Advertisement
Advertisement

Breaking News

১৫০ বছরের পুরনো মাজার দেখভাল করে নজির হিন্দু পরিবারের

সম্প্রীতির এই ঐতিহ্য বছরের পর বছর বংশ পরম্পরায় পালিত হচ্ছে দাঁতনে৷

Hindu family taking care of Mazar in Dantan
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:November 20, 2016 10:54 am
  • Updated:November 20, 2016 10:54 am  

অংশুপ্রতিম পাল, খড়গপুর: সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য নজির গড়ল দাঁতন৷ দাঁতন-১ নম্বর ব্লকের শরশঙ্কায় একটি মাজার এই সম্প্রীতির ঐতিহ্য বহন করে চলেছে বছরের পর বছর৷

এই ব্লকের শালিকোঠা গ্রাম পঞ্চায়েতের শরশঙ্কায় একটি বিশাল দিঘি রয়েছে৷ এই দিঘির পূর্বপারে রয়েছে প্রায় ১৫০ বছরের পুরনো মাজারটি৷ সে সময় লস্কর গাজি নামে একজন সাধক পুরুষ ছিলেন৷ অনেকে তাঁকে পীরবাবা বলে সম্মান করেন৷ সেই পীরবাবা লস্কর গাজির মৃত্যুর পর তাঁকে এখানে সমাস্থিত করা হয়৷ তাঁর সেই সমাধির উপর এই মাজারটি তৈরি হয়েছে৷ কে বা কারা এই মাজারটি তৈরি করেছেন সেই ইতিহাস জানা যায়নি৷ তবে এই মাজারটি দেখভাল করে আসছে বংশানুক্রমে একটি হিন্দু পরিবার৷

Advertisement

সেই পরিবারের বর্তমান বংশধর ৬৫ বছরের প্রৌঢ় শ্রীনাথ দাস জানিয়েছেন, “আমার বাবা ঠাকুরদার আমল থেকে এই মাজারটি দেখভাল করা হচ্ছে৷” বহু বছর আগে প্রয়াত শ্রীনাথবাবুর বাবা ভগবান দাসও৷ শ্রীনাথবাবু জানিয়েছেন, প্রতিদিন সন্ধ্যায় এই মাজারটিতে জল দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করে ধূপ জ্বালানো হয়৷ আর এই কাজটি এই দাস পরিবার বংশ পরম্পরায় করে আসছেন৷ আবার এই মাজারটির পাশেই রয়েছে একটি করে শিবমন্দির, কালীমন্দির এবং শীতলামন্দির-সহ আরও কয়েকটি মন্দির৷ এই এলাকায় উভয় সম্প্রদায়ের মানুষ মিলেমিশে রয়েছেন৷ আজ পর্যন্ত বিভেদের এতটুকু ছোঁয়া স্থানীয় বাসিন্দাদের স্পর্শ করতে পারেনি৷

শুধু তাই নয়, মাজারটি খুবই জাগ্রত৷ একে কেন্দ্র করে স্থানীয় বাসিন্দাদের ভক্তি, শ্রদ্ধা, বিশ্বাস ও ভালবাসা দেখার মতো৷ “এখানে ভক্তিভরে ও বিশ্বাসের সঙ্গে কোনও কিছু প্রার্থনা করলে মনের ইচ্ছাপূরণ হবেই৷” অভিমত শ্রীনাথবাবুর৷ উদাহরণ দিতে গিয়ে তিনি নিজের জীবনের একটি ঘটনার উল্লেখ করলেন৷ তিনি জানিয়েছেন, বছর ছয়েক আগে নার্ভের রোগে আক্রান্ত তাঁর ছেলে হঠাৎ করে উধাও হয়ে যায়৷ তারপরে ছেলেকে ফিরে পাওয়ার জন্য তিনি বিকেল থেকে এই মাজারে হত্যে দেন৷ প্রচুর কান্নাকাটি শুরু করেন৷ এক সময়ে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েন৷ তখনই তাঁকে এক সিদ্ধপুরুষ স্বপ্নাদেশে বলে দেন কোথায় গেলে হারানো ছেলেকে ফিরে পাবেন৷ তারপরেই সেই স্বপ্নাদেশ মতো তিনি নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছন৷ আর ছেলেকে ফিরে পান৷ তবে শুধু এই মাজার নয়, এর লাগোয়া প্রায় শতাব্দী প্রাচীন একটি তেঁতুল গাছ রয়েছে৷

তিনি বলেছেন, এই গাছটির কেউ ক্ষতি করে না৷ কারণ, একবার এই গাছটিকে কেটে বিক্রি করার পরিকল্পনা করার কারণে দু’কিলোমিটার দূরের শালিকোঠা গ্রামের একটি পরিবারের অনেক বড় ক্ষতি হয়ে গিয়েছে প্রায় বছর দশ আগে৷ আবার এই জায়গাতে প্রতি বছর বেশ আড়ম্বরের সঙ্গে পৌষ সংক্রান্তি মেলা হয়৷ এই মেলাতে জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষ অংশগ্রহণ করে৷ এবারে পৌষমেলা শুরু হবে ১২ জানুয়ারি৷ চলবে ছয়দিন৷ এই ব্যাপারে দাঁতনের বিধায়ক বিক্রম প্রধান বলেছেন, শুধু শরশঙ্কাতে নয়৷ গোটা দাঁতনে সৌভ্রাতৃত্বের বোধ খুবই শক্তিশালী৷ এখানে সবাই মিলে সব ধরনের উৎসব পালন করেন৷

ছবি – সৈকত সাঁতরা      

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement