জ্যোতি চক্রবর্তী, বসিরহাট: স্বামী বিবেকানন্দের সঙ্গে একই আসনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বসিয়ে বিতর্কে জড়ালেন সরকারি আধিকারিক। এক সরকারি অনুষ্ঠানে গিয়ে হাসনাবাদের বিডিও অরিন্দম মুখোপাধ্যায় বললেন, ”আমি নিজে রোজ দুটো ছবির সামনে দাঁড়াই। এক, স্বামী বিবেকানন্দ ও দুই, মুখ্যমন্ত্রীর ছবির সামনে৷ তাতেই এক অদ্ভুত জীবনীশক্তিতে নিজেকে পুনর্জীবিত করি।” কাজের অনুপ্রেরণায় উভয়কেই প্রায় সমকক্ষ বলে নিজের মতপ্রকাশ করায় তাঁকে নিয়ে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। তবে নিজের ভাবনা মোটেই অস্বীকার করেননি বিডিও। উলটে সংবাদমাধ্যমে তিনি জানিয়েছেন যে এমনই মন্তব্য করেছেন।
রাজনৈতিক নেতানেত্রীর প্রতি সরকারি আধিকারিকদের আনুগত্য পোষণ নতুন কিছু নয়। এ রাজ্যে এমন শ্রদ্ধার বহিঃপ্রকাশ নজরে এসেছে বেশ কিছু। দিন কয়েক আগেও বীরভূমের তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের পদতলে বসে ছবি তুলে তা নিজেই সোশ্যাল মিডিয়া ছড়িয়ে বিতর্ক বাড়িয়েছিলেন প্রাথমিক শিক্ষা সংদের চেয়ারম্যান। ‘গুরু’ বলে সম্বোধন করে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন তাঁর আনুগত্য। তা নিয়ে শোরগোল উঠতেই ছবিটি নিজের ফেসবুকের পাতা থেকে সরিয়ে নেন তিনি। এদিকে, অনুব্রত মণ্ডলও বিষয়টি এড়িয়ে যান।
এবার নিজের ভক্তির প্রকাশ ঘটাতে প্রায় সেই একই পথে হাঁটলেন হাসনাবাদের বিডিও অরিন্দম মুখোপাধ্যায়। বুলবুল বিধ্বস্ত গ্রামে ত্রাণ বিলি করতে গিয়ে অরিন্দমবাবু বলে বসলেন, “আপনারা সকালবেলা মুখ্যমন্ত্রীর ছবির সামনে দাঁড়ান। মুখ্যমন্ত্রীর ছবির সামনে ২ মিনিট দাঁড়ালে একটা অদ্ভুত শক্তি পাবেন। আমি নিজে দুটো ছবির সামনে দাঁড়াই। এক স্বামী বিবেকানন্দ ও মুখ্যমন্ত্রীর ছবির সামনে৷ তাতেই এক অদ্ভুত জীবনীশক্তিতে নিজেকে পুনর্জীবিত করি।” এমনকী সাংবাদিকরা তাঁকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে বিডিও অরিন্দম মুখোপাধ্যা অকপটেই স্বীকার করেন, “কাজের জন্য জন্য শক্তি দরকার। কেউ প্রাণায়াম করে, কেউ যোগাভ্যাস করে। এটা অনুশীলনের বিষয়। মুখ্যমন্ত্রী তো কর্মবীর। ওনার ছবির সামনে দাঁড়ালে কাজের একটা শক্তি পাওয়া যায়।”
হতেই পারে এমনটা যে স্বামী বিবেকানন্দ যেভাবে অরিন্দমবাবুকে কর্মপ্রেরণা জোগান, একইভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিপুল কর্মযজ্ঞও তাঁকে নতুন করে শক্তি দেয়। কিন্তু এটা ভুললে কোনওভাবেই চলবে না যে দু’জনের কাজের ক্ষেত্র, ব্যাপ্তি এবং সর্বোপরি সময় ভিন্ন। স্থান-কাল-পাত্র এভাবে এক করে দেওয়া কখনওই কাম্য নয়। শ্রদ্ধা অথবা অনুপ্রেরণার জায়গা এক, আর রাজনৈতিক আনুগত্যের বহিপ্রকাশ পৃথক। কোনওটির সঙ্গে কোনওটির তুলনা সাযুজ্যপূর্ণ নয়। যুক্তি দিয়ে এই তফাতটুকু হয়ত করতে পারেননি অরিন্দমবাবু।
দেখুন ভিডিও:
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.