ফাইল ছবি
শ্রীকান্ত পাত্র, ঘাটাল: লকডাউনের মাঝে সরকারি নির্দেশিকাকে উপেক্ষা করে স্কুলে ক্লাস নেওয়াটা ভুল হয়েছিল, তা স্বীকার করে নিলেন দাসপুরের হাট সড়বেড়িয়া বি সি রায় হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক বৃন্দাবন ঘটক। শিক্ষা দপ্তরের আধিকারিকের কাছে কৃত অপরাধের জন্য নিঃশর্তে ক্ষমাও চেয়ে নিলেন তিনি। বৃহস্পতিবার স্কুল শিক্ষা দপ্তরের আধিকারিকের কাছে শোকজের জবাব লিখিতভাবে দিয়ে নিজের দোষ কবুল করে নিলেন। জানিয়ে দিলেন, “এ ভুল আর হবে না। আজ থেকে স্কুলে ক্লাস নেওয়া বন্ধ।”
বুধবার হাট সড়বেড়িয়ার বিধানচন্দ্র রায় হাই স্কুল খোলা হয়েছিল। দশম শ্রেণির ক্লাসও হয়। কেন সরকারি নিষেধাজ্ঞাকে তোয়াক্কা না করে স্কুল কর্তৃপক্ষ ক্লাস চালু করল, তা জানতে চেয়ে সঙ্গে সঙ্গেই প্রধান শিক্ষককে শোকজ করেছিল স্কুল শিক্ষাদপ্তর। ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই জবাব চাওয়া হয়েছিল। সেইমতো, বৃহস্পতিবার প্রধান শিক্ষক বৃন্দাবন ঘটক পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (DI) চাপেশ্বর সর্দারের কাছে লিখিতভাবে জবাব দেন। চাপেশ্বরবাবু জানিয়েছেন, “লকডাউনের মাঝে বুধবার দাসপুরের হাট সড়বেড়িয়া বি সি রায় হাই স্কুলে দশম শ্রেণির ক্লাস শুরু হয় বলে জানতে পেরে ওই প্রধান শিক্ষককে শোকজ করা হয়েছিল। ঘাটালের অতিরিক্ত জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শককে তদন্ত করে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছিল। সেই রিপোর্ট এসে পৌঁছেছে। উনি নিজের ভুল স্বীকার করে নিয়েছেন। ক্লাস বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
জানা গিয়েছে, ছাত্রছাত্রী এবং অভিভাবকদের অনুরোধ-উপরোধের মুখে পড়ে স্কুল পরিচালন সমিতি সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, আপাতত দশম শ্রেণির ক্লাস হবে। সেইমতো বুধবার তা শুরু হয়। তা চলার কথা ছিল। কিন্তু প্রথমদিনই এ নিয়ে শোরগোল শুরু হওয়ায়, প্রশাসন পদক্ষের গ্রহণ করায় চাপ সহ্য করতে পারেননি প্রধান শিক্ষক বৃন্দাবন ঘটক। বুধবারই তিনি ক্লাস বন্ধের বিষয়টি জানিয়ে দেন ছাত্র ছাত্রীদের। বৃহস্পতিবার স্কুলে তদন্ত করতে যান ঘাটালের অতিরিক্ত বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) তিমিরবরণ আদিগিরি। তিনি বৃন্দাবনবাবুর কাছে লিখিত জবাব তলব করেন। বৃন্দাবনবাবু লিখিতভাবে নিজের ভুল স্বীকার করে ক্ষমাও চেয়ে নেন।
সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে বিসি রায় হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক বৃন্দাবন ঘটক বলেন, “ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকদের অনুরোধ মেনে শুধুমাত্র দশম শ্রেণির ক্লাস চালু করেছিলাম। করোনা পরিস্থিতিতে সন্তানতুল্য ছাত্রছাত্রীদের স্বার্থের কথা ভেবে সামাজিক স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাস শুরু করেছিলাম। কিন্তু সরকারি বিধিনিষেধের জেরে ক্লাস বন্ধ করে দিতে বাধ্য হলাম।” সমালোচনায় বিদ্ধ বৃন্দাবনবাবু আরও বলেন, “আমার ৩১ বছরের শিক্ষকতা জীবনে আমি কোনও অন্যায় করিনি। সন্তানতুল্য ছাত্রছাত্রীদের স্বার্থের কথাই ভেবে এসেছি। ছাত্রছাত্রী, অভিভাবক ও পরিচালন সমিতির অনুরোধের কাছে আমি দুর্বল হয়েই এই ক্লাস নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। এই ভুল আর হবে না। ” প্রধান শিক্ষকের কাছ থেকে নোটিস পেয়ে বৃহস্পতিবার আর স্কুলমুখো হয়নি দশম শ্রেণির পড়ুয়ারা। এই ঘটনায় অভিভাবকদের মনোভাব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে শিক্ষামহলের একাংশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.