সুমিত বিশ্বাস: লকডাউনে উপার্জনহীন মানুষজনের যাতে কোনওভাবেই খাদ্যাভাব তৈরি না হয়, সেদিকে নজর রেখে বড়সড় সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য সরকার। আগামী মে মাস থেকে রাজ্য খাদ্য সুরক্ষা যোজনা-২ (RKSY–2)তে থাকা প্রাপকরাও ফি মাসে বিনামূল্যে পাঁচ কেজি করে চাল পাবেন। এই যোজনা-১ এ থাকা গ্রাহকদেরও আপাতত গম বাদ রেখে ওই সমপরিমাণ চাল দেওয়া হবে। ফলে করোনা পরিস্থিতিতে এই গণবন্টনে রেশন কার্ড হোল্ডার ও কূপন পাওয়া গ্রাহক মিলিয়ে বাংলার মোট দশ কোটিরও বেশি মানুষকে বিনামূল্যে রেশনের চাল, আটা দেবে রাজ্যের খাদ্য ও সরবরাহ বিভাগ।
এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে বিপুল পরিমাণ প্রয়োজনীয় চাল জোগানে আগামী মে মাস থেকেই জেলায় জেলায় ধান কেনার কাজও শুরু হবে। সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং–র কথা মাথায় রেখে ‘অন্নদাত্রী’ অ্যাপের মাধ্যমে কৃষকের গোলা থেকে এই ধান সংগ্রহ করে নেবে সংশ্লিষ্ট দপ্তর। এই অ্যাপের নামও মুখ্যমন্ত্রীরই দেওয়া। আরটিজিএসের মাধ্যমে টাকাও ঢুকে যাবে কৃষকের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে। এ নিয়ে বিভাগীয় মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, “সবমিলিয়ে আমরা দশ কোটির বেশি মানুষকে বিনামূল্যে রেশন দেব। বিপুল চালের জোগানের জন্য মে মাস থেকে অ্যাপের মাধ্যমে জেলায় জেলায় ধান কেনার কাজ শুরু হবে।”
এতদিন খাদ্য সুরক্ষা যোজনা–১ (RKSY-1) এ কার্ড পিছু প্রাপকরা দু’কেজি করে চাল ও তিন কেজি করে গম পাচ্ছিলেন বিনামূল্যে। কোনও প্রাপক গম নিতে না চাইলে তাকে চাল দেওয়া হচ্ছিল। তবে আগামী মে মাস থেকে রাজ্য খাদ্য সুরক্ষা যোজনার দুই ক্ষেত্রেই পাঁচ কেজি করে চাল দেওয়া হবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এখনও এই বিষয়ে আদেশনামা জারি না হলেও মঙ্গলবার জেলাশাসকদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে এই বড় পদক্ষেপের কথা জানিয়ে দেন রাজ্যের খাদ্য ও সরবরাহ বিভাগের নতুন সচিব পারভেজ আহমেদ সিদ্দিকি। এই বিশেষ প্যাকেজে রাজ্য খাদ্য সুরক্ষা যোজনার দুটি ক্ষেত্রে বিনামূল্যে চাল আগামী জুলাই মাস পর্যন্ত দেওয়া হবে। সাধারণভাবে গনবন্টনে রাজ্য খাদ্য সুরক্ষা যোজনা-২ এ কার্ড পিছু এক কেজি করে চাল ১৩ টাকা কেজি দরে এবং এক কেজি করে গম, ন’টাকা কেজি দরে দেওয়া হয়। দুটি ক্ষেত্রেই আপাতত গম তুলে দেওয়ায় বিপুল পরিমানে চাল জোগাড়ে মে মাসের পয়লা তারিখ থেকেই জেলায় জেলায় নতুন করে ধান কেনার কাজ শুরু করবে খাদ্য ও সরবরাহ বিভাগ।
রাজ্যের যে সব জেলায় বোরো ধান চাষ হয় না, সেখানেও কৃষকের ঘরে মজুত থাকা ধান তাঁদের সম্মতিতে কিনে নেওয়া হবে। এই কাজে কৃষককে অর্থ প্রদানের ক্ষেত্রেও সামাজিক দূরত্বের কথা মাথায় রেখেছে সরকার। ‘ধান দিন চেক নিন’ নামে যে প্রকল্প ছিল আপাতত তা স্থগিত করে সেই আগের পদ্ধতি অর্থাৎ আরটিজিএসের মাধ্যমে কৃষকের ব্যাংক অ্যাকউন্টে টাকা পৌঁছে দেওয়া হবে। ফলে চেক নিয়ে আর ব্যাংকে লাইন দিতে হবে না। রাজ্যখাদ্য সুরক্ষা যোজনা–১ এ দু’কোটি ৬৫ লক্ষ, যোজনা–২এ এক কোটি ৪৫ লক্ষ-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্র মিলিয়ে মোট প্রাপকের সংখ্যা ৯ কোটি ৯১ লক্ষ। এছাড়া কূপনের মাধ্যমে রেশন পাচ্ছেন ৬৫ লক্ষ প্রাপক।
ছবি: সুনীতা সিং।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.