সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: রামায়ণ, মহাভারত, চর্যাপদ। এমনকি বেদ, গীতাতেও শবরদের কথা রয়েছে সভ্য জাতি হিসাবেই। কিন্তু পরবর্তীকালে ব্রিটিশরা তাদেরকে ‘জন্ম অপরাধী’ আখ্যা দেয়। ১৮৭১ সালে ‘ক্রিমিনাল ট্রাইব অ্যাক্ট’-র অধীনে নিয়ে আসে। তবে দেশ স্বাধীনের পর ১৯৫২ সালে সেই আইন রদ হয়। কিন্তু তার চার বছর পরেই ১৯৫৬ তে তাদের ‘জঙ্গলের ঘর’ই কেড়ে নেয় কেন্দ্র সরকার। কিন্তু অরণ্যের ঠিকানা তাদের বদলায়নি। ঝাড়খণ্ডের মতো রাজ্যে তারা ‘প্রিমিটিভ ট্রাইবাল গ্রুপে’র আওতায়। তারা নাকি গোসাপ, ব্যাঙও খায়! সেই সঙ্গে দিনভর হাঁড়িয়ার নেশা। তবে সেই আদিম জনজাতিই এখন বুঝেছে, হাত ধোওয়ার মতো স্বাস্থ্যবিধি জীবনযাপনেরই অঙ্গ। চিনের করোনা ভাইরাসই তাদের শিখিয়ে দিল, সাবান দিয়ে হাত ধোওয়াটা কতটা জরুরি।
বিশ্বজুড়ে করোনার সংক্রমণে পুরুলিয়ার এই আদিম জনজাতিকে নিয়ে চিন্তার শেষ ছিল না জেলা প্রশাসনের। তাই রাজ্যের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের গাইডলাইন মেনে তাঁদের শবর ভাষাতেই হাত ধোওয়ার স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে গান লিখে সচেতন করা হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গ খেড়িয়া শবর কল্যাণ সমিতির সম্পাদক জলধর শবরের এই গান এখন বাজছে তাদের গ্রামে, টোলায়, পাড়ায়-পাড়ায়। “হাথক সাবান দি সবাই ধুইনিবা খাবার আগুই। হাত ধুইবাই ধুইবা।” রবিবার পুঞ্চা ব্লকের ক্ষুদিটাঁড় গ্রামে পা রেখে শবর পুরুষ-মহিলাদের সাবান দিয়ে হাত ধুইয়ে দেন পুরুলিয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়। শবরদের ওই সংগঠনের অধিকর্তা প্রশান্ত রক্ষিত বলেন, “হাত ধোওয়ার স্বাস্থ্যবিধি তো আজকের নয়। প্রশাসনের তরফে ধারাবাহিকভাবে এই প্রচার চলে। কিন্তু শবররা সেই অভ্যাস অতীতে সত্যিই গড়ে তুলতে পারেনি। এবার করোনাই যেন তাদের শিখিয়ে দিল। আর তার কাণ্ডারি রাজ্যের আশা কর্মীরা।”
জঙ্গলমহলের তিন জেলা পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রামের মোট ১১টি ব্লক মিলিয়ে প্রায় বারো হাজার শবর পরিবার রয়েছে। সেই শবর পাড়ায় পাড়ায় এখন বদলে যাওয়া ছবি। বেঁচে থাকার জীবন যুদ্ধে মাটি দিয়ে নিকানো বা প্রাণীপালন করা হাতেই খাবার খাওয়া নয়। এখন রেশন সংগ্রহে গিয়েও হাত ধুচ্ছেন বিশাখা শবর, সুরধনী শবর, মাধব শবররা। হাত ধুচ্ছেন হেঁশেল সামলানো থেকে খাওয়ার আগে। তাঁদের কথায়, “হাত না ধুলে যে আমাদেরই গিলে খাবে করোনা রাক্ষস।”
দেখুন ভিডিও:
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.