ছবি: প্রতীকী।
দেবব্রত মণ্ডল, বারুইপুর: মদের দোকান বন্ধ। গ্রামবাংলায় রসিকজনকে ভরসা জোগাচ্ছে হাঁড়িয়া। যার খোঁজে সকাল থেকে ভিড় জমছে আদিবাসী গ্রামে। লকডাউনের জেরে টানা প্রায় দু’সপ্তাহ বন্ধ রয়েছে মদের দোকান। প্রথমদিকে কয়েকদিন কিছু লুকিয়ে—চুরিয়ে মদ বিক্রি হচ্ছিল। লকডাউনের সুযোগ নিয়ে কালোবাজারি করার জন্য কেউ কেউ দোকান থেকে কয়েকপেটি মদ কিনে মজুত করেছিল বাড়িতে। লকডাউনের বাজারে বাড়তি দাম দিয়ে তা কিনছিলেনও মদ্যপায়ীরাও। এনিয়ে রাজ্যের নানা জায়গায় গন্ডগোল, মারামারি বেধেছে, চলেছে গুলিও। তারপরই কড়া হাতে মদের বেআইনি বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন। কিন্তু তাতে কি আর দমানো যায় মদ্যপ্রেমীদের? আদিবাসীদের চিরকালীন পানীয় হাঁড়িয়ার মধ্যে তাঁরা খুঁজে নিয়েছেন কাঙ্ক্ষিত রসের আস্বাদন। আর তাতে অবশ্য কপাল খুলেছে হা ঘরে দরিদ্র আদিবাসীদেরও। গত ক’দিনে বেজায় বিক্রি বেড়েছে হাঁড়িয়ার। প্রত্যন্ত আদিবাসী গাঁয়ে তাই এখন খুশির বসন্ত!
জানা যাচ্ছে, লকডাউনে মদের দোকান বন্ধ থাকায় দক্ষিণ ২৪ পরগনার গ্রামে গ্রামে বেড়েছে হাঁড়িয়া বিক্রি। যার পরিচয় আদিবাসীদের চিরাচরিত নেশাদ্রব্য হিসেবে। কোনও সামাজিক অনুষ্ঠান হোক বা রোজকার সান্ধ্য আড্ডা, আদিবাসী সমাজে সবেতেই আবশ্যিক উপস্থিতি হাঁড়িয়ার। এবার লকডাউনের গুঁতোয় হাঁড়িয়ার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছেন শহুরে বাবুরাও! হাঁড়িয়া বানানোর প্রক্রিয়াটি বেশ পরিশ্রম ও সময়সাপেক্ষ। এক্ষেত্রে, প্রথমে বড়ি বানাতে হয় যষ্টিমধু, চিরতা, কালমেঘ, গুলঞ্চ গাছের শিকড় ও বুড়ি পানের শিকড় দিয়ে। এই সমস্ত ভেষজ সামগ্রী গুঁড়ো করে আতপ চালের সঙ্গে মিশিয়ে ছোট ছোট নাড়ুর আকারে গড়ে রোদে শুকোতে হয়। এই ‘বড়ি’ই হল হাঁড়িয়া তৈরির প্রাণ। এবার চাল সিদ্ধ করে ভাত তৈরি করে ঠান্ডা হলে ওই বড়ি গুঁড়ো করে ছড়িয়ে দিতে হবে ভাতের হাঁড়িতে। এরপর একটি মাটির হাঁড়িতে ভরে ওই ভাত তিন রাত রেখে দিলেই হাঁড়িয়া একদম তৈরি। এবার জল মিশিয়ে ভাল করে ফেটিয়ে নিয়ে পরিষ্কার কাপড়ে ছেঁকে চুমুক মারলেই ‘স্বর্গপ্রাপ্তি’।
এক হাঁড়িয়া বিক্রেতার কথায়, “হাঁড়িয়া মূলত আদিবাসীদের ঘরোয়া নেশার পানীয়। এজন্য হাঁড়িয়ার মধ্যে কোনও রাসায়নিক মেশানো হয় না। প্রকৃতি থেকে পাওয়া গাছ-গাছড়ার শিকড়-বাকড় থেকেই হাঁড়িয়া প্রস্তুত করা হয়।” তাঁর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে লকডাউনের কারণে এই হাঁড়িয়ার চাহিদা আচমকা প্রবল বেড়ে গিয়েছে। সূত্রের খবর, দূর—দূরান্ত থেকে আদিবাসী পাড়াগুলিতে হাঁড়িয়ার জন্য ভিড় জমেছে। শুধু তাই নয়, হাঁড়িয়া কিনে বোতলে ভরে নিয়ে যাচ্ছেন বহু ক্রেতা। মোটর সাইকেলে করে এসে বোতলবন্দি সেই হাঁড়িয়া পাড়ি দিচ্ছে বেশ কয়েক কিলোমিটার দূরের পথও।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.