সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: আমার হাতটা কি এনে দেবে না বাবা? খুদের মুখে এ প্রশ্ন শুনে শুধু চোখের কোণ ভিজে উঠত। কিন্তু মেয়ের মুখে কীভাবে হাসি ফুটবে তা কিছুতেই বুঝে উঠতে পারতেন না অভিভাবকরা? কীভাবেই বা বলা যায়, সাধের আঁকাআঁকি আর কোনওদিনই করতে পারবে না সে। ওইটুকু মেয়েকে কীভাবে বা বোঝানো যায়, নির্বাচনী অভিশাপই কেড়ে নিয়েছে তার হাত! হাড়োয়ার গোটা হালদার পাড়াই যেন খুদে পৌলমীর সামনে এসে হতবুদ্ধি হয়ে পড়ত। তবে অবশেষে হাসি ফিরল পৌলমীর মুখে। শহরের চিকিৎসকদের অক্লান্ত পরিশ্রম আর দক্ষতায় কৃত্রিম হাত পেল সে।
[ পুলিশকর্মীকে পচা মাংস বিক্রির অভিযোগ, সিউড়িতে আটক ব্যবসায়ী ]
পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে রাজ্যে তখন সাজসাজ রব। সে সময়ই ফুল তুলতে গিয়ে বাড়ির কাছে বলের মতো একটা জিনিস কুড়িয়ে পেয়েছিল পৌলমী। হাতে তুলে নিয়ে খেলা করবে ভেবেছিল। কিন্তু কে জানত কী অভিশাপ তার জন্য অপেক্ষা করছে! অভিভাবকরা দেখতে পেয়ে চিৎকার করে সেটি ফেলে দিতে বলেন। কিন্তু ফেলার আগেই পৌলমীর ‘বল’ বোমা হয়ে হাতেই ফেটে যায়। কোনক্রমে প্রাণে বাঁচে একরত্তি। তবে বাঁ হাতের একটি অংশ বাদ যায়। হারানো হাতের যন্ত্রণা কুরেকুরে খেত তাকে। মা-বাবাকে জিজ্ঞেস করত, হাতটা কি ফিরিয়ে আনা যায় না? ভগবান কি হাতটা আর দেবেন না? উত্তর দিতে পারতেন না কেউই। কৃত্রিম হাত লাগানো যায়, নিদান দিয়েছিলেন ডাক্তারবাবুরা। তবে তা বেশ খরচস্বাপেক্ষ চিকিৎসা। ছাপোষা মানুষের ক্ষেত্রে অতগুলো টাকা জোগাড় করাও ছিল স্বপ্ন। তবে মেয়ের জন্য কিছু করতে কসুর করেননি অভিভাবকরা। সাহায্যের হাতও এসেছিল। কিছুদিন আগে এসএফআই-এর রাজ্য কমিটির তরফে প্রতিনিধি দল গিয়ে পৌলমীর পরিবারের হাতে তুলে দিয়েছিল ৫০ হাজার টাকা।
[ ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের ছবি দেখিয়ে ব্ল্যাকমেল প্রেমিকার, অপমানে আত্মঘাতী তরুণ ]
পৌলমীর চিকিৎসার ভার নিয়েছিল রাজ্য সরকার। তারাতলার কাছে এক নার্সিংহোমে তার চিকিৎসা শুরু হয়। শুরু হয় কৃত্রিম হাত লাগানোর প্রক্রিয়া। অবশেষে বৃহস্পতিবার সেই হাত ফিরে পেয়েছে পৌলমী। চিকিৎসকরা অক্লান্ত পরিশ্রমে খুদের কনুইয়ের সঙ্গে জুড়ে দিয়েছেন কৃত্রিম হাত। খুব শিগগিরই এই কৃত্রিম হাত শরীরের সঙ্গে এক হয়ে যাবে। স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে পারবে পৌলমী। আবার আঁকতে পারবে সে। আবার পারবে ফুল তুলতে। কৃত্রিম হাতের দিকেই আজ ফিরে ফিরে তাকাচ্ছে সে। তার মুখের হাসিই বলে দিচ্ছে, আজ কতটা তৃপ্ত সে। তৃপ্ত পৌলমীর অভিভাবকরাও। আজও চোখের কোণ ভিজে উঠছে তাঁদের-আনন্দাশ্রুতে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.