সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের স্মৃতি নিয়ে শহর পুরুলিয়ার উপকণ্ঠে ছড়রার পরিতক্ত বিমানবন্দর থেকে হেলিকপ্টার ওড়া এখন স্রেফ সময়ের অপেক্ষা। অবশেষে এই পরিত্যক্ত বিমানবন্দরে এয়ারপোর্ট অথরিটি অফ ইন্ডিয়ার প্রতিনিধি দল পা রাখায় এমন ইঙ্গিত মিলেছে। সোমবার এয়ারপোর্ট অথরিটি অফ ইন্ডিয়ার চার সদস্যের একটি দলের সঙ্গে রাজ্য পরিবহন বিভাগের স্পেশাল সেক্রেটারি ডিকে গুপ্ত বিমানবন্দরের চারপাশ ঘুরে দেখেন। পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন ও পুলিশের তত্ত্বাবধানে তাদের এই পরিদর্শন চলে। পুরুলিয়ার জেলাশাসক রজত নন্দা বলেন, “রাজ্য পরিবহন বিভাগের স্পেশাল সেক্রেটারির সঙ্গে এয়ারপোর্ট অথরিটি অফ ইন্ডিয়ার দল ওই ছররা এলাকা ঘুরে দেখেন।”
দীর্ঘদিন ধরেই এই বিমানবন্দর চালু করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে রাজ্য সরকার। ২০০৬ সালে রাজ্যের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য পুরুলিয়ায় এসে পুঞ্চার পাকবিড়রার জনসভা থেকে এখানে হেলিকপ্টার ওঠা-নামানোর কথা বলেছিলেন। কিন্তু বাম আমলের এই কাজ এগোয়নি বলে অভিযোগ। রাজ্যে পালাবদলের পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে হেলিকপ্টার ওঠানামা করতে জোর কদমে তৎপরতা চলছে। আর সেই তৎপরতারই পদক্ষেপ এয়ারপোর্ট অথরিটি অফ ইন্ডিয়ার পরিদর্শন। ওই দল রানওয়ে ঘুরে দেখার পাশাপাশি আশেপাশের কি গ্রাম আছে সেই বিষয়গুলো খতিয়ে দেখেন।
ছড়রার পরিত্যক্ত বিমানবন্দরের এই জমি আগে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের অধীনে ছিল। ১৯৯০ সালে রাজ্য সরকারকে হস্তান্তর করা হয়।কিন্তু বাম আমলের তৎকালীন রাজ্য সরকার তা জানতোই না বলে অভিযোগ। ২০০১ সাল থেকে বাঘমুন্ডির প্রাক্তন বিধায়ক তথা পুরুলিয়া জেলা কংগ্রেস সভাপতি নেপাল মাহাতো বিষয়টি বিধানসভায় বারে বারে উত্থাপন করলে পরিতক্ত বিমানবন্দর নিয়ে ভাবনা চিন্তা শুরু হয়। রাজ্য সরকার তখন জানিয়েছিল, ওই জমি প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের কাছে আছে।এরপরই প্রাক্তন বিধায়ক নেপাল মাহাতো তৎকালীন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়ের কাছে যান।সেই সময় প্রতিরক্ষা মন্ত্রক জানিয়ে দেয়, ওই জমি ১৯৯০ সালেই রাজ্যের হাতে দিয়ে দেওয়া হয়েছে।সেই সময় তৎকালীন পরিবহন মন্ত্রী সুভাষ চক্রবর্তী বিধায়ক নেপাল মাহাতোর এই কাজের প্রশংসা করেন।২০০৬ সালে মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এই বিমানবন্দর চালুতে উদ্যোগী হন । ২০০৭ সালে পরিত্যক্ত বিমানবন্দর দেখতে আসেন তৎকালীন পরিবহন মন্ত্রী সুভাষ চক্রবর্তী। কিন্তু তারপরেই ফাইল চাপা পড়ে যায় বলে অভিযোগ।
রাজ্যে পালাবদলের পর থেকে এই বিমানবন্দর চালুর প্রক্রিয়া জোর কদমে চলছে।একাধিকবার সমীক্ষক দল এসে সমীক্ষা করে গিয়েছে। হয়েছে ট্রায়াল রান ।প্রস্তাবিত ভাড়াও ধার্য হয়েছে। ছড়রা থেকে বেহালা ফ্লাইং ক্লাব পর্যন্ত হেলিকপ্টার যাবে তাও প্রাথমিক স্তরে আলোচনা হয়েছে। তবে তা চালু না হওয়ায় সম্প্রতি সিনারজিতে বিষয়টি শিল্পপতিদের তরফ থেকে উঠে আসে। মুখ্যমন্ত্রীর জঙ্গলমহল সফরের আগে এয়ারপোর্ট অথরিটি অফ ইন্ডিয়ার প্রতিনিধি দল এই বিমানবন্দর ঘুরে যাওয়াই খুশি প্রাক্তন বিধায়ক নেপাল মাহাতো । তার কথায়, “এতদিন পর ভালো লাগছে। মনে হচ্ছে সত্যি এবার হয়তো হেলিকপ্টার উড়বে।”
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ (১৯৩৯-৪৫)-র সময় বৃটেনের মিত্রশক্তি দেশগুলি এই ছররা থেকে জ্বালানি নিতে বিমান ওঠানামা করত। তারপর থেকে এই রানওয়ে পরিত্যক্ত অবস্থাতেই পড়ে রয়েছে। এখন ওই রানওয়েতে গজিয়ে উঠেছে ঘাস। কিন্তু আবার নতুন করে যে স্বপ্ন দেখা শুরু করেছিল জঙ্গলমহল পুরুলিয়া। তা এবার বাস্তবের পথে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.