সুরজিৎ দেব, ডায়মন্ডহারবার: বর্ষা পড়তে না পড়তেই জেলেদের জালে উঠল ইলিশ। বৃহস্পতিবার খুলল ডায়মন্ডহারবারের নগেন্দ্রবাজারে পাইকারি মাছবাজার। টানা ৮৪ দিন পর এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম এই নিলামকেন্দ্রে ফের শুরু হল ইলিশ-সহ হরেক সামুদ্রিক মাছের নিলাম।
মরশুমের প্রথমদিন অবশ্য মাত্র ২৫ টনের মত নিলাম হয়েছে ইলিশের। লকডাউন ঘোষণার প্রথম দিনেই বন্ধ হয়েছিল আড়ত। এছাড়াও টানা দু’মাস সমুদ্রে মাছ ধরার ওপর সরকারি নিষেধাজ্ঞা। দুয়ের জাঁতাকলে পড়ে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা নিলামকেন্দ্রটি এদিন জীবাণুমুক্ত করার পরই খুলে দেওয়া হয়। নিলামকেন্দ্রে আসা সমস্ত শ্রমিক ও ক্রেতা-বিক্রেতাকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিলি করা হয় মাস্ক। কাজে ফিরতে পেরে স্বাভাবিকভাবেই খুশি আড়তদার থেকে শুরু করে মাছ ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত প্রায় হাজার দেড়েক শ্রমিক।
লকডাউনে গত ২৪ মার্চ তালা পড়েছিল নগেন্দ্রবাজার আড়তের ৬০টি স্টলে। ১৫ এপ্রিল থেকে ১৪ জুন নদী ও সমুদ্রে মাছ ধরার উপর নিষেধাজ্ঞা ছিল। সবমিলিয়ে বন্ধ ছিল ডায়মন্ডহারবারের এই মাছের আড়ত। সুলতানপুর মৎস্যবন্দরে বুধবার রাতেই ভিড়েছে কিছু ছোট ট্রলার। তেমন আশানুরূপ না হলেও বৃহস্পতিবার ডায়মন্ডহারবার আড়তে নিলাম হয়েছে ইলিশ, পমফ্রেট, ম্যাকারেল, ভোলা, ঢেলা, দুম্বা ও চিংড়ির। নিলামের পর মাছ ব্যবসায়ীরা সেসব নিয়ে কলকাতা-সহ রাজ্যের বড় বড় মাছবাজারের উদ্দেশ্যে রওনা দেন।
এই নিলামকেন্দ্রে নিলামের পর এসব সামুদ্রিক মাছ যায় আসাম, ত্রিপুরা, মহারাষ্ট্র, কেরল-সহ অনেক রাজ্যেও। প্রসেসিং ও প্যাকেটজাত করে মাছ রপ্তানি হয় চিন, হংকং, আমেরিকা ও ইউরোপের দেশগুলিতেও। তবে প্রথমদিন আড়তে তেমন মাছ না ঢোকায় কিছুটা হলেও হতাশ ব্যবসায়ীমহল। ইলিশও এসেছে অনেকটাই কম। এদিন আড়তে নিলাম হয়েছে ৫০০ গ্রাম থেকে এক কেজি ওজনের মাত্র ২০-২৫ টনের মত ইলিশ। যদিও আশা, আবহাওয়া অনুকূল হলেই রমরমা হবে ব্যবসার। ডায়মন্ডহারবারের মহকুমাশাসক জানান, করোনার কারণে সমস্ত সরকারি বিধিনিষেধ মেনেই ব্যবসা করার জন্য আড়তদার ও শ্রমিকদের সতর্ক করা হয়েছে।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার-সহ মৎস্য অধিকর্তা (মেরিন) জয়ন্ত কুমার প্রধান জানিয়েছেন, নতুন করে নিম্নচাপ ঘনীভূত হওয়ায় গভীর সমুদ্রে যেতে পারেনি ট্রলার। সকলকেই ফিরতে হয়েছে মোহনায়। তাই সেভাবে আড়তে ঢোকেনি ইলিশ-সহ অন্যান্য সামুদ্রিক মাছ। নগেন্দ্রবাজার মৎস্য আড়তদার সমিতির সম্পাদক জগন্নাথ সরকার জানান, পরিবর্তিত সময় অনুযায়ী এদিন বিকেল তিনটে থেকে শুরু হয় নিলাম। তবে গত মরশুমে দৈনিক যেখানে গড়ে ২০০-২৫০ মেট্রিকটন সামুদ্রিক মাছ নিলাম করে গোটা আড়তে প্রায় তিন-চার কোটি টাকার দৈনিক ব্যবসা হয়েছিল, এই মরশুমের প্রথমদিন আড়তদারদের আয়ের পরিমাণ কিন্তু যৎসামান্যই। তবে আগামীদিনে গত মরশুমের মতই ব্যবসা হবে বলে তাঁর আশা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.