Advertisement
Advertisement

রামের পাশেই রহিম, মৃত হনুমানের সমাধি তৈরিতে এগিয়ে এলেন মুসলিমরাও

এই সম্প্রীতির পরিবেশ অন্যদের কাছেও উদাহরণ হয়ে উঠুক।

Hanuman dies in accident. Muslims construct temple
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:July 27, 2018 9:54 am
  • Updated:July 27, 2018 9:54 am  

সৌরভ মাজি ও রিন্টু ব্রহ্ম: দুর্ঘটনায় একটি হনুমানের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ফের দেখা মিলল বাংলার সম্প্রীতির। পবনপুত্র হিন্দুদের আরাধ্য। বজরঙ্গবলির মৃত্যু হলে রীতি মেনে শেষকৃত্য করেন হিন্দুরা। সেই আবেগকে শ্রদ্ধা জানিয়ে মুসলিমরাও এগিয়ে এলেন। ফুল-মালায় সাজিয়ে, ধূপ জ্বালিয়ে শেষকৃত্য করা হয় পবননন্দনের। তার পর সমাধিস্থও করা হয় তাকে। ঘণ্টা তিনেকের মধ্যে সমাধির উপর তৈরি করা হয় পাকা বেদি। সেখানেই মন্দির নির্মাণেরও সূচনা করা হয়েছে। পরে পাশাপাশি বসে পংক্তিভোজ করলেন রাম-রহিমরা। স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য তথা সংখ্যালঘু নেতা শেখ মেহের আলি ঘোষণা করেছেন, হনুমান-মন্দির গড়তে সবরকম ব্যবস্থা করে দেবেন তিনি। আপাতত বেদিতেই পবনপুত্রর ছবি রেখে পুজার্চনাও শুরু হয়ে গিয়েছে।

[স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হলে বুদ্ধিজীবীদের গুলি করার নির্দেশ দিতাম, বিস্ফোরক বিজেপি নেতা]

Advertisement

বৃহস্পতিবার, সম্প্রীতির এই ঘটনার সাক্ষী রইল পূর্ব বর্ধমানের মেমারি-১ ব্লকের তক্তিপুর গ্রাম। এই গ্রাম সংখ্যালঘু অধ্যুষিত। ৯০ শতাংশের বেশি বাসিন্দা মুসলমান সম্প্রদায়ের। বাকিরা হিন্দু। গত মার্চে দাঙ্গায় কিশোর সন্তানকে হারিয়েছিলেন আসানসোলের ইমাম মৌলানা ইমদাদুল রশিদি। তারপরেও তিনি সম্প্রীতি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছিলেন। আসানসোল থেকে প্রায় দেড়শো কিলোমিটার দূরে তক্তিপুর গ্রামেও সেই সম্প্রীতির নজির দেখা গেল এদিন। পবনপুত্রের শেষকৃত্য থেকে সমাধি বেদি তৈরিতে বৈদ্যনাথ সর্দার, সজল দাসদের সঙ্গে কাঁধ কাঁধ মিলিয়ে কাজ করলেন রশিদ কাজি, আকবর কাজি, জয়নাল আবেদিন শেখরা।

স্থানীয়রা জানান, এদিন সাতসকালে বর্ধমান-কালনা রোডে তক্তিপুরে একটি বাসের ধাক্কায় গুরুতর জখম হয় পূর্ণবয়স্ক একটি হনুমান। স্থানীয়রা তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু কিছু সময় পরেই মৃত্যু হয় সেটির। হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষজন জড়ো হন ঘটনাস্থলে। হিন্দুরা চাইছিলেন, হিন্দু ধর্মমতে সবকিছু হোক। খবর পেয়ে সেখানে যান তৃণমূলের সংখ্যালঘু নেতা শেখ মেহের আলি। তিনি সকলকে জানিয়ে দেন, হিন্দুমতে যা যা করা প্রয়োজন, হিন্দু ভাইবোনেরা যেমন চাইবেন সেইভাবেই হনুমানের শেষকৃত্য করা হবে। গ্রামের ৯০ ভাগ মুসলিম পরিবার সামান্য কিছু করে সাহায্য করেন। হিন্দুরাও সহায়তা দেন। হনুমানের মৃত্যুর ঘণ্টা তিনেকের মধ্যে সমাধি দেওয়া হয় হনুমানটিকে। সজল দাস, সুশীল মাঝিরা জানান, তাঁদের কাছে বজরঙ্গবলী দেবতা। তাই রীতি মেনে সব কিছু করতে চাইছিলেন তাঁরা। মেহের আলিরা এগিয়ে এসে বেদি গড়েছেন।

দুর্ঘটনায় অনেক পশুরই তো মৃত্যু হয়। কিন্তু হনুমানের মন্দির গড়ার উদ্যোগ কেন?

স্থানীয় বাগিলা গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য তথা গ্রামের বাসিন্দা শেখ মেহের আলি বলেন, “হিন্দুরা হনুমানের পূজা করেন। গ্রামের হিন্দু পরিবারগুলি চাইছিলেন সমাধি দিয়ে মন্দির গড়তে। আমরা মুসলিমরাও তাঁদের সেই আবেগকে শ্রদ্ধা জানালাম পাশে থেকে।” তিনি জানান, চারিদিকে অসহিষ্ণুতার পরিবেশ। বিভিন্ন রাজ্যের অনেক ঘটনার কথাই প্রকাশ্যে এসেছে। কিন্তু তাঁদের গ্রামের দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে কোনও বিভেদ নেই। গ্রামবাসীরা জানাচ্ছেন, যে যার নিজের ধর্ম করে। কিন্তু বাইরে সবাই এক। বর্ধমানের এক স্কুল শিক্ষক নির্মল দত্ত বলেন, এমন নজির আমাদের বাংলাতেই সম্ভব। এই সম্প্রীতির পরিবেশ অন্যদের কাছেও উদাহরণ হয়ে উঠুক। জেলা পরিষদের সবাধিপতি দেবু টুডু বলেন, আমাদের বাংলা সম্প্রীতির বাংলা। এখানে ধর্মের ভেদাভেদ করে কেউ কেউ রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য। কিন্তু আমরা সম্প্রীতির কথাই বলি। সম্প্রীতির নজিরও গড়ি।

[বাংলাদেশে চড়ছে নির্বাচনী পারদ, রাজনাথের সঙ্গে বৈঠক ‘একনায়ক’ এরশাদের]

২০২৪ এর পূজা সংক্রান্ত সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের দেবীপক্ষ -এর পাতায়।

চোখ রাখুন
Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement