বাবুল হক, মালদহ: পরিবারের পাঁচ সদস্যই দৃষ্টিহীন। সংসার চলত ভিক্ষাবৃত্তি করে। যে গ্রামের বাসিন্দা, সেখানেই চলছে ‘দুয়ারে সরকার’ (Duare Sarkar) শিবির। প্রতিবন্ধকতার কারণে শিবিরে পৌঁছতে পারেননি তাঁরা। সোমবার সেকথা জানতে পারেন মালদহের (Malda) জেলাশাসক নীতিন সিংহানিয়া। এরপর গোটা ‘দুয়ারে সরকার’ শিবির নিয়েই দৃষ্টিহীন পরিবারে কাছে পৌঁছলেন খোদ জেলাশাসক৷ একে একে তাঁদের যাবতীয় সমস্যার সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হয় একাধিক সরকারি প্রকল্পের মাধ্যমে। মানবিক প্রশাসনের উদ্যোগে আলো জ্বলল অন্ধঘরে!
উত্তর মালদহের রতুয়া-২ নম্বর ব্লকের সম্বলপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার ইসলামপুর গ্রাম। সেখানকার বাসিন্দা বাবলু শেখ জন্মান্ধ৷ শুধু তিনিই নন, তাঁর বোন ইসমেতারা খাতুন, দুই ছেলে ইমরান ও সোলেমান, এমনকী একমাত্র মেয়ে সাবিনা খাতুনও জন্ম থেকেই চোখে দেখতে পারেন না। ভিক্ষাবৃত্তি করে পেট চলে গোটা পরিবারের৷ একই বাড়ির পাঁচজনই দৃষ্টিহীন, জানতে পেরে সোমবার দুপুরে ইসলামপুর গ্রামে পৌঁছে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করেন মালদহের জেলাশাসক। সঙ্গে ছিলেন অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) বৈভব চৌধুরি, বিডিও নিশীথ কুমার মাহাতো, জেলা পরিষদের সদস্যা সেতারা খাতুন, পুখুরিয়া থানার ওসি গৌতম চৌধুরি প্রমুখ৷
জেলাশাসকের নির্দেশে এদিন বাবলু হকের বাড়ির সামনেই দুয়ারে সরকারের মোবাইল ক্যাম্প বসানও হয়৷ গ্রামবাসীদের মুখ থেকে বিভিন্ন সমস্যার কথা শোনেন তিনি৷ বাবলুর বাড়িতে তাঁর স্ত্রী শেফালি বিবিই একমাত্র চোখে দেখেন৷ তিনিই সবাইকে আগলে রেখেছেন। সবটা জানার পর ‘চোখের আলো’ প্রকল্পে পরিবারের পাঁচ সদস্যের চিকিৎসার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এদিকে বিল বকেয়া থাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিল বিদ্যুৎ দপ্তর। বিল মিটিয়ে ঘরে আলো আনারও ব্যবস্থা করেন ডিএম।
মালদহের জেলাশাসক নীতিন সিংহানিয়া বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে এখন রাজ্যজুড়ে দুয়ারে সরকার ক্যাম্প চলছে। পাঁচজনের মধ্যে তিনজন মানবিক ভাতা পেলেও দু’জনের এখনও ভাতা চালু হয়নি৷ আজই ব্যবস্থা করে দিয়েছি৷ এবার থেকে তাঁরা মানবিক ভাতা পাবেন৷ পরিবারটির ঘরের প্রয়োজন৷ তবে এই বছরই ঘর করা যাবে না৷ আগামী বছর সরকারি ঘর বরাদ্দ করা হবে৷ পাঁচজনের চোখ পরীক্ষার জন্য আজই চিকিৎসকরা আসছেন৷ রাজ্য সরকারের চোখের আলো প্রকল্পে যাবতীয় ব্যবস্থা হচ্ছে৷”
এছাড়াও পাঁচজনকেই স্বাস্থ্যসাথী কার্ড করে দেওয়া হয়েছে। মালদহের জেলাশাসক বলেন, “পরিবারের এক সদস্য অভিযোগ করেছেন, স্বাস্থ্যসাথী কার্ড নিয়ে তিনি মালদহ শহরের একটি নার্সিংহোমে চোখের চিকিৎসা করাতে গিয়েছিলেন৷ তাঁর কাছ থেকে টাকা নিয়েছে নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ৷ আমি বিল জমা দিতে বলেছি৷ অভিয়োগ প্রমাণিত হলে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে৷”
জানা গিয়েছে, বাবলু শেখের বকেয়া বিদ্যুতের বিল ৩০ হাজার টাকা। সেই কারণেই সংযোগ কেটে দিয়েছিল বিদ্যুৎ দপ্তর৷ মালদহের জেলাশাসক নীতিন সিংহানিয়া বলেন, “সরকার তাঁর বিলের ৫০ শতাংশ মকুব করে দেবে৷ কিন্তু ১৫ হাজার টাকাও তিনি জমা দিতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন৷ তাই আমরাই সেই টাকা জমা দেওয়ার ব্যবস্থা করছি৷ আজই বাবলুবাবুর বাড়িতে ফের বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হবে৷” অর্থাৎ আলো ফিরবে ভাঙা ঘরে!
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.