকের এই ভুলের মাশুল রোগীকে কেন দিতে হবে। রোগীর মতে, এই ধরনের ভুলের কোনও ক্ষমা নেই। তাই ওই চিকিৎসকের শাস্তির দাবি জানিয়ে থানায় এফআইআর দায়ের করলেন গৃহবধূ। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনটি ঘটেছে চুঁচুড়ায় এক দাঁতের ডাক্তারের চেম্বারে।
অভিযোগকারী প্রণতি সরকার পাণ্ডুয়ার বাসিন্দা। অভিযুক্ত দাঁতের ডাক্তারের নাম দিলীপ কুমার ঘোষ। গত ১৯ জানুয়ারি চুঁচুড়ায় ওই দাঁতের ডাক্তারের চেম্বারে দাঁত তুলতে গিয়ে চরম দুর্ভোগের শিকার হন গৃহবধূ। প্রণতি দেবী জানান ডান দিকের দাঁতের ক্যাভিটির জন্য তার বহুদিন ধরে যন্ত্রণা হচ্ছিল। তিনি ডা. দিলীপ ঘোষের কাছে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসা করাচ্ছেন। এর জন্য তাকে ফিলিং করার পরামর্শ দেন। কিন্তু ভয়ে সেই সময় ফিলিং করাননি। কিন্তু অনেক দিন পর ফের যন্ত্রণা শুরু হওয়ায় ডাক্তারবাবুর কাছে যান এবং তার যন্ত্রণা কমার ওষুধও দেন। কদিন বাদে তাঁকে এসে দাঁত তুলে যেতে বলেন।
১৯ জানুয়ারি দাঁত তুলতে এসে তিনি বিচিত্র অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হন। ডাক্তারবাবু তাকে ডান দিকের মাড়িতে ইঞ্জেকশন দেওয়ার পর ওই জায়গাটা অবশ হয়ে যায়। তারপর দশ মিনিট বাদে উনি তাঁর ডান দিকের দাঁত দুটো না তুলে বাঁ দিকের দাঁত তোলার চেষ্টা করতে থাকেন। প্রচণ্ড যন্ত্রণা হওয়া শুরু হলে তিনি চিৎকার করে ওঠেন। ডাক্তারবাবুকে বলেন, ‘আপনি যে দিকে ইঞ্জেকশন দিলেন সেই দিকের দাঁত না তুলে অন্য দিকের দাঁত তুলছেন।’ প্রণতি দেবীর অভিযোগ, ডাক্তারবাবু সেই সময় তাকে ধমক দিয়ে বলেন, ‘আপনি প্রথম থেকেই ছটফট করছেন, চুপ করে বসুন।’ এরপর কোনও কথা না শুনে তার বাঁ দিকের দু’টি দাঁত জোর করে তুলে দেন ডাক্তারবাবু। তখন তিনি যন্ত্রণায় কুঁকড়ে যাচ্ছিলেন। ডাক্তারবাবু কোনও কথাই শুনছিলেন না। সেই সময় তার ছেলে শুভাশিস থানার দ্বারস্থ হওয়ার কথা বললে ডাক্তারবাবু নিজেদের মধ্যে বিষয়টি মিটিয়ে নেওয়ার কথা বলেন। কিন্তু প্রণতি দেবী কোনও আপসে রাজি নন। তিনি চান এই অন্যায়ের বিচার হোক। তাই তিনি মঙ্গলবার চুঁচুড়া থানায় ডা. দিলীপ ঘোষের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছেন।
অন্যদিকে, অভিযুক্ত ডাক্তার দিলীপ কুমার ঘোষ অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, ‘ওনার চারটি দাঁতই তোলার কথা ছিল। যেহেতু ডান দিকের সোয়েলিং প্রচন্ড ছিল তাই একটা কনভেনশনাল অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে সেই সোয়েলিংটা কমানোর চেষ্টা করি। কিন্ত তাতে সোয়েলিংটা না কমায় একটি হায়ার অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করে সোয়েলিংটা কমে গেলেও তা তখনও তোলার মতো পরিস্থিতি হয়নি।’ তাই তখন ৪০ বছরের অভিজ্ঞতা থেকে তিনি তখন বাঁ দিকের দু’টি দাঁত তোলেন। ডাক্তারবাবু এও বলেন, ওনার দাঁত তোলার সময় যদি যন্ত্রণাই হবে তাহলে উনি চিৎকার করতেন। কিন্তু উনি কোনও চিৎকারই করেননি, বরং যথেষ্টই স্বাভাবিক ছিলেন। অন্যদিকে, গৃহবধূ প্রণতি সরকার ডাক্তারের এই ভুলের জন্য দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.