ধীমান রায়, কাটোয়া: জনশ্রুতি আছে দস্যুদের আক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে দেবী নাকি নিজেই মাটির দেওয়ালের ভিতর ‘আশ্রয়’ নিয়েছিলেন। তারপর থেকে কাটোয়ার শ্রীখণ্ড গ্রামে ‘কাঁথেশ্বরী’ (Kantheswari Devi Katwa) রূপেই পূজিতা হয়ে আসছেন দেবী দুর্গা। স্থানীয়দের দাবি, প্রায় ৮০০ বছরের বেশি সময় ধরে শ্রীখণ্ড গ্রামে চলে আসছে কাঁথেশ্বরীর আরাধনা।
কাটোয়ার প্রাচীন পুজোগুলির মধ্যে অষ্টধাতুর কাঁথেশ্বরী প্রতিমার পুজো অন্যতম। শ্রীখণ্ড গ্রামের বনেদি পরিবার বলে পরিচিত মজুমদার বাড়ির পারিবারিক পুজো এটি। এখনও নিষ্ঠার সঙ্গে দেবীর পুজো করেন মজুমদাররা। তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন আপামর গ্রামবাসী। শ্রীখণ্ড গ্রামের কাঁথেশ্বরী দেবীর নামকরণের নেপথ্যে রয়েছে জনশ্রুতি।
পরিবারের প্রবীণ সদস্য দীপক মজুমদার জানান, একুশ পুরুষ আগে তাঁদের বংশের পূর্বপুরুষ ছিলেন নরনাথ দাশশর্মা। তিনিই দুর্গা পুজোর (Durga Puja 2021) সূচনা করেন। তবে তাঁর আমলে দেবীমূর্তির কাঁথেশ্বরী নামকরণ হয়নি। মৃন্ময়ীমূর্তির পুজো হত তখন। নরনাথের পাঁচ প্রজন্ম পরে দুর্জয় দাশশর্মা প্রথমে দেবীর অষ্টধাতুর মূর্তি তৈরি করে পুজো শুরু করেন। সেই অষ্টধাতুর মূর্তি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল মাটির মন্দিরে। দীপকবাবু বলেন, “দুর্জয় দাশশর্মার পুজো শুরুর কয়েকবছর পরে নৈরাজ্য দেখা দেয়। এলাকায় অস্থির অবস্থা তৈরি হয়। বাইরে থেকে দস্যুরা লুঠতরাজ শুরু করে। সে সময় পরিবারের ধনসম্পদ সংরক্ষণ করে রাখার নিরাপদ জায়গা হিসাবে মনে করা হত মন্দিরগুলি। তাই মন্দিরগুলিও বাদ দেয়নি দস্যুরা। সেসময় এই মন্দিরেও হামলা হয়েছিল।”
দীপকবাবুর কথায়, “পূর্ব পুরুষদের মুখে শুনেছি আমাদের মন্দিরে হামলা চালাতে এসে দস্যুরা দেখে ভিতরে দেবীমূর্তি নেই। তা দেখে ফিরে যায় দুর্বৃত্তের দল। কিন্তু পরে মন্দিরে মূর্তি না দেখতে পেয়ে সকলেই ভেবে নেন, দেবীমূর্তি লুঠ করে নিয়ে গিয়েছে দস্যুরা। ঘটনার কিছু সময় পর দেবী স্বপ্নাদেশ দেন, মন্দিরের ভিতরের মাটির দেওয়ালে তিনি অধিষ্ঠান করছেন। স্বপ্নাদেশ পেয়ে দেওয়াল ভেঙে বের করে আনা হয় দেবী মূর্তি।”
কাঁথ শব্দের অর্থ দেওয়াল। দেওয়াল ভেঙে দেবীমূর্তি উদ্ধারের পর মজুমদার পরিবারের দেবী দুর্গার নামকরণ হয় ‘কাঁথেশ্বরী’। এই দেবীর মূর্তিতেও রয়েছে বৈচিত্র্য। দেবীর অষ্টধাতুর মূর্তিতে অসুর ও দুর্গার চার সন্তান নেই। তার বদলে দেবীর দু’পাশে রয়েছেন সখী জয়া ও বিজয়া। দেবীর বাম হাতে উদ্যত খড়্গ, ডান হাত উন্মুক্ত ও প্রসারিত। শ্রীখণ্ড গ্রামে কাঁথেশ্বরীর ধুমধাম সহকারে পুজোপাঠ চলে ৪ দিন। সারা গ্রামের মানুষ যোগ দেন এই পুজোয়। পরিবারের আর এক সদস্যা শ্যামা মজুমদারের কথায়, “পূর্বে আমাদের পদবী ছিল দাশশর্মা। আমরা পরে উপাধি পেয়ে মজুমদার হয়েছি। তবে পুজোর পদ্ধতি প্রকরণ এতটুকুও বদলায়নি।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.