রমণী বিশ্বাস, তেহট্ট: লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকা জমিয়ে বন্ধ পুজো শুরু করলেন গ্রামের মহিলারা। শুধু লক্ষ্মীর ভাণ্ডার নয়, নিজেদের বিধবা ভাতা, বার্ধক্য ভাতার টাকাও পুজোর কাজে দিচ্ছেন তাঁরা। ফলে অর্থের অভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়া পুজো ফের শুরু হতে চলেছে নদিয়ার মুরুটিয়া থানার দক্ষিণ কৃষ্ণপুর গ্রামে (Gram Banglar Durga Puja 2024)। ৫২ জন মহিলা রয়েছেন পুজো কমিটিতে।
নদিয়ায় ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে দক্ষিণ কৃষ্ণপুর গ্রাম। ছোট গ্রামে, অধিকাংশ মানুষ শ্রমজীবী। একটা সময়ে গ্রামে বিদ্যুৎ না থাকলেও হ্যাচাকের আলোতে দুর্গাপুজো হত। বছর ঘুরে মায়ের অপেক্ষায় থাকতেন গ্রামবাসী।
তবে অর্থের অভাবে সেই পুজো বন্ধ হয়ে যায়। গ্রামের পুজো বন্ধ হওয়ায় বাইরে কোথাও পুজো দেখতে যাওয়া অনেকের কাছেই বিলাসিতার সমান। বাঙালির বড় উৎসব দুর্গাপুজোর আনন্দ থেকে বঞ্চিত হচ্ছিল গ্রামের ছোট-বড় সকলেই।
সেই থেকেই কয়েকজন মহিলার মাথায় আসে গ্রামে ফের পুজো শুরু করলে কেমন হয়। কিন্তু খরচ অনেক। কয়েকজনের টাকায় তা সম্ভব নয়। দরকার অনেককে। গ্রামে ঘুরে বাকি মহিলাদেরও পুজো শুরু করার কথা জানান সুইটি বিশ্বাস, চুমকি পাল, পিয়ালি মণ্ডলরা। বিষয়টি বলতেই বাকিরাও এক কথায় রাজিও হয়ে যায়। যেমন ভাবা তেমন কাজ। শুরু হয় পুজোর প্রস্তুতি।
পুজো কমিটির সম্পাদিকা সুইটি বিশ্বাস বলেন, “আমরা ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের প্রত্যন্ত গ্রামে বসবাস করি। গ্রামে কোনও দুর্গাপুজো না হওয়ায় আনন্দ থেকে বঞ্চিত হচ্ছিলাম। তাই গ্রামের সকল মহিলা একত্রিত হয়ে লক্ষ্মীর ভান্ডার, বার্ধক্য ভাতা, বিধবা ভাতা টাকা জমিয়ে পুজো করার সিদ্ধান্ত নিই।”
এবারের পুজোর খরচ ধরা হয়েছে ৭৫ হাজার টাকা। সকলের টাকা কোষাধ্যক্ষের কাছে জমাও পড়ে গিয়েছে। প্রতিমা তৈরির বরাত দেওয়া হয়েছে। জোর কদমে চলছে মণ্ডপ তৈরির কাজ। প্রথম বর্ষের পুজো তাই সরকারি কোনও অনুদান পাওয়ার কথা নয়। তবে আগামী বছর যাতে সরকারি অনুদান পাওয়া যায় সে জন্য থানায় আবেদন জানাবেন বলে জানিয়েছেন সুইটি।
গ্রামের পঞ্চায়েত প্রধান কার্তিক মণ্ডল জানান, ‘গ্রামটিতে সীমিত সংখ্যক পরিবারের বাস, অধিকাংশ পরিবার কৃষিজীবী। আগে গ্রামে একটি দুর্গাপুজো হত। আর্থিক অনটনের কারণে অনেকদিন আগেই সেই পুজো বন্ধ হয়ে যায়। গ্রামের মহিলারা রাজ্য সরকার থেকে পাওয়া লক্ষীর ভাণ্ডার, বার্ধক্য ভাতা, বিধবা ভাতার টাকা দিয়ে এই বছর প্রথম দুর্গাপুজো শুরু করছে।’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.