দেবব্রত মণ্ডল, বারুইপুর: নিজেদের স্কলারশিপের টাকা সুরক্ষিত রাখতে এবার কন্যাশ্রী প্রাপ্ত ছাত্রীদের সাইবার প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করল কলেজ কর্তৃপক্ষ। জীবনতলা রোকেয়া কলেজের প্রিন্সিপাল হিমাদ্রি ভট্টাচার্য চক্রবর্তীর সেই পরিকল্পনামতো বৃহস্পতিবার কলেজে হয়ে গেল কর্মশালা। সচেতনতা বৃদ্ধির এই কর্মশালায় অংশ নিয়েছিলেন প্রায় সব ছাত্রীই। বুঝে নিলেন, ব্যাংকের নাম করে ভুয়ো ফোনের মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নেওয়া থেকে কীভাবে নিজেদের সুরক্ষিত রাখবেন।
জীবনতলা কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী নাদিরা পেয়াদা। কয়েকদিন আগে তাঁর ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে ঢুকেছে কন্যাশ্রীর ২৫ হাজার টাকা। সেই টাকা প্রাপ্তির আনন্দে তিনি যখন বাড়ি ফিরছিলেন, সেসময়ই ব্যাংক থেকে একটি ফোন আসে তাঁর কাছে। এটিএম কার্ড ও ব্যাঙ্কের পাশ বইয়ের উল্লেখ করে জানানো হয়, ব্যাঙ্ক থেকে বলা হচ্ছে। নাদিরার কাছে নতুন এটিএম কার্ডের উপরের সংখ্যা জানতে চাওয়া হয়। এটিএম কার্ড বন্ধ হয়ে যাবে, এই ভেবে নাদিরা বলে দেন এটিএমের কার্ডের সেইসব সংখ্যা। কার্ডের উপরে থাকা সংখ্যা বলতেই একের পর এক করে তিন দফায় তুলে নেওয়া হয় সেই টাকা। মোবাইলের মেসেজ মারফত তিনি জানতে পারেন, কন্যাশ্রীতে প্রাপ্ত তাঁর ২৫ হাজার টাকার পুরোটাই তুলে নেওয়া হয়েছে। পরের দিন ব্যাংকে গিয়ে নাদিরা গোটা বিষয়টি জানান। ব্যাংক কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়, কোনও টাকা কাটা হয়নি। কোনও সাইবার ক্রাইমের শিকার হয়েছেন তিনি। যে নম্বর থেকে ফোন করা হয়েছিল তাঁকে, সেই নম্বরটি তিনি দেন জীবনতলা থানায়। থানার ওসি সুভাষ ঘোষ পুলিশ মারফত ব্যাপারটি জানার চেষ্টা করেন। কিন্তু আজও তার কোনও কিনারা হয়নি। নাদিরার এই ঘটনা শোনার পর জীবনতলা রোকেয়া মহাবিদ্যালয়ের প্রিন্সিপাল হিমাদ্রি ভট্টাচার্য চক্রবর্তী ঠিক করেন, সাইবার ক্রাইম নিয়ে পাঠ দেওয়া হবে ছাত্রীদের। আর সেই মতো বৃহস্পতিবার কলেজে অনুষ্ঠিত হল সাইবার ক্রাইম ও নারীপাচার নিয়ে কর্মশালা।
[দুর্ঘটনায় আহত, স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বসেই উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিল ছাত্র]
মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্নের প্রকল্প কন্যাশ্রী। প্রতি মাসে নিজেদের অ্যাকাউন্টে তার টাকা পেয়ে যান কন্যারা। আঠেরো বছর বয়স পেরোলেই এককালীন মেলে ২৫ হাজার টাকা। সেই টাকা দিয়েই চলে বহু ছাত্রীর পড়াশোনা। আর সেই টাকাকেই টার্গেট করেছেন সাইবার ক্রাইমের হ্যাকাররা। সরকারি টাকা খোয়া যাওয়ায় নাদিরার মত সমস্যায় পড়ছেন বহু ছাত্রী। নতুন করে আর যাতে কেউ এই সমস্যার সম্মুখীন না হন, সেজন্য এই সেমিনারের কর্মসূচি। এবিষয়ে কলেজের প্রিন্সিপাল বলেন, “সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে প্রতিটা কলেজে ছাত্রছাত্রীদের সাইবার ক্রাইমের পাঠ দেওয়ার নির্দেশ আছে। আমরা সেই বিষয়ে জ্ঞান অর্জনের জন্য এই সেমিনারের আয়োজন করেছি। যাতে সহজেই কেউই এই সাইবার ক্রাইমের শিকার না হন। শুধু তাই নয়, নারী ও শিশু পাচার রোধে কীভাবে ব্যবস্থা নিতে পারেন ছাত্রছাত্রীরা, তার জন্য তাদের কী করনীয় তাও শেখানো হল।” অন্যদিকে, ক্যানিং ২ ব্লকের বিডিও দেবব্রত পাল জানান, তাঁর এলাকাটি পিছিয়ে পড়া। নাবালিকা কিম্বা বাল্যবিবাহ পর্যন্তও হয় প্রশাসনের নজর এড়িয়ে। এসব বন্ধ করতে কড়া আইনই নয়, প্রয়োজন জনসচেতনতা। সচেতনতা না বাড়ালে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। জীবনতলা কলেজের ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে সেখানেও এধরনের কর্মশালা করার কথা ভাবছেন ক্যানিং ২-এর বিডিও।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.