সংবাদ প্রতিদিন ব্যুরো: উত্তরবঙ্গের রাজনৈতিক পরিস্থিতির একটা বড় ফ্যাক্টর পৃথক গোর্খাল্যান্ডের (Gorkhaland)দাবি। দার্জিলিং পার্বত্য এলাকায় জনজাতিদের বহুদিনের দাবি, আলাদা গোর্খাল্যান্ড। অনেক আন্দোলনও হয়েছে দার্জিলিংয়ে। যদিও রাজ্য বা কেন্দ্র কোনও সরকারই তাদের সেসব দাবি মানেনি। উলটে ধীরে ধীরে উন্নয়ন অস্ত্রে পাহাড়বাসীর পৃথক হওয়ার মানসিকতা থেকে তাঁদের কাছে টানার চেষ্টা করেছে রাজ্যের তৃণমূল (TMC) সরকার। তা সত্ত্বেও যে কোনও নির্বাচনের আগে গোর্খাল্যান্ডকে ইস্যু করে রাজনীতি হয় বিস্তর। এবার শিলিগুড়িতে ভোটের প্রচারে এসে প্রধানমন্ত্রী মোদিও হাতিয়ার করেন সেই ইস্যুকেই। বলেন, ”গোর্খাদের সমস্যা নিয়ে বিজেপি সংবেদনশীল, বুঝতে পারে। সমাধান করার পথেও অনেকটাই এগোনো গিয়েছে।”
রাজ্যের তৃণমূল সরকারকে একাধিক বাক্যবাণে বিদ্ধ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। পাহাড়ের উন্নয়ন নিয়ে তিনি বঞ্চনার অভিযোগ তুলে বলেন, পাহাড়বাসীর কথা ভাবেনি তৃণমূল, কোনও কাজও করেনি। শুধু পাহাড়ে নিজেদের জমি দখলকেই পাখির চোখ করেছে। আর এবিষয়েই তাঁর বক্তব্য, ”গোর্খাদের সমস্যা আমরা বুঝি। তা নিয়ে সংবেদনশীল বিজেপি। সমস্যা অনেকটা সমাধানের পথে।” তাঁর এই মন্তব্য অনেকাংশে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। এই মন্তব্য আসলে কীসের ইঙ্গিত? সেই কাটাছেঁড়াও শুরু হয়েছে।
শেষবার পাহাড়ে নির্বাচনী প্রচারে এসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (PM Narendra Modi) বলে গিয়েছিলেন, ‘গোর্খাদের স্বপ্ন তাঁর স্বপ্ন’। দীর্ঘ সময় কেটে গেলেও গোর্খাদের সমস্যার কোনও সমাধান তিনি করেননি। অথচ ২০১০, ২০১৪ ও ২০১৯ – পরপর তিনবার লোকসভা নির্বাচনে পাহাড় থেকে জয় পায় বিজেপি। কিন্তু বিজেপির উপর আস্থা রাখা যে পাহাড়বাসীর কাছে মস্ত বড় ভুল, তা আরও একবার প্রমাণিত। কারণ এদিন যদি পাহাড় সমস্যার স্থায়ী সমাধান নিয়ে বার্তা দিতেন মোদি, তাহলেই পাহাড়বাসী খুশি হয়ে যেত। বরং তিনি যা বললেন, তাতে আরও ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।
মোদির এই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চার মুখপাত্র শক্তিপ্রসাদ শর্মা বলেন, “আগেরবার তাও স্বপ্ন বলেছিলেন, এবার তো কিছুই বললেন না উনি। সমাধানের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছে মানে কী? কী বোঝাতে চাইলেন প্রধানমন্ত্রী। এসব গল্প দিয়ে আর পাহাড়ের বাসিন্দাদের বোকা বানানো যাবে না। বিজেপি পাহাড় নিয়ে কিছু ভাবেই না। যারা শরিকদল তাদের এবার ভাবা উচিত।” অন্যদিকে, তৃণমূল নেতা তথা মেয়র গৌতম দেব বলেন, “নির্বাচন সামনে এসেছে আবার এসব বলা শুরু করেছে। এত বছরে কিছু করতে পারেনি আগামীতেও পারবে না।”
সিপিএম (CPM) নেতা অশোক ভট্টাচার্য বলেন, “উনি হলেন একটা মস্ত বড় ধোঁকাবাজ। পাহাড়ের মানুষকে ধোঁকা দিয়ে নির্বাচনের আগে আবার নতুন গল্প সেজেছেন। ওঁর কথা কেউ বিশ্বাস করে না।” আবার পাহাড়ের কংগ্রেস নেতা বিনয় তামাং বলেন, “সমস্যা সমাধানের কত কাছে পৌঁছেছে, তা আবার নির্বাচনের আগে জানা যাবে। কারণ এখন আর তিনি কিছুই বলবে না। তার এই সাজানো গল্প দিয়ে আর পাহাড়ে ভোট পেতে হবে না।” হামরো পার্টির তরফে অজয় এডওয়ার্ড বলেন, “স্থায়ী সমাধান মানে গোর্খাল্যান্ড। উনি এ বিষয়ে কোনও কথা না বলায় গোটা পাহাড় মর্মাহত। আমরা অনেক কিছু আশা করেছিলাম।” প্রসঙ্গত এদিন মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন জিএনএলএফ সুপ্রিমো মন ঘিসিং ও দার্জিলিংয়ের বিধায়ক নীরজ জিম্বা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.