দিব্যেন্দু মজুমদার, হুগলি: কয়েকমাস ধরেই চন্দননগরের বারাসতে এক মিষ্টির দোকানের সামনের ফুটপাতে বসে ছিলেন বৃদ্ধা। নামহীন, পরিচয়হীন মহিলার জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করেন অনেকেই। জিজ্ঞাসু চোখে তাকিয়ে থাকতে ইতিউতি। হাত পাতলেই স্থানীয়রা নিয়মিতভাবে খাবার দিতেন তাঁকে। তিনি কে? কোথা থেকে আসছেন জিজ্ঞাসা করলেও বলতে পারতেন না কিছুই। অবশেষে অশীতিপর বৃদ্ধার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে সাহায্যের জন্য হাত বাড়ান হ্যাম রেডিওর অম্বরীশ নাগ বিশ্বাস। হ্যাম রেডিওর উদ্যোগেই সম্ভব হয় অসাধ্যসাধন। গুজরাট থেকে খুঁজে বার করা হয় বৃদ্ধার পরিজনদের।
ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিও ক্লাবের সম্পাদক অম্বরীশ নাগ বিশ্বাস জানান, “বৃদ্ধার খবর পেয়ে প্রথমে আমরা তাঁর সঙ্গে কথা বলি। আমাদের ক্লাবের সদস্য সৌরভ গোস্বামী ওই বৃদ্ধার সঙ্গে দেখা করতে যান। প্রায় দেড় ঘন্টা ধরে বৃদ্ধার সঙ্গে কথা বলে তাঁর ভয়েস রেকর্ড করা হয়। তবে বৃদ্ধার ছবি তুলতে গেলে বিরক্ত বোধ করতেন তিনি। বস্তায় মুখ ঢাকতেন বারবার। বৃদ্ধার ভাষা শুনে মনে হয়েছে গুজরাটের টান রয়েছে তাঁর কথায়।” এরপরই ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিও ক্লাবের সদস্যরা গুজরাটের হ্যাম রেডিও অপারেটরের সঙ্গে কথা বলেন। হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে গুজরাটের হ্যাম রেডিওর সম্পাদকের কাছে পাঠান হয় বৃদ্ধার ছবি ও ভয়েস রেকর্ড। বৃদ্ধার কথার মধ্যে থেকে গুজরাটের অনেকগুলি জায়গারও উল্লেখ পান তারা।
ভয়েস রেকর্ডে পাওয়া গুজরাটের প্রতিটি জায়গা খুঁজে দেখা যায়, প্রতিটি স্থানের দূরত্ব কম করে দেড়শো কিলোমিটারের মধ্যে। গুজরাটের হ্যাম রেডিওর সদস্যরা সমস্ত জায়গায় তল্লাশি চালিয়ে শেষ পর্যন্ত গুজরাটের ভীরপুরের অন্ডালা গ্রাম থেকে বৃদ্ধার পরিবারের খোঁজ পান। সেখানে বৃদ্ধার মেয়ে রেখা সোলাঙ্কি ও জামাই জেঙ্কি সোলাঙ্কির খোঁজ পাওয়া যায়।। তারা বৃদ্ধার ছবি দেখে চিনতে পারেন। মায়ের খোঁজ পেয়ে আনন্দে আত্মহারা বৃদ্ধার মেয়ে। এরপর হ্যাম রেডিও ক্লাবের পক্ষ থেকে সেখানকার গ্রামীণ পুলিশ সুপারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।
ইতিমধ্যে রবিবার বৃদ্ধাকে বাড়ি নিয়ে যেতে গুজরাট থেকে ট্রেনে রওনা দেয় তার পরিবার। তবে রাস্তা ভুলে বৃদ্ধার মাঝে মধ্যেই চলে যাওয়ায় অভ্যাস উদ্বেগ বাড়ায় হ্যাম রেডিওর সদস্যদের। তাই চন্দননগরের জেলাশাসকের সঙ্গে কথা বলে বৃদ্ধাকে ভর্তি করা হয় চন্দননগর মহকুমা হাসপাতালে। বৃদ্ধার প্রাথমিক চিকিৎসাও চলে সেখান। হাসপাতাল থেকেই বৃদ্ধাকে তার পরিজনদের হাতে তুলে দেওয়া হবে। মাকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার খুশিতে আনন্দের বন্যা পরিবারে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.