বাবা মায়ের সঙ্গে আলম রহমান।
চন্দ্রজিৎ মজুমদার, কান্দি: অচল দুই হাত। কথা বলতে সমস্যা। ভরসা একটি পা। অন্যটিও প্রায় অচল। প্রাত্যহিক কাজে ভরসা মা-বাবা। সঙ্গে আর্থিক অনটন। একটি মুদিখানা দোকান চালান বাবা-মা। তাতে কী? মনের জোর যে অসীম। সেই জেদের উপর ভর করে পা দিয়ে লিখে উচ্চ মাধ্যমিকে ৪০২ নম্বর পেলেন যুবক।
মুর্শিদাবাদের (Murshidabad) বড়ঞার বৈদ্যনাথপুর গ্রামের বাসিন্দা আলম রহমান। জন্ম থেকেই স্নায়ু রোগের আক্রান্ত। দুহাত, এক পা সব কিছুই প্রায় অচল। কথা আটকে যায় তাঁর। সঠিকভাবে দাঁড়াতেও পারেন না তিনি। জামাকাপড় পড়া থেকে শুরু করে খাওয়াদাওয়া সব কিছুই করিয়ে দেন পরিবারের সদস্যরা। তবে মেধাবি ছাত্র আলম হাজার প্রতিকূলতার মধ্যেও পড়াশোনা ছাড়তে চাননি। মাধ্যমিকের পর কান্দি রাজ উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সঙ্গে প্রতিদিন চলতে থাকে নিজের সঙ্গে নিজের লড়াই। পা দিয়ে পরীক্ষা দিয়ে তাক লাগিয়ে দিলেন সকলকে।
বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ছাত্রের বাবা ফিরোজ মহম্মদ ও মা আলমা তারা বিবি বলেন, “মাধ্যমিক পাশ করার পর ছেলের ইচ্ছা ছিল বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করার। কিন্তু আমরা খুবই গরিব। বুঝতেই পারছিলাম না কীভাবে ছেলের পড়াশোনা এগিয়ে নিয়ে যাব। কান্দির পুরপ্রধান জয়দেব ঘটক ও বিধায়ক অপূর্ব সরকার ছেলের দায়িত্ব গ্রহণ করায় চিন্তামুক্ত হই। এই রেজাল্টের পিছনে ওঁদের কৃতিত্ব সবচেয়ে বেশি। ছেলের বন্ধুরা ওকে অনেক সাহায্য করেছে। আমরা ছেলেকে আরও পড়াতে চাই।”
মহম্মদ আলম রহমান বলেন, “আমি প্রমাণ করতে চাই প্রতিবন্ধকতা কোনও বাধা হতে পারে না। যদি মনে জোর থাকে ও আত্মবিশ্বাস থাকে সব কিছু জয় করা যায়। আমার এই রেজাল্টের জন্য কান্দির পুরপ্রধান, বিধায়ক অনেক সাহায্য করেছেন। ওদের পাশে পেয়ে আমি ধন্য।” উল্লেখ্য, ২০২২ সালে গড্ডা গণপতি চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিল ওই ছাত্র। ৬২৫ নম্বর পেয়েছিল। ছাত্রদের মধ্যে সম্ভবত প্রথম হয়েছিলেন তিনি। এর পর তাঁর লেখাপড়ার দায়িত্ব নেয় প্রশাসন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.