স্টাফ রিপোর্টার, বর্ধমান: মগরাহাট, গার্ডেনরিচের পর বর্ধমানের গলসি৷ ফের বিষ চোলাই মদের বলি হলেন ছয়জন৷ আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি আরও ২৬ জন৷ মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন হাসপাতালের চিকিৎসকরা৷ ঘটনার অভিযানের পাশাপাশি তদন্ত শুরু করেছে জেলা প্রশাসন৷
গলসি থানার রামগোপাল ও সংলগ্ন তোড়কোনা গ্রামে চোলাই মদের রমরমা কারবার দীর্ঘদিনের৷ গত সপ্তাহেই সেখানে অভিযান চালানো হয়৷ কিন্তু তারপরও বন্ধ হয়নি এই অবৈধ কারবার৷ সোমবার তোড়কোনা গ্রামের কেলে বাইড়ি (২২) অসুস্থ হয়ে পড়েন৷ পুরষায় গলসি-১ ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করার পর মৃত্যু হয় তাঁর৷ বিকেলে তাঁর সৎকারের পর তোড়কোনার বাউড়ি পাড়ার আন্না বাউড়ির ভাটিতে যান শবযাত্রীরা৷ সেখানে বসে চোলাই পান করেন৷ কিন্তু কে জানত সেই চোলাই বিষ!
রাতের অন্ধকার বাড়তেই চোখেও অন্ধকার দেখতে শুরু করেন সেখানে চোলাই খাওয়া লোকজন৷ পেটে ব্যথা, বমি, পায়খানাও শুরু হয় অনেকের৷ রাত থেকেই একে একে তিরিশ জনেরও বেশি মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়েন. তাঁদের স্থানীয় ব্লক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়৷ ভর্তির কিছু সময় পরেই মঙ্গলবার ভোরে সেখানে মৃত্যু হয় সোনা বাউড়ির (২৫)৷ তিনি আবার ভাটি মালিক আন্না বাউড়ির ভাইপো৷ সোনার পর সন্ন্যাসী রুইদাস (২৮), কেষ্ট বাউড়ি (৪০), কেলে রুইদাস (৩২) ও রবি দাসবৈরাগ্য (৪৫)-র মৃত্যু হয় হাসপাতালে৷ কেলে রুইদাস ও রবি দাসবৈরাগ্য রামগোপালপুর রউদাস পাড়ার বাসিন্দা৷ বাকিরা তোড়কোনা বাউড়ি পাড়ার বাসিন্দা৷ পুরষায় ব্লক হাসপাতালে এদিন দুপুর পর্যন্ত ২৬ জন ভর্তি হন৷ তাঁদের মধ্যে দু’জনকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতলে রেফার করা হয়েছে৷
বিষ চোলাই খেয়ে একসঙ্গে ছয় জনের মৃত্যু ও বহু মানুষের অসুস্থ হয়ে পড়ার ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর গ্রামে ছুটে গিয়েছেন প্রশাসনিক কর্তারা৷ গলসি-১ ব্লক বিডিও তারকনাথ দাস, ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক মহাপ্রসাদ পাল, আবগারি দফতরের আধিকারিক অসিতকুমার দাস-সহ বিভিন্ন্ কর্তারা গ্রামে যান এদিন সকালে৷ ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক জানিয়েছে, প্রাথমিকভাবে বিষ চোলাই মদ খেয়ে মৃত্যু ও অসুস্থতার ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করা হচ্ছে৷ বিডিও জানিয়েছে, ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করা হচ্ছে৷ বিষ চোলাই খেয়ে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি গঙ্গা বাউড়ি, মিঠু বাউড়িরা জানান, কেলে বাউড়ির সত্কারের পর আন্নার ভাটিতে চোলাই খেয়েছিলেন অনেকে৷ তারপরই সকলেই অসুস্থ হয়ে পড়েন৷
গ্রামবাসীদের অভিযোগ, রামগোপালপুর-তোড়কোনা গ্রামে প্রায় ২৫টি বেআইনি চোলাই ভাটি রয়েছে৷ দীর্ঘদিন ধরে এই বেআইনি কারবার চলছে৷ আবগারি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ২৯ ডিসেম্বর গ্রামে অভিযান চালিয়ে ভাটি ভেঙে দেওয়া হয়েছিল৷ তার পর ফের নতুন করে গজিয়ে ওঠে ভাটিগুলি৷ কয়েকবছর আগে মগরাহাটে বিষ চোলাই খেয়ে শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছিল৷ তার পর গার্ডেনরিচেও বিষ চোলাইয়ের শিকার হয়েছিলেন বহু মানুষ৷ এবার বর্ধমানের গলসিতে বিষ চোলাই খেয়ে একসঙ্গে প্রাণ গেল ছয়জনের৷ মৃত্যুর প্রহর গুণছেন আরও অনেকে৷ ঘটনার পর নড়েচড়ে বসেছে জেলা প্রশাসন৷ ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন জেলা শাসক সৌমিত্র মোহন৷ চোলাই কারবারিদের বিরুদ্ধেও কড়া ব্যবস্থা নিতে চলেছে প্রশাসন৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.