স্টাফ রিপোর্টার, বর্ধমান ও কাটোয়া: জিএসটি’র (GST) গেরোয় এবার পূর্ব বর্ধমানের কয়েকটি পুরসভা। বেসরকারি মোবাইল পরিষেবা সংস্থা পুর এলাকায় কাজ করায় পুর কর্তৃপক্ষ ফি নিলেও সার্ভিস ট্যাক্স জমা না করার অভিযোগ তুলে বর্ধমান ও কাটোয়া পুরসভার একটি করে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করে দেওয়া হয়েছে। কালনা পুরসভাতেও একই পরিস্থিতি হতে পারে বলে জানা গিয়েছে। যা নিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। তাদের অভিযোগ, জিএসটি আদায় করেও রাজ্যের ভাগ দিচ্ছে না কেন্দ্র। এবার সেই জিএসটির অজুহাতে পুরসভার অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করে পুর পরিষেবাও বন্ধ করতে চাইছে কেন্দ্রীয় সরকার।
জানা গিয়েছে, ২০১৫-১৬ সাল নাগাদ পূর্ব বর্ধমান জেলায় ওই মোবাইল পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থা অপটিক্যাল ফাইবার বসানোর কাজ করে। তার জন্য বিভিন্ন পুরসভাকে তারা নির্দিষ্ট হারে ফি জমা দেয়। সেই সময় বর্ধমান পুরসভাকে তারা ১ কোটি ৫ লক্ষ টাকা ফি দিয়েছিল। এরপর তৎকালীন সার্ভিস ট্যাক্স ডিপার্টমেন্ট থেকে পুরসভাকে চিঠি দিয়ে ১৩ লক্ষ টাকা সার্ভিস ট্যাক্স জমা দিতে বলা হয় ওই ফি’র পরিপ্রেক্ষিতে। যদিও পুর কর্তৃপক্ষ চিঠি দিয়ে জানান, এক্ষেত্রে তা দিতে হয় না। যদিও পরবর্তীতে বর্ধমান পুরসভা তা দিতে সম্মত হয়। ইতিমধ্যে সার্ভিস ট্যাক্সের পরিবর্তে সেন্ট্রাল গুডস অ্যান্ড সার্ভিস ট্যাক্স বা জিএসটি চালু হয়। ফলে পুরসভার ওই করের অঙ্ক বেড়ে ১৮ লক্ষ ৯৯ হাজার ৪৩২ টাকা হয়ে যায়। ওই মোবাইল সংস্থার থেকে জিএসটি বাবদ অর্থ নিয়ে পুরসভা তা জমাও করে দেয়। তা সত্ত্বেও জিএসটি জমা না দেওয়ার কথা জানিয়ে এই পুরসভার একটি অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করতে বলে জিএসটি কর্তৃপক্ষ। ব্যাংক তা করেও দেয়।
একইভাবে কাটোয়া পুরসভারও একটি অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করা হয়েছে। সার্ভিস ট্যাক্সের সুদ বাবদ ৬ লক্ষ টাকা না মেটানোর অভিযোগ তুলে পুরসভার প্রধান অ্যাকাউন্টাই ফ্রিজ করা হয়েছে। পুর প্রশাসক তথা তৃণমূল বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “বছর তিনেক আগে একটি মোবাইল সংস্থা শহরে কিছু কাজ করে। তখন পুরসভা থেকে কিছু ফি নেওয়া হয়েছিল। এরপর সেন্ট্রাল গুডস অ্যান্ড সার্ভিস ট্যাক্স ডিপার্টমেন্ট আমাদের কাছে এর সার্ভিস ট্যাক্স ধার্য করে। আমরা তখন প্রায় ২ লক্ষ টাকা দিয়েও দিই। তারপর যখন ওই সংস্থাকে জানানো হয় ওই ২ লক্ষ টাকা পুরসভাকে মিটিয়ে দিতে তখন সংস্থার তরফে আমাদের জানানো হয় কেন্দ্র সরকার তাদের সার্ভিস ট্যাক্স মকুব করেছে। সার্ভিস ট্যাক্স আমরাও ডিপার্টমেন্টকে জানানো হয়েছিল। তখন আমাদের বলা হয়েছিল, পুরসভার থেকে যে ট্যাক্স নেওয়া হয়েছে সেটা ভুল হয়েছে। ওখানেই বিষয়টি মিটমাট হয়ে যায়। এখন আবার কোনও কিছু না জানিয়ে ৬ লক্ষ টাকা বকেয়া বলে অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করে দিয়েছে।”
বর্ধমান পুরসভার কার্যনির্বাহী আধিকারিক অমিত গুহ জানান, ২০১৮ সালে জিএসটি চালু হলে সব টাকাই মিটিয়ে দেয় পুরসভা। সেই সংক্রান্ত সমস্ত কাগজপত্র রয়েছে। তারপরেও অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করার বিষয়টা খুবই বিস্ময়ের। পুরসভার আইনজীবী বিষয়টি দেখছেন। দ্রুত সমস্যা মিটে যাবে বলে তিনি আশ্বাস দিয়েছেন। তবে যে অ্যাকাউন্টটি ফ্রিজ করা হয়েছে তা পুরসভার প্রধান অ্যাকাউন্ট নয়। তাই পুরসভা পরিচালনার ক্ষেত্র বর্ধমান পুরসভা কর্তৃপক্ষের কোনো সমস্যা হবে না। কিন্তু কাটোয়ার প্রধান অ্যাকাউন্টটাই ফ্রিজ করায় তারা সমস্যায় পড়েছে। পুর প্রশাসক রবীন্দ্রনাথবাবু জানান, এই অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করা না গেলে পুরসভা চালাতে সমস্যা হবে। সব কাজ বাধাপ্রাপ্ত হবে। কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন রবীন্দ্রনাথবাবু। কেন্দ্রের দমনমূলক নীতি বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.