বাবুল হক, মালদহ: বয়সের ভারে ন্যুব্জ শরীর। তাই জীবনযুদ্ধে হার মেনেছেন মুসলমান ব্যক্তি। আচমকাই তাঁর মৃত্যু মানতে পারছেন না এলাকার কেউই। তাই তো মৃত্যু সংবাদ শুনে শেষবারের মতো তাঁকে দেখতে কবরস্থানে দৌড়ে গেলেন নিহতের হিন্দু প্রতিবেশীরা। ধর্মীয় আচার মেনে কবরে মাটিও দিলেন হিন্দুরা। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি যে ভারতের ঐতিহ্য তাই যেন আরও একবার চোখে আঙুল দিয়ে সকলকে জানালেন মালদহের চাঁচলের অশ্বিনপুর গ্রামের বাসিন্দারা। ভেদাভেদ ভুলে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বার্তাই দিলেন তাঁরা।
মালদহের চাঁচলের অশ্বিনপুর গ্রামের বাসিন্দা আবদুল রশিদ। পেশায় রেশন ডিলার ছিলেন তিনি। বৃহস্পতিবার সকালেই মারা যান। তাঁর মৃত্যুর খবর পেয়ে কবরস্থানে পৌঁছন হিন্দুরাও। ধর্মীয় রীতি মেনে কবরে মাটি দেন তাঁরাও। কবরস্থানে উপস্থিত বীরেন্দ্র প্রসাদ রাম বলেন, “আমার সঙ্গে দীর্ঘদিনের আলাপ ছিল আবদুল রশিদের। উনি খুব ভাল মানুষ ছিলেন। হঠাৎ করে ওনার মৃত্যুতে আমরা শোকাহত। এখানে জাতি, ধর্মের কোনও ভেদাভেদ নেই। আমরা তাঁর দেহ নিয়ে কবরস্থানে যাই। আবদুল রশিদের কবরে মাটি দিয়ে ওনার আত্মার শান্তি কামনা করেছি।” চাঁচলের বিধায়ক আসিফ মেহেবুব বলেন, “এরকমভাবেই যেন সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। এদিনের এই ঘটনাটিকে আমি কুর্নিশ জানাচ্ছি।” ওই এলাকার মাধাইহাট প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাইখুল আলম সিদ্দিকিও প্রতিবেশীর শেষযাত্রায় অংশ নেন। তিনি বলেন, “হিন্দু-মুসলিম ভাই ভাই। এই বার্তাই দেশজুড়ে পৌঁছে দিতে চাই আমরা।”
বিভেদের রাজনীতি যখন দেশের মানুষকে ধর্মের পাঁচিলে ঘিরে ফেলছে, ঠিক তখনই দক্ষিণ খোলা বারান্দার মতো জাগছে মালদহ। ধর্মীয় বিভেদের উত্তাপে ভাই-ভাইয়ের সম্পর্ক নষ্ট হতে পারে না। বরং বিভেদের উত্তাপে সম্প্রীতি আরও গভীর হয়। ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজনকারীদের গালে এ যেন নিঃশব্দে এক করাঘাত।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.