Advertisement
Advertisement
Hindu Father cremated

মানবতাই ধর্ম! রোজার মাসে মাথা মুড়িয়ে হিন্দু ‘বাবা’র শ্রাদ্ধানুষ্ঠান মুসলিম ‘ছেলে’র

ধর্মীয় সংস্কারের উর্ধ্বে গিয়ে জয় হল ভালবাসার।

Hindu 'Father' cremated by Muslim 'son' in Srirampur | Sangbad Pratidin
Published by: Suparna Majumder
  • Posted:April 13, 2022 10:02 am
  • Updated:April 13, 2022 10:02 am  

দিব্যেন্দু মজুমদার, হুগলি: ধর্মীয় সংস্কারের উর্ধ্বে গিয়ে জয় হল ভালবাসার। হল মানবধর্মের জয়। রোজার মাসে রীতিমতো নিয়ম মেনে মস্তক-মুণ্ডন করে হিন্দু বাবার শ্রাদ্ধানুষ্ঠান করে নজির স্থাপন করলেন মুসলিম ছেলে। মঙ্গলবার ঘটনাটি ঘটেছে শ্রীরামপুরে।

Hindu Father Cremation

Advertisement

কর্মক্ষেত্র থেকে অবসরের পর স্ত্রী শিপ্রা হালদারকে নিয়ে শ্রীরামপুরের দে স্ট্রিটে থাকতেন বিজ্ঞানী সুজিত কুমার হালদার। দিল্লিতে ন্যাশনাল ফিজিক্যাল ল্যাবরেটরিতে বিজ্ঞানী হিসেবে গোটা কর্মজীবন কাটিয়েছেন। একমাত্র মেয়ে চৈতালি বাগ সাইপ্রাসে থাকেন। সাড়ে চার বছর আগে হঠাৎই সুজিতবাবুর প্রস্টেট ক্যানসার ধরা পড়ে। তারপর থেকে কলকাতায় নিয়মিত চিকিৎসাও করাতেন। কিন্তু করোনাকালে (Coronavirus) বছর দুই আগে চিকিৎসার জন্য কেউই এগিয়ে আসেনি। সেই সময় শ্রীরামপুর গোপীনাথ সাহা স্ট্রিটের বাসিন্দা তথা মার্বেল মিস্ত্রি আনোয়ার আলি এই বৃদ্ধ দম্পতির পাশে দাঁড়ান।

তারপর থেকে এই দম্পতির ভাল-মন্দের দেখাশোনা থেকে শুরু করে চিকিৎসার যাবতীয় দায়িত্ব পালন করে গিয়েছেন আনোয়ার। গত ২৮ মার্চ সুজিতবাবুর মৃত্যু হয়। আনোয়ারের সঙ্গে ওই বৃদ্ধ দম্পতির এমনই এক আত্মিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল যে সুজিতবাবু মৃত্যুর আগে তাঁর স্ত্রীকে বলে গিয়েছিলেন “আনোয়ার আমার ছেলে। সে যেন মৃত্যুর পর তার মুখাগ্নি ও শ্রাদ্ধানুষ্ঠান করে।”

Hindu Father Cremation 1

[আরও পড়ুন: হোটেলে বসেই তপন কান্দুকে খুনের ছক? SDPO-সহ কয়েকজনকে জেরা সিবিআইয়ের]

হিন্দু বাবার এই শেষ ইচ্ছা পূরণ করেছে আনোয়ার। পেশায় মার্বেল মিস্ত্রি হলেও আনোয়ার জিমের প্রশিক্ষণও দেন। পাশাপাশি বিগত কুড়ি বছর ধরে বছর সাতচল্লিশের আনোয়ার বিভিন্ন সময় বহু অসুস্থ মানুষকে ভারতবর্ষের বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে তাঁদের চিকিৎসা ব্যবস্থা করেছেন। তাই মানুষ হিসেবে শ্রীরামপুরবাসীর হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন। সুজিতবাবুর মৃত্যুর পর তাঁর মুখাগ্নি করেন আনোয়ার। এরপর তার রোজা শুরু হয়ে যায়। কিন্তু নিজের ধর্ম পালনের পাশাপাশি মঙ্গলবার সনাতন ধর্ম মেনে হিন্দু বাবার শ্রদ্ধানুষ্ঠান সম্পন্ন করেন তিনি। ঘাটে গিয়ে রীতিমতো মস্তক-মুণ্ডন করেন। এমনকী রোজার মাসে আনোয়ার মাংস পর্যন্ত ছোঁননি- তাতে যে তাঁর হিন্দু পিতার শেষ কাজ অসম্পূর্ণ থেকে যাবে!

Hindu Father Cremation 2

আনোয়ার জানান, করোনাকালে বৃদ্ধ মানুষটিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার লোক ছিল না। পাড়ার লোকেদের কাছ থেকে ফোন নম্বর জোগাড় করে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তারপর থেকে নিয়মিত সুজিতবাবু ও তাঁর স্ত্রীকে দেখাশোনা করতেন। আনোয়ারের কথায়, “কখন যে ওনাদের সঙ্গে ভালবাসার বন্ধনে জড়িয়ে গিয়েছি নিজেও বুঝতে পারিনি। তাই ওই মানুষটাকে আমি নিজের আরেক বাবা বলে মনে করি। শেষ ইচ্ছার কথা আমার বাবা-মাকে জানাতে তাঁরা আমাকে জানান পৃথিবীতে মানুষের ভালর জন্য যদি কোনও কাজ করা যায় তবে সেখানে ধর্ম কোনও বাধা হয় না। তাই ওই বৃদ্ধ দম্পতির যে ভালবাসা, আশীর্বাদ পেয়েছি তা কখনও কোনও দিন শোধ করা যাবে না। তাই সবকিছু ভুলে আজকে কোনও ধর্মের অসম্মান না করেই মানবধর্ম পালন করেছি।”

সুদূর সাইপ্রাস থেকে সুজিত বাবুর মেয়ে চৈতালি বাগ এদিন বাবার শ্রাদ্ধ কাজ করতে শ্রীরামপুরে এসেছিলেন। চৈতালি জানান, তিনি দিল্লিতে বড় হয়েছেন। তাঁর বাবা বলতেন যতদিন ধর্ম মানুষের জন্য থাকে, ততদিন তা ভাল। আর যখন মানুষের জন্য ধর্ম অপরিহার্য হয়ে উঠবে তখন তা খারাপের দিকে এগিয়ে যাবে। আজকে বাবার সেই কথাগুলি তাঁর মনে পড়ছে। চিরকাল বাবা মানুষের বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন যেভাবে আজ আনোয়ার তাঁর বাবা-মায়ের পাশে দাঁড়িয়েছেন। “আজকে রোজার মধ্যেই আমরা দুই ভাই-বোন বাবার কাজ করেছি। এটা ভেবে ভাল লাগছে আমার এক ভাই আছে। আর তাঁরই টানে আবারও ছুটে আসব এই দেশে।”

[আরও পড়ুন: সাতসকালে ডোমকলে ভয়াবহ দুর্ঘটনা, বাস উলটে মৃত ১, জখম কমপক্ষে ১৮]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement