পুজো হওয়া হাতির মূর্তি।
রাজ কুমার, আলিপুরদুয়ার: বনের দামাল হাতিদের তুষ্ট করতে পুজোর আয়োজন। থাকে হাতির বড় মূর্তি, ফুল-ফালা। পুজোর পরে চলে খিচুড়ি খাওয়াও। পুজো করলে আর হাতির হামলা হবে না। সেই বিশ্বাস থেকেই হাতিপুজোর আয়োজন করা হয় আলিপুরদুয়ারের বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের জঙ্গলঘেঁষা দক্ষিণ সাতকোদালি গ্রামে।
ওই গ্রাম পেরিয়ে অন্য গ্রামে হামলা চালায় দামালরা। দক্ষিণ সাতকোদালি গ্রামে হাতি তেমন ক্ষয়ক্ষতি করে না। টানা ৩৫ বছর থেকে ওই গ্রামে কোনও মানুষ হাতির হামলায় মারা যাননি। হাতিপুজো আয়োজন করার পর থেকেই ওই গজরাজের কৃপাদৃষ্টি তাঁদের উপর রয়েছে। সেই কথাই জানাচ্ছেন গ্রামের বাসিন্দারা।
পাশের বঞ্চুকামারি, চাপাতলি, ফোসকাডাঙা গ্রামের বাসিন্দারাও এই পুজোয় সামিল হন। গ্রামবাসীদের দাবি, আগে এই গ্রামে নিত্যদিন হাতির হামলা হত। প্রাণহানিও হত। কিন্তু এখন আর কিছুই হয় না। গ্রামের বৃদ্ধ মহেশচন্দ্র রায় বলেন, “১৯৮৯ সাল থেকে আমরা এখানে হাতিপুজো শুরু করি। প্রথমে আসল হাতি বন দপ্তর এখানে নিয়ে আসত। সেই হাতিকে পুজো করতাম। হাতিকে ফল ও কলাগাছ খাওয়াতাম আমরা। সম্প্রতি আসল হাতিপুজোয় নিষেধাজ্ঞা হওয়ায় মূর্তি বানিয়ে পুজো করি আমরা।”
গ্রামবাসী নয়নশরি রায় বলেন, “হাতিপুজো শুরু হওয়ার পর থেকে মহাকালবাবা এই গ্রামে এলেও কোনও ক্ষতি করে না। গ্রামের মাঠ পেরিয়ে অন্য গ্রামে চলে যায়। কিন্তু এই গ্রামের কোনও ক্ষতি করে না। আগে এখানে হাতির হামলায় প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হত।” বৈদিক মতে টানা ২০ বছর ধরে এই পুজোয় পৌরহিত্য করছেন চন্দনকুমার দুবে। তিনি বলেন, “ভক্তির একটা শক্তি রয়েছে। সেই শক্তিতেই হয়তো হাতি আটকান এই গ্রামের মানুষেরা। এখানে মহকালবাবার পুজো করি আমি। বৈদিক মতেই হাতি পুজো হয় এখানে।”
বিষয়টি নিয়ে বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের উপক্ষেত্র অধিকর্তা ডঃ হরিকৃষ্ণন বলেন, “গ্রামবাসীদের বিশ্বাসের কতটা বৈজ্ঞানিক ভিত্তি রয়েছে, বলা সম্ভব নয়। তবে আমাদের শাস্ত্রেই বলেছে বিশ্বাসে মিলায় বস্তু, তর্কে বহু দূর। জঙ্গল লাগোয়া বিভিন্ন এলাকায় হাতি নিয়ে নানান মিথ প্রচলিত রয়েছে।” উল্লেখ্য, আলিপুরদুয়ারেই সম্প্রতি বনের ভিতর কাঠ কাটতে গিয়ে হাতির হামলায় মারা গিয়েছেন চারজন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.