টিটুন মল্লিক, বাঁকুড়া: ৯টি তোপধ্বনিতে শুরু হল ১০২২ বছরের প্রাচীন মল্লরাজাদের দুর্গাপুজো। এই পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে আছে ঐতিহ্য, বিষ্ণুপুরের মল্ল রাজাদের ইতিহাস। জড়িয়ে আছে সাধারণ মানুষের আবেগ। মল্লরাজাদের রাজধানীতে অনেকগুলি সর্বজনীন দুর্গাপুজো (Durga Puja 2023) হলেও এই পুজো সবদিক দিয়ে অনন্য। তাই দীর্ঘদিনের প্রথা মেনে জিতাষ্টমীর দিন শুরু হল এই মন্দিরের পুজো। বিষ্ণুপুরের মল্লরাজাদের পরিবারের এই পুজো চলবে আঠারো দিন ধরে। অতীতের আড়ম্বর না থাকলেও পুজোর আচার, আচরণে, নিয়মে বা ঐতিহ্যে ভাঁটা পড়েনি এতটুকুও। পুরনো রীতি মেনেই রাজপরিবারে ঠাকুর দালানে দেবীর পুজোর আয়োজন করেন এই পরিবারের সদস্যরা।
সন্ধ্যায় হয়েছে বিল্ববরণ। জিতাষ্টমীর দিন আনা হয়েছে বড় ঠাকরুণকে। নিয়ম মেনে দেওয়া হয়েছে ৯টি তোপধ্বনি। এখানে আঠারো দিন ধরে পুজো হয়। এখানে পুজিতা দেবী মৃন্ময়ী, মল্লরাজাদের কুলদেবী। মা মৃন্ময়ী এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠা করেন মল্লরাজ জগত মল্ল। ৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে। কথিত আছে যে আগে মল্লরাজাদের রাজধানী ছিল জয়পুরের প্রদুম্ননগর। এই পরিবারের ১৯তম রাজা জগত মল্ল ৯৯৪ সালে রাজধানী সরিয়ে নিয়ে আসেন বিষ্ণুপুরে। ৯৯৭ সালে এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠা করেন। গঙ্গা মাটির তৈরি বিগ্রহ সেই সময় থেকেই পুজিতা এখানে। সেই সময় পুজোর জৌলুস ছিল আকাশচুম্বী। অন্যান্য জায়গায় কালিকাপুরাণ মতে পুজো হলেও একমাত্র বিষ্ণুপুর রাজবাড়ির দুর্গাপূজা হয় বলি নারায়ণী মতে। আগে এই পুজোতে বলির প্রচলন থাকলেও মল্লরাজা হাম্বীর বৈষ্ণব ধর্মে দীক্ষিত হওয়ার পর বলিদান প্রথা বন্ধ হয়ে যায়।
সেই সময় থেকেই শব্দকে ব্রহ্ম রূপে দেখার শুরু। চালু হয় তোপধ্বনি দেওয়ার রীতি। সেই প্রাচীন ঐতিহ্য ধরে রেখে আজও দুর্গাপুজার দিনগুলিতে নির্ঘণ্ট মেনে গর্জে ওঠে কামান। এই পুজোর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল পট পুজো। বড় ঠাকরুণ, মেজ ঠাকরুণ ও ছোট ঠাকরুণ নামের তিনটি পট আনা হয়। মন্দিরে দেবী প্রতিমার পাশে তিনটি নির্দিষ্ট জায়গায় পুজো হয় তিনটি পটের।
বড় ঠাকরুণের ক্ষেত্রে মহাকালী, মেজ ঠাকরুণের ক্ষেত্রে মহালক্ষ্মী, ছোট ঠাকরুণের ক্ষেত্রে মহা সরস্বতী স্তোত্রপাঠ করা হয়। জিতাষ্টমীর দিন আনা হয়েছে বড় ঠাকরুণকে। দেবীপক্ষের চতুর্থীতে শুরু হয় মেজ ঠাকরুণের পুজো। আর মহাসপ্তমীর দিন নিয়ে আসা হয় ছোট ঠাকরুণকে। বিষ্ণুপুরে অনেকগুলি পুজো হলেও এই পুজোর সাথে জড়িয়ে আছে ঐতিহ্য ও আবেগ। ঐতিহ্য বজায় রেখে অষ্টমীর পুজো হয় ধুমধাম করে। কামানের গর্জনে আরম্ভ হয় সন্ধিপুজো।
বিজয়া দশমীর দিন মা মৃন্ময়ীর পর তিন ঠাকরুণের ঘট বিসর্জন দেওয়া হয়। তারপর পটগুলি চলে যায় রাজবাড়ির অন্দরে। রাজ পরিবারের সদস্য জ্যোতিপ্রসাদ সিংহ ঠাকুর জানান, জিনিসপত্রের দাম বাড়লেও তাঁরা এই পুজার ঐতিহ্যে ভাঁটা পড়তে দেননি। পুজোর জন্য সামান্য অনুদান দেয় বিষ্ণুপুর পুরসভা। পরিবারের সম্পত্তি থেকে আসে কিছু টাকা। বাকি খরচ বহন করেন পরিবারের সদস্যরা।
দেখুন ভিডিও:
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.