সৌরভ মাজি, বর্ধমান: রাজ্যপালের নির্দেশই সার। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে রাজ্যপাল আর শিক্ষা দপ্তরের সূক্ষ্ণ লড়াইয়ে শেষ হাসি হাসল রাজ্যের উচ্চশিক্ষা দপ্তরই। জগদীপ ধনকড়ের নির্দেশ উপেক্ষা করে পছন্দমতো ব্যক্তিকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য পদে নিয়োগ করল পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের দপ্তর। আজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে নিজের দায়িত্ব বুঝে নিলেন অধ্যাপক আশিস পাণিগ্রাহি। তবে সাম্প্রতিক বিতর্ক এড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যা মেটানো এবং মানোন্নয়নই তাঁর মূল লক্ষ্য বলে জানিয়েছেন নতুন সহ-উপাচার্য।
রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে সহ-উপাচার্য নিয়োগের নিয়ম খানিকটা এরকম – উচ্চশিক্ষা দপ্তরের তরফে তিনজনের নাম প্রস্তাব করে পাঠানো হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য তথা রাজ্যপালের কাছে। তিনি একজনকে নির্বাচিত করে সিলমোহর দেন। তারপর উচ্চশিক্ষা দপ্তর ওই ব্যক্তিকে নিয়োগপত্র পাঠিয়ে কাজে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দেয়। নিয়োগপত্রে উল্লেখ থাকে, আচার্য মনোনীত ব্যক্তি তিনি।
তবে এবার বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রো ভিসি নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রায় নজিরবিহীনভাবেই দু, একটি ঘটনা ঘটেছে। প্রথমত, শিক্ষা দপ্তরের প্রস্তাব অবহেলা করে আচার্য জগদীপ ধনকড় সোমবার বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (প্রশাসনিক এবং শিক্ষা) পদে অধ্যাপক গৌতম চন্দ্রকে নিয়োগ করেছেন। অথচ উচ্চশিক্ষা দপ্তর সূত্রে খবর, এই নামের সুপারিশই করা হয়নি তাঁর কাছে। শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় তাই রাজ্যপালের এই নিয়োগের পরিপ্রেক্ষিতে কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়ে জানিয়েছিলেন, “রাজ্যপাল বিজেপির প্রতিনিধিকে নিয়োগ করেছেন। এই সিদ্ধান্ত কোনও মতেই মানব না।” ঘটনাচক্রে হলও তাই। অধ্যাপক গৌতম চন্দ্রের নিয়োগ উপেক্ষা করে অধ্যাপক আশিস পাণিগ্রাহিকে দায়িত্ব দিল উচ্চশিক্ষা দপ্তর। এর আগে তিনি কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান (Head of the Department) পদে ছিলেন।
আরও একটি দিক থেকে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য নিয়োগের বিষয়টি নজিরবিহীন। উচ্চশিক্ষা দপ্তরের পক্ষ থেকে অধ্যাপক আশিস পাণিগ্রাহির নিয়োগপত্রে চিরাচরিতভাবে উল্লেখ নেই যে, তিনি আচার্য দ্বারাও মনোনীত। অর্থাৎ উচ্চশিক্ষা দপ্তর প্রায় এককভাবেই তাঁকে ওই পদে বসিয়েছেন। তবে নতুন সহ-উপাচার্য এসব বিতর্ক নিয়ে মুখ খুলতে চাননি স্বাভাবিকভাবেই।
এদিকে, রাজ্যপাল যাঁকে প্রো-ভিসি পদে নিয়োগ করতে নির্দেশিকা জারি করেন সেই গৌতম চন্দ্র বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়েরই প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক। ৩০ বছর ধরে অধ্যাপনা ও গবেষণায় যুক্ত। এই নিয়োগ নিয়ে সরাসরি বিতর্ক উসকে দিয়েছেন। তিনি বলেন, “রাজ্যপালের নির্দেশ দেখেছি। তবে এখনও নিয়োগপত্র পাইনি। রাজ্যপাল নিয়োগপত্র পাঠালে অবশ্যই পদে যোগ দেব।” তাঁর আরও বক্তব্য, “আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র মোস্ট সায়েন্স ফ্যাকাল্টি। আমার বায়োডেটা বিশ্ববিদ্যায়ের ওয়েবসাইটেও দেওয়া হয়েছে। আমি বলব, পরীক্ষা প্রার্থনীয়।
নতুন প্রো-ভিসি আশিসবাবু এসব কিছু উপেক্ষা করেই জানিয়েছেন, এমনিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক সমস্যা আছে। সেসব মিটিয়ে দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম আগের জায়গায় ফিরিয়ে আনা এবং বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় অনলাইন ক্লাস ঠিকমতো হচ্ছে কি না, তা ভালভাবে দেখে-বুঝে নেওয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজেই তিনি মনোযোগ দেবেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.