রাজা দাস, বালুরঘাট: মাঠই ছিল ধ্যানজ্ঞান। একবার ছুটতে শুরু করলে লক্ষ্য না ছুঁয়ে থামতেন না। জাতীয় স্তরের প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েই ঘরে এনেছিলেন সোনার পদক (Gold Medal)। কিন্তু তা এখন নিতান্তই এক স্মারক বই কিছু নয়। মেডেলগুলো আর তেমন উজ্জ্বল লাগে না, আনন্দও দেয় না। কারণ, এসবে তো পেটের জ্বালা জুড়োয় না। দক্ষিণ দিনাজপুরের (South Dinajpur)গঙ্গারামপুরের ‘সোনার ছেলে’ এখন নিতান্তই নিরুপায়। অর্থাভাবে মাঠের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে হয়েছে। রোজকার জীবন চালাতে গিয়ে দৌড় গিয়েছে থেমে। গঙ্গারামপুরের রিংকু নস্কর এক পরিযায়ী শ্রমিক।
দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুর ব্লকের অশোকগ্রাম পঞ্চায়েতের পূর্ব বিষ্ণুপুরের বাসিন্দা বছর ছাব্বিশের রিংকু। ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলোয় পারদর্শী। বাবাকে হারিয়েছেন আগে। মা অন্যের জমিতে কাজ করেন। এক দাদা, বোন এবং মাকে নিয়ে সংসার। ২০০৯ সালে হরিয়ানায় ন্যাশনাল ইন্টার জোনাল জুনিয়র অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপ অনূর্ধ্ব-১৬ বিভাগে খেলেছেন রিংকু। সেখানে ১০০০ মিটার রিলে রেস ২ মিনিট ১.৪৯ সেকেন্ডে শেষ করে নতুন রেকর্ড গড়েছিলেন রাজবংশী সম্প্রদায়ের এই অ্যাথলিট। এর আগেপরেও জাতীয় স্তরের একাধিক প্রতিযোগিতায় সাফল্য মিলেছে তার।
কিন্তু সেসবই এখন স্মৃতি। ঘরের ভিতর ট্রাঙ্ক খুলতেই বেরিয়ে এল একগুচ্ছ জং-ধরা মেডেল আর স্যাঁতসেঁতে একগাদা শংসাপত্র (Ceritificates)। সবই জাতীয় স্তরের। রয়েছে চার-চারটি স্বর্ণপদক। সেগুলো হাতে ধরে আক্ষেপ রিংকুর বর্মণের, ‘‘সোনার মূল্য কে দেবে!’’ সেই ‘সোনার ছেলে’ই এখন আর্থিক অনটনে হয়ে গিয়েছেন পরিযায়ী শ্রমিক। পরিবারের সদস্যদের মুখে দু’বেলা দু’মুঠো ভাত জোটাতে আজ সব পদক ফেলে তাকে ছুটতে হচ্ছে ভিন রাজ্যে। পাশে কেউ দাঁড়াননি, কেউ খোঁজও নেননি বলে দাবি রিংকুর।
সাড়ে তিনশো টাকা দৈনিক মজুরিতে গুজরাটের (Gujarat) সুরাটে এম্ব্রয়ডারির কাজ করেন তিনি। খেলাধুলো ছাড়তে হয়েছে বেশ কয়েক বছর হল। জেলা ক্রীড়া সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, যেহেতু রিংকু শিলিগুড়ি (Siliguri) থেকে খেলাধুলো করত, তাই দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায় তার কোনও রেকর্ড ছিল না। তার দরুণ ওই খেলোয়াড়ের খবরও জেলা ক্রীড়া সংস্থার কাছে নেই। নইলে জেলা ক্রীড়া সংস্থা নিশ্চয় এমন একজন কৃতী খেলোয়াড়ের পাশে দাঁড়াত, এমনই মনে করেন রিংকু।
দেখুন ভিডিও:
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.