দীপঙ্কর মণ্ডল: দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে রাজ্যের সঙ্গে রাজ্যপালের সংঘাত লেগেই রয়েছে। রাজ্যের বিরুদ্ধে সবসময়ই ক্ষোভ উগরে দেন তিনি। চলতি মাস পাহাড়েই কাটান রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় (Jagdeep Dhankhar)। দেখা করেন অনেকের সঙ্গেই। মাসের শেষে পাহাড় সফরে তাঁর পর্যালোচনার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ দিতে গিয়ে ফের রাজ্য সরকারকেই দুষলেন সাংবিধানিক প্রধান। বাংলায় ইতিহাসের সবচেয়ে খারাপ পর্যায় চলছে বলেও কটাক্ষ করলেন তিনি।
দার্জিলিংয়ের (Darjeeling) রাজভবনে এই প্রথমবার সাংবাদিক বৈঠকের আয়োজন করা হয়। সেখানেই প্রশাসনিক ক্ষেত্রে বাংলার সরকারের বিরুদ্ধে জোরাল আক্রমণ শানান রাজ্যপাল। তিনি বলেন, “বাংলার সংস্কৃতিতে ঔদ্ধত্যের কোনও স্থান নেই। তা সত্ত্বেও অনেকের কথার মাধ্যমে শক্তি এবং ঔদ্ধত্য প্রকাশ পায়। যা আমাকে সত্যিই ব্যথিত করে। প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তিদের কাছে আমার একটাই অনুরোধ সংবিধান মেনে কাজ করুন। গণতন্ত্রের বিরোধী হবেন না। রাজনৈতিক দলদাস হয়ে কাজ করবেন না। জানি সত্যি তা বড় কঠিন। কারণ আপনাদের হাত-পা বাঁধা। তবু যারা এ কাজ করছেন তাদের বিরোধিতা করুন।” মাসজুড়ে বহু মানুষের সঙ্গে কথা বলে একাধিক তথ্য সংগ্রহ করেছেন বলেও জানান রাজ্যপাল। ধনকড়ের দাবি, এই সময়ের মধ্যে একাধিক জটিল বিষয় উন্মোচিত হয়েছে। প্রশাসনিক ক্ষেত্রে সাংবিধানিক নিয়ম মেনে চলা হচ্ছে না বলে আরও একবার অভিযোগ করেন তিনি।
রাজ্যের বিরোধী শিবিরের পাশে বারবার দাঁড়িয়েছেন রাজ্যপাল। সে কারণে তাঁর বিরুদ্ধে গেরুয়া শিবিরের হয়ে কাজ করার অভিযোগও উঠেছে। সোমবারের সাংবাদিক বৈঠকে আরও একবার বিরোধীদের পক্ষে জোরাল সওয়াল করেন জগদীপ ধনকড়। তিনি বলেন, “বিরোধীদের সমস্ত কাজেই বাধা দেওয়ার চেষ্টা চলছে। তাঁদের এতটুকু জায়গা দেওয়া হচ্ছে না। বিরোধীদের কোনও কার্যকলাপেই মিলছে না অনুমতি। জরুরি অবস্থা জারির মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে রাজ্যে।” জিটিএ’র কাজকর্মেও স্বচ্ছতা না থাকার অভিযোগে সরব রাজ্যপাল। এদিকে, সম্প্রতি কোচবিহার দক্ষিণের বিধায়ক মিহির গোস্বামী (Mihir Goswami) অভিযোগ করেন, রাজ্য সরকারের আমলেও পাহাড়ে কোনও উন্নয়ন হয়নি। বিজেপিতে যোগ দেওয়া সেই বিধায়কের অভিযোগকেই এদিন কার্যত সিলমোহর দিলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। তাঁর অভিযোগ, পাহাড়ে জল, রাস্তা এবং কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে সমস্যা থাকলেও তা সমাধানে বাংলার সরকার কোনও চেষ্টা করেনি। রাজ্যের প্রত্যেক মানুষের কাছে প্রকল্পগুলির সুবিধা পৌঁছে দিতে সরকারের আরও সুসংগঠিত হওয়ার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলেও দাবি তাঁর। ধনকড়ের পরামর্শ, চা এবং পর্যটন শিল্পকে হাতিয়ার করে রাজ্যের উন্নয়নের কথা ভাবা প্রয়োজন।
গত সপ্তাহে একাধিকবার গরুপাচার এবং কয়লা কাণ্ডে গ্রেপ্তারির প্রসঙ্গে টুইট করেন রাজ্যপাল। দু’জন অভিযুক্তকে আড়াল করা এবং তদন্তে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছেন বলে ধনকড়ের বিরুদ্ধে ওঠে অভিযোগ। সাংবাদিক বৈঠকে সে বিষয়টিও আরও একবার তুলে ধরেন তিনি। তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে কাটমানি নেওয়ার অভিযোগেও সুর চড়ান রাজ্যপাল। নবান্ন-রাজভবনের মধ্যে টুইট-পালটা টুইট এবং পত্রবোমা আদানপ্রদান লেগেই থাকে। তারই মাঝে রাজ্যপালের এই সাংবাদিক বৈঠক দু’পক্ষের সম্পর্কের মধ্যে তিক্ততা এক ধাক্কায় আরও কয়েকগুণ বৃদ্ধি করবে, তা বলাই যায়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.