বিপ্লব দত্ত, কৃষ্ণনগর: খাবার খাওয়ার জন্য পয়সা জোগাড়ের চেষ্টা করছিল নাতি। এই অপরাধে সাত বছরের শিশুকে লাগাতার গরম খুন্তির ছেঁকা দেওয়ার অভিযোগ উঠল ঠাকুমার বিরুদ্ধে। অভিযোগ, শুধু ছেঁকাই নয় লাঠির বাড়ি পিঠে পড়ার পাশাপাশি অকথ্য লাথি মারা হয় বলেও অভিযোগ। এদিকে ছেঁকার জেরে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে আক্রান্ত শিশুপুত্র সজল নাথ। খবর পেয়ে প্রতিবেশীরা অভিযুক্ত ঠাকুমা আকাশী নাথকে বেধড়ক মারধর করেছে। আক্রান্ত শিশুটিকে উদ্ধার করে স্থানীয় বাদকুল্লা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভরতি করা হয়েছে। এর জেরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে নদিয়ার শান্তিপুর থানার আমতলা এলাকায়।
জানা গিয়েছে, সজল নাথের ছ’দিন বয়সে মা তাকে ছেড়ে চলে যান। এই ঘটনার এক বছরের মধ্যেই নিরুদ্দেশ হন বাবা। তারপর থেকেই জেঠু রতন নাথ ও জেঠিমা পূজা নাথের সংসারেই থাকছিল ছোট্ট সজল। গত ২৪ আগস্ট বাপের বাড়িতে যান পূজাদেবী। এই সময় ঠাকুমার তত্ত্বাবধানেই ছিল সজল। একদিন খিদে সহ্য করতে না পেরে বাড়ির বাতিল জিনিসের মধ্যে পড়ে থাকা ছোট গ্যাস সিলিন্ডারটিকে ভাঙাচোরা ওয়ালাকে দেওয়ার চেষ্টা করছিল। সিলিন্ডারটি দীর্ঘদিন ধরে অকেজো হয়ে পড়ে আছে। এটা দিয়ে টাকা পেলে খাবার কিনে খাবে সে। এইভেবে সিলিন্ডারটি দিতে যেতেই প্রতিবেশীদের একজনের নজর পড়ে যায়। সঙ্গেসঙ্গে খবর পৌঁছায় ঠাকুমার কাছে। অভিযোগ, খবর পেয়েই সজলকে টানতে টানতে বাড়ি নিয়ে আসে আকাশী নাথ। এরপর গরম খুন্তির লাগাতার ছেঁকা দেওয়া হয় শিশুটির হাত, পা-সহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায়। ছেঁকার জেরে হাতে পায়ে দগদগে ঘা হয়ে গিয়েছে। শিশুটির আঘাত গুরুতর বুঝে অপরাধ চাপা দেওয়ার চেষ্টা করে ওই বৃদ্ধা। বাড়িতে থাকা ওষুধপত্র দিয়ে সারানোর চেষ্টা করা হয়। তবে তাতে হিতে বিপরীত হওয়ায় আক্রান্ত শিশুকে বাড়িতে আটকে রেখে পালানোর চেষ্টা করছিল অভিযুক্ত। এই সময়ই বাপের বাড়ি থেকে ফিরে আসেন পূজাদেবী। বাড়িতে ঢুকতেই দেখেন বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করা আছে। ঘরে ঢুকতেই দেখতে পান অন্ধকারের মধ্যে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে সজল। ওই গৃহবধূ নিজেই প্রতিবেশীদের ডেকে বিষয়টি জানালে তড়িঘড়ি আক্রান্ত শিশুকে উদ্ধার করে স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভরতি করা হয়। প্রতিবেশীরা শিশুটিকে উদ্ধারের পর অভিযুক্ত আকাশী নাথকে খুঁজে বের করে বেধড়ক মারধর করে।
এই ঘটনায় পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয়রা। তাঁদের দাবি, শিশু নির্যাতনের অভিযোগ নেয়নি শান্তিপুর থানার পুলিশ। এদিন ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় যন্ত্রণায় কাহিল শিশুটির মুখে থেকে লালা গড়িয়ে পড়ছে। ক্ষতগুলি এখনও টাটকা। এদিকে মারধরের পরেই উধাও হয়েছে অভিযুক্ত আকাশী নাথ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.