সুরজিৎ দেব, ডায়মন্ড হারবার: বেশিরভাগ বাঙালির ঘরে ঘরে চলছে রান্নাপুজোর জোর প্রস্তুতি। রাত জেগে হবে রান্নাবান্না। পরদিন রান্না করা সেই ঠান্ডা খাবারদাবার খাওয়া হবে, এটাই রীতি। পুজোর এক বিশেষ উপকরণ ইলিশ। এদিকে ইলিশের আবার এবার ঘোর আকাল। সমুদ্রে গিয়েও ইলিশ শিকার মাঝপথে বন্ধ রেখেই বৃহস্পতিবার উপকূলে ভিড়েছে একের পর এক ট্রলার। দুর্যোগের জেরে শনিবার পর্যন্ত সমুদ্রে ইলিশ শিকারে ছিল কড়া সরকারি নিষেধাজ্ঞা। ইলিশের আকালে এবার তাই সিংহভাগ আমবাঙালিকে ইলিশ ছাড়াই নমো নমো করে করতে হচ্ছে পুজোর আয়োজন। ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্যজীবি থেকে খুচরো ও পাইকারি মাছ ব্যবসায়ী সকলেই।
প্রাকৃতিক দুর্যোগের দরুণ সমুদ্র উত্তাল। দুর্ঘটনা এড়াতে সরকারি নির্দেশ মেনে ইলিশ শিকারে যাওয়া সমস্ত ট্রলার তড়িঘড়ি কেউ ভিড়েছে কাকদ্বীপ, নামখানা ঘাটে, কেউবা আবার আশ্রয় নিয়েছে উপকূলের কাছাকাছি কোনও নিরাপদ খাঁড়িতে। ঘাটে ভেড়া ট্রলারগুলি কার্যত ইলিশশূন্য। যে গুটিকতক ইলিশ কয়েকটি ট্রলারে এসেছিল সেগুলিরও বাজারমূল্য চড়া। রান্নাপুজোয় ইলিশের তাই এবার বড়ই আকাল।
ওয়েস্ট বেঙ্গল ইউনাইটেড ফিশারমেন অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সম্পাদক বিজন মাইতি বলেন, “দুর্যোগের জেরে সমুদ্র এখন প্রচণ্ড উত্তাল। দুর্ঘটনা এড়াতে সরকারি নির্দেশ মেনে বৃহস্পতিবার রাতেই ইলিশশূন্য ট্রলার নিয়ে ফিরেছেন মৎস্যজীবীরা। প্রতি বছরের মতো এবারও রান্নাপুজোয় টাটকা ইলিশের ব্যাপক চাহিদা ছিল। কিন্তু বাধ সেধেছে প্রকৃতি। মৎস্যজীবীরা সমুদ্র থেকে ফিরে আসতে বাধ্য হওয়ায় ইলিশের জোগান এবার একেবারেই নেই। প্রায় লক্ষাধিক টাকা খরচ করে ট্রলারে ইলিশ ধরতে বেরিয়েও ফিরে আসায় মাথায় হাত মৎস্যজীবীদের। প্রচুর আর্থিক ক্ষতির মুখোমুখি হতে হয়েছে ক্ষুদ্র ও পাইকারী মাছ ব্যবসায়ীদের।”
সমুদ্রফেরত মৎস্যজীবীরা জানিয়েছেন, তাঁদের আশা ছিল রান্নাপুজোয় প্রচুর পরিমাণে ইলিশ জোগান দিয়ে কিছুটা সুখের মুখ দেখবেন। এখন ইলিশ না ধরেই ফিরে আসায় কীভাবে দাদনের টাকা মহাজনকে পরিশোধ করবেন তা ভেবেই আকুল গোটা মহল্লা। এদিকে , ইলিশ না পেয়ে গৃহস্থেরও মনখারাপ। কারণ ইলিশ বাদ দিয়ে রান্নাপুজোর আয়োজন যে অসম্পূর্ণ। তাই একরকম বাধ্য হয়েই বেশ চড়া দামে কেউ কেউ কিনছেন কোল্ড স্টোরেজের ইলিশই।
ডায়মন্ড হারবার নগেন্দ্রবাজার পাইকারি মাছের আড়তের এক আড়তদার জানিয়েছেন, এবার রান্নাপুজোয় ইলিশের জোগান একেবারেই নেই। হাতেগোনা ৪৫০-৫০০ গ্রাম ওজনের কিছু ইলিশ আড়তে বিকিয়েছে কেজি প্রতি ৮০০-৯০০ টাকা মূল্যে। ২০০-২৫০ গ্রাম ওজনের ছোট ইলিশ আড়তে বিক্রি হয়েছে ৫০০-৬০০ টাকায়। এদিকে খুচরো বাজারে সেই ২০০-২৫০ গ্রামের ইলিশই প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ৭০০-৭৫০ টাকা মূল্যে। ৪৫০-৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের প্রতি কেজির দাম ছিল ৯০০-১০০০ টাকা। কোল্ড স্টোরেজে থাকা ৯০০ গ্রাম থেকে প্রায় এক কেজি ওজনের ইলিশ খুচরো বাজারে দাম কেজি প্রতি ১৫০০-২০০০ টাকা। বাজারে ইলিশের দাম শুনে চোখ কপালে উঠেছে বাঙালির। ইলিশ ছাড়াই এবার রান্নাপুজোর বাজার সারতে হয়েছে তাঁদের অনেককেই। অর্থাৎ বাংলার ঘরে ঘরে রান্নাপুজো কার্যত এবার ইলিশহীন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.