শ্রীকান্ত পাত্র, ঘাটাল: এবার বঙ্গে আক্রান্ত হিন্দু সন্ন্যাসী! ঘটনাস্থল ঘাটালের ১ নং ব্লকের রঘুনাথপুর। হিরণ্ময় গোস্বামী মহারাজের উপর হামলা করে তাঁর জটা-দাড়ি সব কেটে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। সোমবার সন্ধ্যার ঘটনা ঘিরে তীব্র চাঞ্চল্য তৈরি হয় এলাকায়। শেষমেশ মহারাজকে উদ্ধার করে ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে স্থানীয় বিধায়কের সহায়তায় শুভেন্দু অধিকারীর হস্তক্ষেপে তাঁকে কলকাতায় নিয়ে আসা হয়েছে বলে খবর। তবে এখনও থানায় কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি। ঘটনায় সন্ন্যাসীদের নিরাপত্তা আরও বাড়ানোর দাবি তুলেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। এক্স হ্যান্ডলে এই ঘটনার সঙ্গে তিনি বাংলাদেশে চিন্ময় প্রভুর তুলনা করেছেন।
ওপার প্রভু চিন্ময়, আর এপার প্রভু হিরন্ময় !
বাংলাদেশের মতই পশ্চিমবঙ্গেও সনাতন ধর্মের মানুষের ধর্মাচরণের স্বাধীনতার অধিকার দিন কে দিন সঙ্কুচিত হচ্ছে। বাংলাদেশ যেমন জেহাদিদের মুক্তাঞ্চলে পরিণত হয়েছে তেমনই পশ্চিমবঙ্গেও জেহাদিদের অবাধ আচরণের অনুমতি দিয়ে রেখেছেন মাননীয়া। তাই এদের… pic.twitter.com/crtljBXjt5
— Suvendu Adhikari (@SuvenduWB) April 1, 2025
ঘটনার সূত্রপাত দিন কয়েক আগে। তমলুক আশ্রমের সন্ন্যাসী হিরণ্ময় গোস্বামী মহারাজকে ঘাটালের রঘুনাথপুরে নিজের বাড়িতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন সেখানকার সম্ভ্রান্ত পরিবারের মালিক শক্তিপদ মান্না। তাঁর বাড়িতে কয়েকদিন ধরে নাম সংকীর্তন, ব্রাহ্মণ ভোজন চলছিল। হিরণ্ময় মহারাজকে ভগবদ্গীতা পাঠের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। সোমবার বিকালে সেই পাঠ শেষের পর সন্ধ্যা নাগাদ এক শিষ্যকে নিয়ে গ্রাম ঘুরতে বেড়িয়েছিলেন মহারাজ। এমন সময়ই ঘটে বিপত্তি।
অভিযোগ, ওই সময় কয়েকজন দুষ্কৃতী হিরণ্ময় মহারাজ ও তাঁর শিষ্যর উপর হামলা চালায়। মারধরের পাশাপাশি সন্ন্যাসীর জটা, চুল, দাড়ি কেটে দেওয়া হয়। তাঁকে ওই অবস্থায় ফেলে চলে যায়। এমন ঘটনায় শিষ্যও প্রাথমিকভাবে অত্যন্ত আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। তিনিও কিছু করতে পারেননি। সন্ধ্যার গ্রাম তখন শুনশান। এদিকে দীর্ঘক্ষণ হিরণ্ময় মহারাজকে না দেখে খোঁজ শুরু করেন শক্তিপদবাবুর পরিবারের লোকজন। খুঁজতে খুঁজতে তাঁরা গ্রামের রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখেন তাঁকে। কোনওক্রমে উদ্ধার করে প্রথমে গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর সেখান থেকে ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালে স্থানান্তরিত করেন চিকিৎসকরা।
এই ঘটনার খবর স্থানীয় বিজেপি বিধায়ক শীতল কপাটকে ফোন করেন শক্তিপদবাবু। তিনি হাসপাতালে পৌঁছে দেখা করেন হিরণ্ময় সন্ন্যাসীর সঙ্গে। এরপর শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁর মাধ্যমে সন্ন্যাসীকে কলকাতায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানকার এক বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তিনি। এনিয়ে শীতল কপাট বলেন, ”কে বা কারা মহারাজের উপর হামলা করল, এখনও জানি না। উনি পুলিশে অভিযোগ জানাতে রাজি নন। তবে আমার মনে হয়, এটা রাজনৈতিক কিছু নয়। তাঁর উপর কোনও ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে কেউ হয়ত হামলা চালিয়েছে। হিরণ্ময় মহারাজ কয়েকদিন আগে আমাকে ফোন করে শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে যোগাযোগের জন্য বলেন। তারপর এরকম হল, কিছুই বুঝতে পারছি না।”
এমনিতে হিরণ্ময় মহারাজকে সর্বক্ষণ নিরাপত্তা দিয়ে থাকে পুলিশ। তাঁর সঙ্গে সবসময় এক সিভিক ভলান্টিয়ার ও দু’জন সশস্ত্র পুলিশ থাকে। কিন্তু সোমবার সন্ধ্যাবেলা তিনি শুধু এক শিষ্যকে নিয়েই বেড়িয়েছিলেন। সেই কারণেই হামলার টার্গেট হয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। এনিয়ে শুভেন্দু অধিকারীর বক্তব্য, ওপার বাংলায় চিন্ময় প্রভুর মতো এরাজ্যেও হিন্দু সন্ন্যাসীরা আক্রান্ত। কোনও নিরাপত্তা নেই তাঁদের। এক্স হ্যান্ডলেও সরব হয়েছেন তিনি।
ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ জানান, ”এটি সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত রেষারেষির ফল। এর সঙ্গে রাজনীতি বা গোষ্ঠী সংঘর্ষের কোনও যোগ নেই।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.