সুরজিৎ দেব, ডায়মন্ডহারবার: গল্পের মত মনে হলেও সত্যি! চারবছর আগে প্রতিবেশীদের সঙ্গে সাগরমেলায় এসে হারিয়ে যাওয়া বৃদ্ধকে ফিরে পেল তাঁর পরিবার। গঙ্গাসাগর মেলায় এসে প্রতিবারই হারিয়ে যান ভিনরাজ্যের বহু মানুষ। তাঁদের কেউ ঘরে ফেরেন, কেউ ফেরেন না। কপিলমুনির মন্দির চত্বর কিংবা তার আশপাশ এলাকাই হয়ে যায় তাঁদের চিরকালের আশ্রয়স্থল। হঠাৎই এমনই এক হারিয়ে যাওয়া বৃদ্ধের সন্ধান পায় হ্যাম রেডিও (Ham Radio)। অনেক চেষ্টার পর বিহারে খুঁজে পাওয়া যায় তাঁর পরিবারকে। শনিবার সুন্দরবন (Sundarbans) জেলা পুলিশ মানসিক ভারসাম্যহীন ওই বৃদ্ধকে ফিরিয়ে দেয় তাঁর পরিবারের কাছে।
কখনও সমুদ্রসৈকতে, কখনও কপিলমুনির মন্দিরের সামনে, কখনও আবার গঙ্গাসাগরের অলিগলিতে উদভ্রান্তের মত ঘুরে বেড়াতে দেখা যেত হিন্দিভাষী এক বৃদ্ধকে। পরণে শতচ্ছিন্ন পোষাক। ঠিকানা জিজ্ঞেস করলে মনে করতে পারেন না কিছুই। প্রশ্নকর্তার দিকে তাকিয়ে থাকেন ফ্যালফ্যাল করে। গত চারবছর ধরে এলাকার মানুষ বৃদ্ধকে দেখছেন এভাবেই। দু’বেলা দু’মুঠো খাবার পেতে খুব একটা অসুবিধে হত না তাঁর। ৭১ বছর বয়সি বৃদ্ধকে গত বৃহস্পতিবার হঠাৎই নজরে পড়ে হ্যাম রেডিওর সাগরের প্রতিনিধি দিবস মন্ডলের। তিনি যোগাযোগ করেন স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে। ব্লক প্রশাসন বৃদ্ধকে একটি ফ্লাড শেল্টারে থাকার ব্যবস্থা করে দেয়। স্থানীয় হরিণবাড়ির একটি ক্লাবের সদস্যরা এই ক’দিন তাঁর খাওয়াদাওয়া ও দেখভালের দায়িত্ব নেন।
ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিও ক্লাবের (হ্যাম রেডিও) সম্পাদক অম্বরীশ নাগ বিশ্বাস জানান, হ্যাম রেডিওর সাগরের প্রতিনিধির কাছ থেকে জানতে পেরে বৃদ্ধের ছবি নিয়ে তাঁর পরিবারের খোঁজে নেমে পড়ে হ্যাম রেডিও। জানা যায়, উদ্ধার হওয়া ওই বৃদ্ধের নাম তুলসী রাজবংশী। তিনি বিহারের রাজৌলির মোহবতপুরের বাসিন্দা। চারবছর আগে হারিয়ে যাওয়া বাবার ছবি দেখে তাঁকে চিনতে পারেন বছর বাইশের ছেলে লালকেশর রাজবংশী। শনিবার বৃদ্ধকে ফিরিয়ে নিতে আসেন তাঁর ছেলে ও প্রতিবেশী মহেশ কুমার। সুন্দরবন পুলিশ জেলার পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, হ্যাম রেডিওর তৎপরতায় এদিন উদ্ধার হওয়া ওই ব্যক্তিকে তাঁর প্রিয়জনদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। এতবছর ধরে পরিবার থেকে দূরে থাকা প্রবীণ মানুষটিকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে পেরে আনন্দিত সুন্দরবন জেলা পুলিশ প্রশাসন।
বৃদ্ধের পরিবারসূত্রে জানা গিয়েছে, পড়শিদের সঙ্গে গঙ্গাসাগর মেলায় এসে হারিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। টানা তিনদিন ধরে সাগরমেলা চত্বরে তাঁরা খুঁজেওছিলেন বৃদ্ধকে। কিন্তু লক্ষ লক্ষ পূণ্যার্থীর ভিড়ে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি তাঁকে। বাধ্য হয়েই দেশে ফিরতে হয়েছিল তাঁদের। এতবছর পর বাবাকে ফিরে পেয়ে আনন্দে দু’চোখের জল আর বাঁধ মানেনি ছেলে লালকেশরের। ধন্যবাদ জানিয়েছেন সকলকেই।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.