ছবি: জয়ন্ত দাস
সৌরভ মাজি ও ধীমান রায়: ‘অতিথি’ বরণের জন্য নতুন করে রঙের প্রলেপ পড়েছে মথুরা মণ্ডলের বাড়িতে। মধ্যাহ্নভোজের মেনুও ঠিক করে ফেলেছেন। একদম নিরামিষ খাবার। ভিভিআইপি অতিথি যে সম্পূর্ণ নিরামিষভোজী। তাই মেনুতে থাকছে ভাত, সোনামুগের ডাল, শাক, আলুভাজা, ফুলকপি-পনিরের তরকারি, চাটনি, পাঁপড়, দই ও নলেন গুড়ের রসগোল্লা। শনিবার দুপুরে পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়ার জগদানন্দপুর গ্রামের মথুরার বাড়িতেই মধ্যাহ্নভোজন করবেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা (J.P.Nadda)। অতিথি আপ্যায়নে কোনও ত্রুটি রাখতে চান না কৃষক মথুরা মণ্ডল।
সর্বভারতীয় সভাপতির জেলা সফর ঘিরে শুক্রবার ছিল সাজো সাজো রব। বিজেপির রাজ্য ও কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতারা এদিন কাটোয়ার ওই গ্রাম পরিদর্শন করেন। বর্ধমান শহরেও শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি খতিয়ে দেখেছেন তারা। কাটোয়ার জগদানন্দপুর গ্রামের রাধাগোবিন্দজিউ মন্দিরে পুজো দেওয়ার কথা নাড্ডার। তারপর সংলগ্ন মুস্থুলি গ্রামে কৃষক সুরক্ষা জনসভায় যোগ দেবেন। সভা শেষে কয়েকজন কৃষকের বাড়ি গিয়ে এক মুঠো করে শস্য সংগ্রহ করবেন। তিনি মধ্যাহ্নভোজন সেরে বর্ধমানে গিয়ে রোড শো করবেন। সেখানে সর্বমঙ্গলা মন্দিরে পুজো দেওয়ার কথা রয়েছে নাড্ডার।
সর্বভারতীয় সভাপতিকে বরণ করে নিতে বর্ধমান শহরে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি তুঙ্গে। গেরুয়া বেলুন ওড়ানো হয়েছে এদিন থেকেই। পুরো শহর গেরুয়া পতাকায় মুড়ে দেওয়া হয়েছে। এদিন বিকেলে প্রস্তুতির সময় আচমকাই ঘটে অঘটন। বর্ধমান শহরের টাউন এলাকায় জিটি রোডের ধারে জেপি নাড্ডাকে স্বাগত জানাতে ব্যানার লাগানোর কাজ চলছিল। সেই সময় আচমকা হাইভোল্টেজ বিদ্যুৎ লাইনের সংস্পর্শে চলে আসেন এক বিজেপি কর্মী। বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন। তাঁর কাঁধের কাছে আগুনও ধরে যায়। অন্যান্য বিজেপি কর্মীরা ট্রান্সফর্মারের সুইচ নামিয়ে দিয়ে কোনওক্রমে প্রাণ বাঁচিয়েছেন। পরে পুলিশ ও দমকল এসে উদ্ধার করে ওই বিজেপি কর্মীকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠিয়েছে।
কাটোয়া এসেছিলেন বিজেপির রাজ্য নেতা শমীক ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, “রাজ্যের শস্যগোলা বলা হয় এই জেলাকে। সেই জেলার কৃষকদের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক স্থাপনের জন্য নাড্ডাজির এই জেলা সফর। বিজেপি কৃষকদের কাছে কৃতজ্ঞ কারণ পশ্চিমবঙ্গে ১৮টি আসনে জয়লাভ কৃষকদের সাহায্য ছাড়া সম্ভব হত না। বিজেপি কৃষকদের জন্য ভাবে। আগের কোনও সরকার তা ভাবেনি।” বর্ধমানে রোড শো এর প্রস্তুতি খতিয়ে দেখেন কেন্দ্রীয় নেতা অরবিন্দ মেনন। তিনি জানিয়েছেন, এ পর্যন্ত যত রোড শো হয়েছে জনসমাগমের নিরিখে বর্ধমানের রোড শো তাদের সকলকে ছাপিয়ে যাবে।
এদিন পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় কাটোয়ার হেলিপ্যাড, মন্দির ও সভাস্থল পরিদর্শন করেন। বর্ধমান শহরে হেলিপ্যাড, সর্বমঙ্গলা মন্দির এবং রোড শো-এর নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখছেন পদস্থ পুলিশ আধিকারিকরা। এদিকে বিজেপির রোড শো নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি তৃণমূল। দলের রাজ্যের মুখপাত্র দেবু টুডু বলেন, “মাত্র সাড়ে সাতশো মিটার রোড শো করবেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি। এটা ওদের লজ্জা। জনসমর্থন নেই ওদের। তাই বহিরাগতদের রোড শেয়ে কোনও মানুষই হাজির হবে না এটা বুঝে গিয়েছে বিজেপি। তাই মাত্র সাড়ে সাতশো মিটার কর্মসূচি নিয়েছে তারা।” তৃণমূল সূত্রের খবর, রবিবার বর্ধমান শহরের জিটি রোডে রোড শো করবেন যুব তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যের সহ সভাপতি তথা অভিনেতা সোহম চক্রবর্তী। যদিও এই রোড শোকে নাড্ডার পালটা হিসেবে মানতে নারাজ তৃণমূল নেতৃত্ব।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.